অবস্থানে এক ধাপ উন্নতি করেছে বাংলাদেশ, তবে দুর্নীতি কমেনি —টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবস্থানে এক ধাপ উন্নতি হলেও দেশে দুর্নীতি কমেনি বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) বাংলাদেশ। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০১৯- চিত্র উঠে আসে।

বিশ্বের ১৮০টি দেশ অঞ্চলের ২০১৯ সালের দুর্নীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) দুর্নীতির ধারণা সূচক-২০১৯ প্রকাশ করেছে। গতকাল বেলা ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ তালিকার সর্বনিম্ন থেকে গণনা স্কোর অনুযায়ী ১৮০ দেশের মধ্যে ১৪তম অবস্থানে রয়েছে, যা সিপিআই ২০১৮ থেকে এগিয়েছে। সর্বোচ্চ থেকে গণনা অনুযায়ী বাংলাদেশ ১৪৬তম। এখানে গত বছরের তুলনায় তিন ধাপ উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। এশিয়া প্যাসিফিকের ৩১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বনিম্ন থেকে গণনা অনুযায়ী আফগানিস্তানের পর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। ২০১৯ সালের সূচকে বাংলাদেশের সঙ্গী হিসেবে ১৪তম অবস্থানে আরো রয়েছে অ্যাঙ্গোলা, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, ইরান, মোজাম্বিক নাইজেরিয়া।

এছাড়া ৮৭ স্কোর পেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে ডেনমার্ক নিউজিল্যান্ড। ৮৭ স্কোর পেয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড এবং তৃতীয় স্থানে ৮৫ স্কোর নিয়ে যৌথভাবে রয়েছে সিঙ্গাপুর, সুইডেন সুইজারল্যান্ড। স্কোর পেয়ে ২০১৯ সালে গতবারের মতো এবারো তালিকার সর্বনিম্নে অবস্থান করছে সোমালিয়া। ১২ স্কোর পেয়ে তালিকার নিম্নক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দক্ষিণ সুদান এবং ১৩ স্কোর পেয়ে তৃতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে সিরিয়া। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় ১৬ স্কোর পেয়ে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, এবারের বৈশ্বিক গড় স্কোর ৪৩ হলেও সূচকে অন্তর্ভুক্ত ১৮০টি দেশের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি দেশই ৫০-এর কম স্কোর পেয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি দেশের স্কোরের উন্নতি হলেও এবার স্কোর অপরিবর্তিত আছে ৫২টি দেশের এবং উদ্বেগজনকভাবে স্কোর কমেছে ৬৮টি দেশের। এবারের সিপিআই অনুযায়ী ৬৮ স্কোর এবং সর্বোচ্চ থেকে গণনা অনুযায়ী গতবারের মতোই ২৫তম অবস্থান নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ভুটান। এর পরের অবস্থানে ৪১ স্কোর নিয়ে গতবারের তুলনায় দুই ধাপ অবনতি হয়ে ৮০তম স্থানে রয়েছে ভারত। এর পরে শ্রীলংকা ৩৮ স্কোর পেলেও চার ধাপ পিছিয়ে ৯৩তম অবস্থানে রয়েছে। ৩২ স্কোর পেয়ে তিন ধাপ পিছিয়ে ১২০তম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান। অন্যদিকে ২০১৮-এর তুলনায় পয়েন্ট কম ২৯ স্কোর পেয়ে ছয় ধাপ পিছিয়ে ১৩০তম অবস্থানে নেমে গেছে মালদ্বীপ।

বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতির ক্রমানুসারে আমরা এক ধাপ উন্নতি করলেও আমাদের স্কোর বাড়েনি। আগের বছর স্কোর ছিল ২৬, এবারো তা- রয়ে গেছে। স্কোরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্য কোনো দেশ হয়তো বেশি খারাপ করেছে, তাই আমরা এক ধাপ এগিয়েছি। এতে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। গত বছর দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সময় মানুষের মনে একটি প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এটা কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে বা হবে, এটা নিয়ে জনমনে শঙ্কা রয়েই গেছে। দেশের মানুষ দুর্নীতির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর ভরসা করে, অথচ তাদের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে।

তিনি বলেন, ভালো স্কোর করার মতো আইনি কাঠামোগত সক্ষমতা বাংলাদেশের থাকলেও প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতার জন্যই স্কোর বাড়াতে পারছে না বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি সাধন করেছে। দুর্নীতি থাকার ফলে এর সুফল মানুষ ঠিকমতো পাচ্ছে না। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রকাশিত তথ্যের সঙ্গে দুর্নীতির ধারণা সূচকে ধারাবাহিকভাবে একই স্কোর বজায় থাকা সাংঘর্ষিক কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে, প্রবৃদ্ধি বাড়ছে ঠিকই কিন্তু প্রবৃদ্ধির ব্যবহার হচ্ছে কোথায়, কার ভোগে যাচ্ছে, সেটা সঠিকভাবে বণ্টন হচ্ছে কিনা, তা দেখতে হবে। দুর্নীতি না থাকলে আমাদের আরো উন্নতি হতো।

 

অনুষ্ঠানে টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) সুমাইয়া খায়ের, টিআইবির আউটরিচ কমিউনিকেশনের পরিচালক শেখ মঞ্জুর--আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন