৮২৩৮ কোম্পানির খেলাপি ঋণ প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের বিভিন্ন কোম্পানির কাছে ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৬ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) তথ্যের ভিত্তিতে খেলাপি ঋণের তালিকা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। জাতীয় সংসদে গতকাল হাজার ২৩৮টি খেলাপি প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করেন তিনি। সময়ে পরিশোধিত ঋণের পরিমাণ ২৫ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা।

তালিকার শীর্ষে থাকা প্রথম তিনটি প্রতিষ্ঠানই জনতা ব্যাংকের গ্রাহক ক্রিসেন্ট গ্রুপের। এর মধ্যে রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের কাছে পাওনার পরিমাণ হাজার ৭০৮ কোটি টাকার বেশি। ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্টসের খেলাপি ঋণ রয়েছে হাজার ২৬৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। তালিকার তৃতীয় অবস্থানে থাকা রূপালী কম্পোজিট লেদারওয়্যার লিমিটেডের কাছে ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা রয়েছে হাজার ২৩৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা। পাওনার বিপরীতে কোনো অর্থই পরিশোধ করেনি ক্রিসেন্ট গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠান।

বিদেশে রফতানির পাশাপাশি দেশেও চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসা রয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপের। চামড়ার ভুয়া রফতানি বিল তৈরি করে একদিকে সরকারের কাছ থেকে নগদ সহায়তা নিয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ, অন্যদিকে রফতানির অর্থও ফেরত আনেনি। অর্থ আত্মসাৎ জালিয়াতির অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে।

শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের অন্যগুলো হলো রাইজিং স্টিল লিমিটেড (৯৮৫ কোটি), মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স (প্রা.) লিমিটেড (৯৭৩ কোটি), এসএ অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড (৯৩৯ কোটি), সামান্নাজ সুপার অয়েল লিমিটেড (৮২৭ কোটি), কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম লিমিটেড (৮২৩ কোটি), অ্যালয় কোট লিমিটেড (৭০১ কোটি), গ্যালাক্সি সোয়েটার অ্যান্ড ইয়ার্ন ডায়িং (৬৬৫ কোটি), বিল্ডট্রেড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (৬৫৬ কোটি), বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (৫৭১ কোটি), কম্পিউটার সোর্স লিমিটেড (৫৬৮ কোটি), রুবাইয়া ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (৫৫৬ কোটি), বাংলালায়ন কমিউনিকেশনস লিমিটেড (৫১৮ কোটি), লেক্সকো লিমিটেড (৫১৪ কোটি), আলপ্পা কম্পোজিট টাওয়েলস লিমিটেড (৫১২ কোটি), সুপ্রভ রোটোর স্পিনিং লিমিটেড (৪৭৬ কোটি), বেল কনস্ট্রাকশন এসডিএন বিএইচডি লিমিটেড (৪৬৬ কোটি) চৌধুরী নিটওয়্যার লিমিটেড (৪৬২ কোটি)

অর্থমন্ত্রী জানান, তফসিলি ব্যাংকগুলোর দাখিল করা ঋণ শ্রেণীকরণ প্রভিশনিং সংক্রান্ত সিএল বিবরণী অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিতরণকৃত মোট ঋণের পরিমাণ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে শ্রেণীকৃত ঋণ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ১২ শতাংশ।

১০ বছরে সরকারের ঋণ ১১ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকা: সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংক থেকে মোট ১১ লাখ ৪২ হাজার ৯৬৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত বছরের জুন পর্যন্ত সরকার ঋণ নিয়েছে। সময়ে সরকারের পরিশোধিত ঋণের পরিমাণ লাখ ৯৮ হাজার ৪৫৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ সময়ে সরকার মোট লাখ ৪৪ হাজার ৫০৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা নিট ঋণ নিয়েছে। নিজাম উদ্দিন হাজারীর (ফেনী-) এক প্রশ্নের উত্তরে তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী।

বিএনপির হারুনুর রশীদের প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংক থেকে ৪৮ হাজার ৫৮৩ কোটি ১১ লাখ টাকা নিট ঋণ নিয়েছে।

ব্যাংকিং খাতে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে: মো. শাহে আলমের (বরিশাল-) এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। নগদ জমা সংরক্ষণ সহজ বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ সংরক্ষণের পরও ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। এরূপ তারল্যের পরিমাণ গত বছরের জানুয়ারির ৬৭ হাজার ৬০১ কোটি টাকা থেকে ৪৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়ে নভেম্বরে লাখ ৪৯২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন