নোয়াখালীতে সরকারি ধান ক্রয়ের তালিকায় মৃত ব্যক্তি

বণিক বার্তা প্রতিনিধি নোয়াখালী

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার আমান উল্যাহ্ ইউনিয়নের নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন নার্গিস আক্তার। প্রায় এক বছর আগে মারা গেছেন তিনি। অথচ চলতি আমন মৌসুমে সরকারি ধান ক্রয়ের তালিকায় বিক্রেতা হিসেবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে খাদ্য অধিদপ্তরের স্থানীয় কার্যালয়। একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে একই ইউনিয়নের নং ওয়ার্ডে। বেশ কিছুদিন আগে মারা যাওয়া মো. ইব্রাহিমের কাছ থেকে ধান কেনার পরিকল্পনা করেছে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়।

সরকারকে ধান সরবরাহকারী কৃষকের চূড়ান্ত তালিকায় দুই মৃত ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে। নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় আমান উল্যাহ্ ইউনিয়নের নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি (মেম্বার) আবুল বাশার এদের দুজনেরই মারা যাওয়ার খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

শুধু মৃত ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়া নয়, নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় আমন ধান সংগ্রহের তালিকা নিয়ে আরো অভিযোগ পাওয়া গেছে। তালিকায় একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির, এমনকি কৃষক নন, এমন ব্যক্তির নামও এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার চর আমান উল্যাহ ইউনিয়নের গোফরান উদ্দিন নামে এক কৃষক গতকাল স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর করা এক আবেদনে এসব অভিযোগ করেন।

আবেদনে তিনি বলেন, আমান উল্যাহ ইউনিয়নের , নম্বর ওয়ার্ডের আমন ধান সংগ্রহের তালিকায় মৃত ব্যক্তি, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি কৃষক নয় এমন ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে তালিকায় ধরনের ৫৩ ব্যক্তির নাম রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ খাদ্য বিভাগের যোগসাজশে ভুয়া কৃষকের তালিকা করা হয়েছে। তালিকায় প্রকৃত কৃষকের নাম না থাকায় তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন অভিযোগকারী কৃষক।

জানা গেছে, প্রকৃত প্রান্তিক কৃষকদের ধানের ন্যায্যমূল্য দিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্থানীয় কৃষি অফিস কৃষকদের একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে। উপজেলা সংগ্রহ কমিটি যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তালিকা চূড়ান্ত করে। যদি তালিকায় চাষীর সংখ্যা বেশি হয়, তাহলে লটারির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে যে তালিকা দেয়া হয়, সে তালিকা থেকে উপজেলা প্রশাসন লটারি করে চূড়ান্ত একটি তালিকা প্রণয়ন করে থাকে। পরে ওই তালিকা অনুযায়ী স্থানীয় খাদ্য অধিদপ্তর অফিসের তত্ত্বাবধানে কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হয়।

অভিযোগে উল্লিখিত তালিকাটির দায়দায়িত্ব স্থানীয় কৃষি অফিসকেই নিতে হবে বলে অভিমত দিয়েছেন সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম ইবনুল হাসান ইভেন। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা এরই মধ্যে লিখিত আকারে অভিযোগটি পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে ছয় লাখ টন ধান এবং চার লাখ টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে এবার ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা বেশি ধরা হয়েছে। গত পয়লা ডিসেম্বর শুরু হওয়া চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ হচ্ছে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। একই দিনে শেষ হচ্ছে ২০ নভেম্বর শুরু হওয়া ধান সংগ্রহ অভিযান।

অভিযানের অংশ হিসেবে সুবর্ণচর উপজেলায় এবার প্রায় আড়াই হাজার কৃষকের কাছ থেকে হাজার ৮০০ টন ধান সংগ্রহ করবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় কার্যালয়ের খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে গুদাম কর্তৃপক্ষ ২৪৯ টন ধান সংগ্রহ করেছে।

ধান সংগ্রহে অনিয়মের বিষয়ে চরবাটা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ উদ্দিন জানান, তারা উপজেলা প্রশাসন থেকে যে তালিকা পেয়েছেন, সে হিসেবে ধান সংগ্রহ করবেন। অভিযোগকৃত এলাকায় ধান সংগ্রহ আপাতত স্থগিত রাখা হবে।

বিষয়ে সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মুহূর্তে তিনি অফিসের বাইরে রয়েছেন। শনিবার কর্মস্থলে ফিরে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তালিকায় মৃত ব্যক্তি বা কৃষক নয়, এমন লোকের নাম থাকলে তা সংশোধন করা হবে।

তবে নিজেদের সীমাবদ্ধতার বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তালিকা প্রস্তুতের জন্য খুবই অল্প সময় দেয়া হয়েছে। বাড়তি কাজের জন্য দেয়া হয়নি কোনো বরাদ্দ। তার ওপর কার্যালয়ে জনবল সংকট চরমে। সব মিলিয়ে খুব স্বল্প সময়ে তালিকা করতে গিয়ে হয়তো কিছুটা ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সেদিকে নজর দিয়ে নিজেদের দক্ষতা আরো বাড়ানো হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন