ইকোনমিস্টের গণতন্ত্র সূচকে ভারতের ১০ ধাপ অবনমন

বণিক বার্তা ডেস্ক

বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচকে ভারতের অবস্থান ১০ ধাপ নেমে চলে এসেছে ৫১তম স্থানে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রটিতে নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব হওয়ায় পতন হয়েছে বলে মনে করছে ইকোনমিস্ট। খবর হিন্দুস্তান টাইমস এনডিটিভি।

ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কর্তৃক প্রস্তুতকৃত গণতন্ত্র সূচকে ১০-এর মধ্যে ভারতের অর্জিত স্কোর দশমিক ৯০ পয়েন্ট। ২০০৬ সালে শুরু হওয়া সূচকে ভারতের এমন অবনমন আগে কখনো হয়নি। বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ), জম্মু কাশ্মীর পরিস্থিতি এবং বিতর্কিত জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইকোনমিস্ট।

২০১৭ ২০১৮ সালে গণতন্ত্র সূচকে ভারতের স্কোর ছিল দশমিক ২৩ পয়েন্ট, যা ২০১৬ সালের স্কোর দশমিক ৮১ পয়েন্ট থেকে কম। দেশটি সূচকে সর্বোচ্চ দশমিক ৯১ পয়েন্ট স্কোর অর্জন করেছিল ২০১৪ সালে। এশিয়া অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলে সূচকটিতে পূর্ব তিমুর, মালয়েশিয়া তাইওয়ান থেকে পিছিয়ে ভারতের অবস্থান অষ্টম।

সূচকে বলা হচ্ছে, এশিয়ার গণতন্ত্রের জন্য ২০১৯ ছিল সবচেয়ে উত্তাল বছর। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হয়েছে থাইল্যান্ডের সূচকে, দেশটির স্কোর দশমিক ৬৯ পয়েন্ট থেকে বেড়ে দশমিক ৩২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এতে গণতন্ত্র সূচকে দেশটি এগিয়েছে ৩৮ ধাপ। অন্যদিকে সিঙ্গাপুরে ফেইক নিউজ আইন প্রবর্তনের ফলে দেশটির অবস্থানে পতন হয়েছে। অন্যদিকে সূচকটিতে শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। দেশটির স্কোর দশমিক ৮৭ পয়েন্ট। নরওয়ের পর শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য দেশগুলো হচ্ছে আইসল্যান্ড, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড ফিনল্যান্ড।

ইকোনমিস্ট বলছে, পাঁচটি প্রভাবকের ভিত্তিতে গণতন্ত্র সূচক পরিমাপ করা হয়। প্রভাবকগুলো হলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বহুত্ববাদ, সরকারের কার্যকারিতা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি নাগরিক স্বাধীনতা।

গণতন্ত্র সূচকে ভারতের অবস্থানের অবনমনের পেছনে যে বিষয়গুলো ভূমিকা রেখেছে সেগুলো হচ্ছে জম্মু কাশ্মীরকে কেন্দ্র সরকারের অধীনে নেয়া, আসামে বিতর্কিত এনআরসি কার্যকর করা এবং সর্বশেষ সিএএ পাস কার্যকর করা। এগুলোকে ভারতেরগণতান্ত্রিক পশ্চাদগমনহিসেবে অভিহিত করেছে ইকোনমিস্ট।

ভারত নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণে ইকোনমিস্ট বলছে, জম্মু-কাশ্মীরে তিন সাবেক মুখ্যমন্ত্রীসহ প্রধান সব বিরোধী রাজনীতিবিদকে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে আটক বা গৃহবন্দি করে রেখেছে। একই সঙ্গে সেনা উপস্থিতি বৃদ্ধিসহ ১০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে সেখানে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া সিএএর দিকে ইঙ্গিত করে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, নতুন নাগরিকত্ব আইন বৃহত্সংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ক্ষুব্ধ করেছে। সৃষ্টি করেছে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা। এতে দেশটির প্রধান শহরগুলোয় বড় ধরনের বিক্ষোভ দানা বেঁধেছে। যদিও সরকার দাবি করছে, প্রতিবেশী তিনটি দেশ থেকে নিপীড়নের শিকার সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় সিএএ কার্যকর করা হয়। তবে সমালোচকরা বলছেন, এনআরসির সঙ্গে সংগতি রেখে মুসলিমদের লক্ষ্য করেই সিএএ গ্রহণ করে দেশটির সরকার।

এদিকে সার্বিকভাবে বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে থাকায় বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচক দশমিক ৪৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা সূচক প্রচলনের পর সর্বনিম্ন। গণতন্ত্র সূচকে সর্বনিম্নে থাকা দেশটি হচ্ছে উত্তর কোরিয়া, দেশটির স্কোর মাত্র দশমিক শূন্য ৮। চীনের স্কোরেও পতন হয়ে দশমিক ২৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এতে র্যাংকিংয়ে চীনের অবস্থান ১৫৩তম। দশমিক ২৫ পয়েন্ট নিয়ে র্যাংকিংয়ে পাকিস্তানের অবস্থান ১০৮তম।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন