খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজার

সরবরাহ সংকটে টানা বাড়ছে আদার দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রতি বছরের সময়ে বাজারে নতুন মৌসুমের আদা ওঠে। ফলে বছরের সময়টা দেশে উৎপাদিত আদায় বাজার সয়লাব থাকে। তবে ভোগ্যপণ্যের বাজারে এবার মিলেছে বিপরীত চিত্র। দেশে উৎপাদিত নতুন মৌসুমের আদার সরবরাহ খুব একটা নেই বললেই চলে। চাহিদা মেটাতে বাড়াতে হচ্ছে আমদানি। সরবরাহ সংকটে কয়েক মাস ধরে মসলা পণ্যটির বাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় রয়েছে।

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গত চার-পাঁচ মাস ধরে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানিনির্ভরতা বেড়ে যাওয়ার কারণে বাজারে পণ্যটির সাময়িক সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে দামও বেড়েছে।

গতকাল খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজার ঘুরে, চীন থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি আদা মানভেদে ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। গত কয়েক মাস ধরে পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ১২০-১৫০ টাকায় ওঠানামা করেছে। ভারতের কেরালা রাজ্য থেকে আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১২০-১৪০ টাকায়। এদিকে সরবরাহ কম থাকলেও অপেক্ষাকৃত কম দামে বিক্রি হচ্ছে দেশে উৎপাদিত আদা। খাতুনগঞ্জে বর্তমানে দেশে উৎপাদিত আদা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৯০-১০০ টাকায়।

খাতুনগঞ্জের মসলা ব্যবসায়ীরা জানান, গত পাঁচ-ছয় মাস ধরে বাজারে আদার দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। সময় দেশে উৎপাদিত আদার সরবরাহ নেই বললেই চলে। ফলে চাহিদা মেটাতে ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে মসলাপণ্যটির আমদানি ক্রমেই বাড়িয়ে যাচ্ছেন। বাজার সরবরাহে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় পণ্যটির দাম কমছে না। কখনো আন্তর্জাতিক বাজারে আদার বুকিং দর বৃদ্ধি, আবার কখনো আমদানিকারকদের কারসাজিতে অস্থির রয়েছে পণ্যটির দাম।

খাতুনগঞ্জের মসলা ব্যবসায়ী মেসার্স রাউজান ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী সাইদুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, এখন দেশে উৎপাদিত আদার ভরা মৌসুম চলছে। প্রতি বছর সময়ে পাহাড়ি অঞ্চল থেকে প্রচুর আদা এখানকার পাইকারি বাজারে আসে। ফলে পাইকারি বাজারে সব ধরনের আদা কেজিপ্রতি ৪০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। কিন্তু এবারের মৌসুমে বাজারের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এবার বাজারে মসলাপণ্যটির সরবরাহ উল্লেখযোগ্য কমেছে। ফলে ভরা মৌসুমেও পণ্যটির দাম না কমে বরং ক্রমেই বাড়তে শুরু করেছে।

মসলাপণ্য আমদানিকারক মেসার্স মক্কা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী জুনায়েদুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, গত বছরের মাঝামাঝিতে আন্তর্জাতিক বাজারে আদার দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ওই সময় পণ্যের বুকিং দর বেশি থাকায় আমদানি করা আদা বেশি দামে বিক্রি করতে হয়েছে। এরপর অক্টোবর থেকে দেশে উৎপাদিত আদার মৌসুম শুরু হলে সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়ে পণ্যটির দাম কমবে বলে মনে করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ওই সময় তারা পণ্যটির আমদানি কমিয়ে দেন। কিন্তু দেশের বিভিন্ন মোকাম থেকে পণ্যটির পর্যাপ্ত সরবরাহ না হওয়ায় বাজারে সংকট তৈরি হয়। এতে সরবরাহ ঘাটতিতে পণ্যটির দাম আরো বাড়তে শুরু করেছে।

খাতুনগঞ্জের কাঁচা পণ্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিচ বণিক বার্তাকে বলেন, এখানকার পাইকারি বাজারে দেশের বিভিন্ন মোকাম থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ ট্রাক আদা আসে। ভরা মৌসুমে পরিমাণ আরো বাড়ে। সময় দৈনিক ২৫-৩০ ট্রাকের বেশি আদা বাজারে প্রবেশ করে। বর্তমানে এর পরিমাণ কমে মাত্র পাঁচ-ছয় ট্রাকে নেমেছে। চাহিদার তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। ফলে সরবরাহ সংকটে ভরা মৌসুমেও পণ্যটির দাম বাড়ছে।

উল্লেখ্য, দেশে প্রতি বছর প্রায় ৬০ হাজার টন আদা উৎপাদন হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়িসহ পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চলে। কিন্তু এবার পণ্যটির উৎপাদন সীমিত হয়ে এসেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন