ঘ্রাণশক্তি না থাকা গাব্রিয়েলার অভিজ্ঞতা

বণিক বার্তা অনলাইন

আমাদের সবারই পছন্দের ঘ্রাণ থাকে। বিশেষ করে পারফিউম ও খাবারের বেলায়। এমনকি শুধু শরীরের ঘ্রাণই বহুদিন পর কোনো মানুষের স্মৃতি জাগিয়ে তুলতে পারে। অন্ধরা ঘ্রাণ শুঁকে মানুষ চিনতে পারেন। অনেকের ক্ষেত্রে একেকটি ঘ্রাণ একেকটি স্মৃতি বা মানুষের সঙ্গে যুক্ত থাকে। ঘ্রাণশক্তি মারাত্মক বিপদের হাত থেকেও রক্ষা করে। পাশ দিয়ে কেউ ধোঁয়া ওঠা মজাদার খাবার নিয়ে গেলে সবার আগে নাকে আসে ঘ্রাণ। এই ঘ্রাণ জিভে জল আনে!

কিন্তু ২২ বছরের গাব্রিয়েলা স্যান্ডার্সের জগতটা আলাদা। জন্ম থেকেই তার ঘ্রাণশক্তি নেই। তবে ঘ্রাণেন্দ্রীয়ের এই সমস্যা তার নাক পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকেনি। গাব্রিয়েলা মিষ্টি, ঝাল, নোনতা এসব স্বাদও পান না।

তবে গাব্রিয়েলা একা নন, বিশ্বের প্রায় ৫ শতাংশ মানুষের ঘ্রাণশক্তি নেই। সংক্রমণ বা ফ্লু, বার্ধক্য, নাকের পলিপস হওয়া বা মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণে কেউ ঘ্রাণশক্তি হারাতে পারেন। ইস্ট অ্যাংলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নতুন সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঘ্রাণের অনুভূতি না থাকা মানুষের জীবনে বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারিক এবং আবেগীয় পরিবর্তন আনে। শৈশবে অকারণে আতঙ্কিত হওয়া, অদ্ভূত অনুভূতি এবং নিজেকে ব্যর্থ মনে হওয়ার মতো অনুভূতি হতে পারে।

গাব্রিয়েলা ও তার এক বোন ছাড়া তার পরিবারের আর কারো এই সমস্যা নেই। এমনকি তার বংশেও কারো ঘ্রাণেন্দ্রীয়ের সমস্যা ছিল না। গাব্রিয়েলা বাল্যকালে স্কুলের একটি প্রজেক্টে অংশ নেয়ার সময় আবিষ্কার করেন তার ঘ্রাণশক্তি নেই। ওই প্রজেক্টটিতে গন্ধ নেয়ার ব্যাপার ছিল। সহপাঠীরা যখন একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন গন্ধ নিয়ে আলোচনা করছে এবং নানা উদাহরণ টানতে তখন গাব্রিয়েলার নিজেকে খুব বিচ্ছিন্ন মনে হচ্ছিল। সেদিনই তার কাছে পরিষ্কার হয়, তার ঘ্রাণেন্দ্রীয় অকেজো।

ঘ্রাণশক্তি না থাকার কারণে গাব্রিয়েলা আগুন ভয় পান। কেননা বাড়িতে আগুন লাগার একটি ঘটনায় তিনি পোড়া গন্ধ পাননি। সেদিন মা তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন।  সেই থেকেই আগুনের ভয় তার মনে জেঁকে বসেছে। 

ইস্ট অ্যাংলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কার্ল ফিলপট বলেন, ঘ্রাণশক্তি না থাকার কারণে গাব্রিয়েলা ধোঁয়া বা গ্যাসের গন্ধ পায় না। ফলে আগুনসহ অনেক কিছুতেই তার ভয়টা অন্যদের তুলনায় বেশি। আতঙ্কের মধ্যে তিনি বেড়ে উঠেছেন। তবে এখন অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করেন। 

কার্ল বলেন, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রেও বড় বাধা ঘ্রাণশক্তি না থাকা। অনেক সময় এর জন্য অস্বস্তিকর অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। কেননা নিজের শরীরের দুর্গন্ধও তারা টের পায় না। 

গাব্রিয়েলা অবশ্য এ সমস্যা একটা উপায় বের করেছেন। যখন তার শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হয় বাবা-মা তাকে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন। তৎক্ষণাত তিনি দুর্গন্ধ তাড়াতে ব্যবস্থা নেন। গাব্রিয়েলা একজন কনটেম্পরারি নৃত্যশিল্পী। ফলে তার শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ঝরে ও দুর্গন্ধ হয়। পারফিউমের ঘ্রাণ নিতে পারেন না বলে এসব তাকে আকৃষ্ট করে না। তবে তিনি দুর্গন্ধ তাড়াতে ডিওডরেন্ট ব্যবহার করেন।

গাব্রিয়েলা তার আশেপাশের মানুষকে তার সমস্যা জানাতে দ্বিধা করেন না। উল্টো সবাইকে বলে রাখেন, কেউ তার শরীর থেকে দুর্গন্ধ পেলে যেন সংকোচ না করে তাকে জানায়। ঘ্রাণশক্তি ফিরে পাওয়ার ইচ্ছের ব্যাপারে গাব্রিয়েলা বলেন, এটি আমার খুব প্রয়োজনীয়, এমন কিছু মনে করি না । কারণ আমি কখনও এর অনুপস্থিতি উপলব্ধিই করিনি। তবে আমি এই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে আগ্রহী। স্বাদ গ্রহণের মধ্যে অন্যরকম একটি অনুভূতি আছে।

ঘ্রাণশক্তি ফিরিয়ে আনতে বিশেষ কিছু প্রশিক্ষণ কাজে দেয় বলে দাবি করেন অনেকে। প্রশিক্ষণ হিসেবে তাদের গোলাপ, ইউক্যালিপটাস, লবঙ্গ ও লেবু শোঁকানো হয়। প্রতিটি উপাদান থেকে ২০ সেকেন্ড করে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা দু’বার ঘ্রাণ নিতে দেয়া হয়। এই প্রশিক্ষণ নিয়ে আক্রান্ত প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ উপকৃত হন বলে দাবি করা হয়। অবশ্য প্রশিক্ষণ না নিয়েও ২২ শতাংশ মানুষ আপনাআপনিই ঘ্রাণশক্তি ফিরে পান।

বিবিসি অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন