রাজধানীর ফুটপাতে ছিন্নমূল শিশুদের আলো দিচ্ছে এফএনএফ স্কুল

বণিক বার্তা অনলাইন

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কাছেই বীর উত্তম সিআর দত্ত রোড ঘেঁষে পান্থকুঞ্জ পার্ক। পার্কের সংস্কার কাজ চলছে, তাই টিনঘেরা দেয়ালের পাশে ফুটপাতেটি পথচারীরা তেমন ব্যবহার করছেন না। এই ফুটপাতেই স্কুলড্রেস পরিহিত গোটাবিশেক ছেলে-মেয়ে সুর করে কবিতা পড়ছে। আর সামনে দুই যুবক তাদের পড়া দেখিয়ে দিচ্ছেন।

গত শনিবার এমন দৃশ্য দেখে এগিয়ে গিয়ে এক যুবককে জিজ্ঞেস করে জানা গেল এটি একটি স্কুল! স্কুলের নাম ফিউচার নেশন ফাউন্ডেশন বা এফএনএফ স্ট্রিট স্কুল। যারা পড়তে আসে তারা সবাই ছিন্নমূল শিশু। পেটের দায়ে সারাদিন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে তারা। এরপর সোজা চলে আসে এফএনএফ স্কুলে। স্কুল চলে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। আলাদা কোনো আলোর ব্যবস্থা নেই। সড়কবাতির আলোতেই দিব্যি পড়াশোনা চলছে।

কয়েকটি শিশুর সঙ্গে কথা হয়। এরা সুন্দর করে ইংরেজীতেও কথা বলতে পারে! কেউ হতে চায় চিকিৎসক, কেউ পুলিশ। পুলিশ কেন? এ প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেল এ স্কুলের উদ্যোক্তার খোঁজ করতেই। স্কুলটির উদোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা জাহিদুর রহমান সকাল। তিনি পুলিশে চাকরি করেন। নিয়মিত ডিউটি শেষে বাচ্চাদের পড়াতে আসেন। সঙ্গে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবকও রয়েছেন। সপ্তাহের সাত দিনই পড়াশোনা চলে এ স্কুলে।

সম্প্রতি এটি নৈশ বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে এ স্কুলের শিশুরা এখন থেকে সরাসরি এফএনএফ স্কুলের নামে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। ফুটপাত হলেও এসব শিশু যেন স্কুলের অনুভূতি পায়, অন্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে নিজেদের আলাদা মনে না করে, সে জন্য উদ্যোক্তারা সবাইকে স্কুলড্রেস দিয়েছেন। বই-খাতাসহ শিক্ষা উপকরণও বিনামূল্যে দেয়া হয়।

তবে মাথার উপর কোনো ছাউনি না থাকায় বর্ষকালে স্কুল চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাছাড়া রাস্তার কোলাহল, গাড়ির শব্দ, হর্ন আর ধুলাবালিতেও শিশুদের মনোযোগ বিঘ্নিত হয়।  এতো প্রতিবন্ধকতার মধ্যে বেশিরভাগ শিশুই নিয়মিত স্কুলে আসে বলে জানান এর উদ্যোক্তারা। উদ্যোক্তাদের আশা, তাদের দৃষ্টান্তে অনুপ্রাণিত হয়ে এ ধরনের উদ্যোগে আরো বেশি মানুষ এগিয়ে আসবে।

ভিডিওতে দেখুন:

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন