মরিনহোর ব্যয় ১৪ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা!

ইউরোপের অন্যতম সেরা সফল কোচ হোসে মরিনহো ক্যারিয়ারজুড়ে ব্যয় করেছেন ১৩০ কোটি পাউন্ড (প্রায় ১৪ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা), যা দ্বিতীয় স্থানধারী কোচের চেয়ে ৩০ কোটি পাউন্ডেরও বেশি!

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পোর্তো, চেলসি, ইন্টার মিলান, রিয়াল মাদ্রিদ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ ছিলেন মরিনহো। নতুন দায়িত্ব নিয়ে এখন টটেনহামে। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে দলবদলের বাজারে খরচ করতে কখনো ভয় পাননি তিনি। নতুন এক সমীক্ষা বলছে, অন্যদের চেয়ে অনেক অনেক বেশি ব্যয় করেছেন তিনি।

খরুচে কোচদের তালিকায় মরিনহোর পরই কার্লো আনচেলত্তি। ইতালিয়ান কোচ এসি মিলান, চেলসি, প্যারিস সেন্ট জার্মেই, রিয়াল মাদ্রিদ, বায়ার্ন মিউনিখ ন্যাপোলির ডাগআউট সামলে এখন দায়িত্ব পালন করছেন ইংলিশ ক্লাব এভারটনের। তিনি ক্যারিয়ারজুড়ে ঠিক ১০০ কোটি পাউন্ড (প্রায় ১১ হাজার ২৯ কোটি টাকা) খরচ করেছেন, যা মরিনহোর চেয়ে ৩০ কোটি কম।

ওহ মাই গোলপরিচালিত সমীক্ষা ইউরোপভিত্তিক কোচদের খরচের তালিকা তুলে ধরেছে। এটা আপনাকে বিস্মিতই করবে। তবে তাদের তালিকায় মরিনহোর ধারেকাছে নেই কেউ, যিনি ২০১৬ সালে ম্যানইউর কোচ থাকাকালে তখনকার বিশ্বরেকর্ড ফি (৮৯ দশমিক মিলিয়ন পাউন্ড) দিয়ে জুভেন্টাস থেকে কিনে নেন পল পগবাকে।

যে ক্লাবেই ছিলেন না কেন, মরিনহো সব সময়ই ম্যানেজমেন্টের কাছে বিনিয়োগের জন্য বেশি বেশি অর্থ চেয়েছেন। ম্যানেজমেন্টও তার ওপর আস্থা রেখে অঢেল পয়সা বিনিয়োগ করেছে। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে থাকাকালে তিনি ৭৫ মিলিয়ন পাউন্ডে কিনেছেন রোমেলু লুকাকুকে ৫৩ মিলিয়ন পাউন্ডে কিনেছেন ফ্রেডকে।

চেলসিতে দুই অধ্যায় কোচের দায়িত্ব পালনের সময় মরিনহো কিনেছেন আন্দ্রেই শেভচেঙ্কো (৪০ মিলিয়ন পাউন্ড), দিদিয়ের দ্রগবা (৩৫ মিলিয়ন পাউন্ড), দিয়েগো কস্তার (৩৪ মিলিয়ন পাউন্ড) মতো ব্যয়বহুল খেলোয়াড়কে। রিয়ালের কোচ হয়ে তিনি ৩১ দশমিক মিলিয়ন পাউন্ডে টটেনহামের কাছ থেকে কিনেছেন ক্রোয়াট মিডফিল্ডার লুকা মডরিচকে, যিনি এখনো রিয়ালের মধ্যমাঠের অন্যতম শক্তি। এছাড়া অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াকে বেনফিকা থেকে কিনেছিলেন ৩০ মিলিয়ন পাউন্ডে।

মজার বিষয়, খরচের জন্য খ্যাতিমান মরিনহো বর্তমানে যে ক্লাবের দায়িত্ব নিয়েছেন তারা তো রীতিমতোকিপ্টেহিসেবে পরিচিত! টটেনহাম চেয়ারম্যান ড্যানিয়েল লেভি একেবারে বিপদে না পড়লে খরচ করতে চান না। তাই এখানে মরিনহো কীভাবে মানিয়ে নেন, সেটাই দেখার বিষয়।

কোচিং ক্যারিয়ারের সোনালি সময় পার করে আসা আনচেলত্তিও এখন মাঝারি মানের ক্লাব এভারটনে ইচ্ছেমতো খরচের সুযোগ হয়তো পাবেন না। রিয়ালের কোচ থাকাকালেই ২০১৩ সালে তিনি তখনকার বিশ্বরেকর্ড (৮৫. মিলিয়ন পাউন্ড) ফি দিয়ে টটেনহাম থেকে কিনেছিলেন গ্যারেথ বেলকে। ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে তিনি কোচ থাকার সময়ই কলম্বিয়ান তারকা হামেশ রদ্রিগেজকে ৬৭ মিলিয়ন পাউন্ডে কিনেছিল রিয়াল। চেলসির কোচ থাকাকালে তিনি দলবদলে প্রিমিয়ার লিগের রেকর্ড গড়েন লিভারপুল থেকে ফার্নান্দো তোরেসকে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডে কিনে।

খরচে সামান্য ব্যবধানে আনচেলত্তির চেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটির কোচ গার্দিওলা, যিনি এর আগে বার্সেলোনা বায়ার্ন মিউনিখের মতো বড় ক্লাব সামলেছেন। গার্দিওলার সবচেয়ে বড় ক্রয়টাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত। বার্সার কোচ থাকাকালে ২০০৯ সালে তিনি ৫৭ মিলিয়ন পাউন্ডে ইন্টার মিলান থেকে কিনেছিলেন সুইডিশ স্ট্রাইকার জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচকে। একই সময় বার্সা ছেড়ে ইন্টারে নাম লেখান স্যামুয়েল এতো। যদিও গার্দিওলার সিদ্ধান্ত ব্যর্থ প্রমাণিত হয়। এক মৌসুম শেষেই বার্সেলোনা ছেড়ে যান ইব্রাহিমোভিচ।

গার্দিওলা খরচে সবচেয়ে সাহসিকতার পরিচয় দেন ম্যানসিটিতে এসে। আবুধাবি গ্রুপের মালিকানাধীন ক্লাবটিতে তিনি ৬০ মিলিয়ন পাউন্ডে রিয়াদ মাহরেজ, ৫৮ মিলিয়ন পাউন্ডে আইমেরিক লাপোর্তে, ৫২ মিলিয়ন পাউন্ডে বেঞ্জামিন মেন্দি ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডে জন স্টোনসকে কিনেছেন। অবশ্য এখানে ব্যয় করে সফলতাও পেয়েছেন, তার অধীনে সিটিজেনরা টানা দুবার লিগ শিরোপা জিতেছে, এছাড়া কাপ সাফল্যও পেয়েছেন তিনি।

৯২ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড খরচ করে তালিকায় চতুর্থ স্থানে ম্যানসিটি রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক কোচ ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনি। ২০০৯ সালে তার সময়ই ম্যানইউ থেকে ৮০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিশ্বরেকর্ডে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে কিনে নেয় রিয়াল। বলাবাহুল্য, রিয়ালের জার্সিতে অপ্রতিরোধ্য এক খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হন রোনালদো, যিনি একের পর এক রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। পর্তুগিজ সুপারস্টার বর্তমানে খেলছেন জুভেন্টাসে।

রোনালদোকে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডে জুভেন্টাসে নেয়ার নেপথ্য কারিগর ম্যাসিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রি। কোচ হিসেবে ৮৪ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড খরচ করে তিনি তালিকার পাঁচ নম্বরে অবস্থান করছেন।

এছাড়া আর্সেনালের সাবেক কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গার ৭৬ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড খরচ করে ছয় নম্বরে; ম্যানসিটি, ইন্টার মিলানের সাবেক কোচ রবার্তো মানচিনি ৬৮ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড খরচ করে সাত নম্বরে; লেস্টার সিটি, চেলসি, রোমা মোনাকোর সাবেক কোচ ক্লদিও রানিয়েরি ৬৮ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড খরচ করে আট নম্বরে; লিভারপুল, রিয়াল মাদ্রিদ, চেলসি, নিউক্যাসলের সাবেক কোচ রাফায়েল বেনিতেজ ৫৭ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড খরচ করে নয় নম্বরে এবং পিএসজি আর্সেনালের সাবেক কোচ উনাই এমেরি ৫৭ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড খরচ করে ১০ নম্বরে অবস্থান করছেন।

বলাবাহুল্য, চেলসিতে রোমান আব্রামোভিচের পাউন্ড খরচের সৌভাগ্য হয়েছে চার কোচের (মরিনহো, আনচেলত্তি, রানিয়েরি বেনিতেজ) এছাড়া তিনজন সিটির কোচ হিসেবে বিত্তবৈভবের মধ্যে ছিলেন (গার্দিওলা, পেলেগ্রিনি মানচিনি) স্পোর্টসমেইল

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন