গবেষণা প্রতিবেদন

আশঙ্কাজনক মাত্রায় বাড়ছে এইচএফসি-২৩ গ্রিনহাউজ গ্যাস

বণিক বার্তা ডেস্ক

২০১৭ সালে চীন ভারত জানিয়েছিল, দেশ দুটি গ্রিনহাউজ গ্যাস হাইড্রোফ্লোরোকার্বনের (এইচএফসি-২৩) নিঃসরণ প্রায় শূন্যের কোটায় নিয়ে এসেছে। এর পরই আশা করা হয়েছিল, বায়ুমণ্ডলের জন্য ক্ষতিকর গ্যাসটির নিঃসরণ খুব দ্রুত কমে আসবে। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্যাসটির নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। খবর গার্ডিয়ান।

ন্যাচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ২০১৮ সালে ফ্রিজ, ইনহেলার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র থেকে নির্গত এইচএফসি-২৩ গ্যাসের পরিমাণ কমেনি, বরং রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে।

অ্যাডভান্সড গ্লোবাল এটমসফেরিক গ্যাসেস এক্সপেরিমেন্টের সদস্য এবং গবেষণা প্রতিবেদনটির সহলেখক ম্যাট রিগবি বলেন, ভারত চীনের প্রতিবেদনের পর একাডেমিকরা আশা করেছিলেন কার্বন নিঃসরণে বড় ধরনের পতন ঘটবে। কিন্তু কয়েক দশক ধরেই শক্তিশালী গ্রিনহাউজ গ্যাস দ্রুত হারে বেড়েছে। প্রতিবেদনগুলোর মাধ্যমে এটি স্পষ্ট, আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ বৃদ্ধি ঠেকানো বর্তমানে অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিঃসরণ বন্ধ করা গেলে জলবায়ুর জন্য তা বড় ধরনের সুফল বয়ে আনবে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধির বিষয়টি একটি ধাঁধা হিসেবে দেখা দিয়েছে এবং মন্ট্রিল চুক্তির বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছে। বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর সুরক্ষায় ওই আন্তর্জাতিক চুক্তিটি প্রণয়ন করা হয়েছিল। তারা আরো বলেন, কয়েক বছর ধরেই বৈশ্বিক উষ্ণতা বিপজ্জনক মাত্রার নিচে রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু এইচএফসি-২৩-এর মতো শক্তিশালী গ্রিনহাউজ গ্যাসের কারণে পদক্ষেপগুলো ঠিক সফলতার মুখ দেখছে না। প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক কিরেন স্ট্যানলি বলেন, যদিও চীন ভারত চুক্তি মেনে চলতে এখনো বাধ্য নয় তবে তাদের দাবির সঙ্গে সংগতি রেখে নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

তিনি বলেন, আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, এইচএফসি-২৩ নিঃসরণ কমাতে দাবি অনুযায়ী সফল হয়নি চীন। এছাড়া বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া ভারত নিঃসরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সফল হয়েছে কিনা তা আমরা নিশ্চিত হতে পারব না।

১৯৮০-এর দশকে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের উপরিস্থিত ওজোন স্তরে অসংখ্য গর্তের বা ছিদ্রের পেছনে এইচএফসির ভূমিকার বিষয়টি ধরা পড়ে। অ্যারোসলের মতো বিভিন্ন উৎস থেকে নির্গত ক্ষতিকর এইচএফসি গ্যাস এতে ভূমিকা রেখেছিল বলে দাবি করা হয়। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে সুরক্ষা দিয়ে আসছে ওজোন স্তর। ওজোন স্তরে গর্তের সংখ্যা বাড়লে তা পৃথিবীর প্রাণিজগতের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা দেবে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।

গ্রিনহাউজ গ্যাস সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বেগের বিষয় হিসেবে দাঁড়িয়েছে এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বিপজ্জনক মাত্রা থেকে কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এক টন এইচএফসি গ্যাস নিঃসরণ ১২ হাজার টনেরও বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের সমান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি দাবি অনুযায়ী এইচএফসি-২৩ নিঃসরণ কমত, তাহলে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ওই পরিমাণ এইচএফসি নির্গমন কমত, যা স্পেনের বার্ষিক কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের সমান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন