বাতাসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

ভিত ঢালাইয়েই শেষ নির্মাণকাজের মেয়াদ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি নড়াইল

বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটির নির্মাণকাজের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। নির্মাণকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়ার জন্য আপাতত টিনশেড দিয়ে একটি ঘর তৈরি করে দেয়ার কথাও ছিল ঠিকাদারের। তবে সেটিও করে দেননি ঠিকাদার। আর নয় মাসে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও মাত্র ভিত ঢালাই শেষ করতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থীকে এখন খোলা আকাশের নিচে, গাছের ছায়ায় অথবা ছাউনির নিচে ক্লাস করতে হচ্ছে। এমন অবস্থা নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের ভদ্রডাঙ্গা গ্রামে অবস্থিত ২৭ নম্বর বাতাসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫০ সালে স্থানীয় সাত গ্রামের মানুষ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে। সর্বশেষ বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য একটি আধাপাকা টিনশেড ঘর ছিল। নতুন ভবন করতে সেটি গত বছর মে মাসে ভেঙে ফেলা হয়। তখন থেকে গাছতলায় খোলা ছাপড়ায় ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নতুন ভবনটি তৈরি করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এলজিইডিরচাহিদাভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পেরআওতায় নতুন ভবনটি তৈরি হচ্ছে। চারতলা ভিত্তির ভবনটি বর্তমানে হবে পাঁচ কক্ষের একতলা ভবন। এতে ব্যয় ধরা হয় ৬৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৭৬ টাকা। বরাদ্দের মধ্যে আপাতত ক্লাস নেয়ার জন্য একটি টিনশেড ঘর তৈরি করতে লাখ ১৬ হাজার টাকাও বরাদ্দ রাখা হয়। কার্যাদেশ দেয়া হয় গত বছরের এপ্রিল। ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ পায় নড়াইলের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএম আলমগীর কবির। আর কাজ শেষের মেয়াদ ছিল জানুয়ারি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটির মাত্র ভিত তৈরি শেষ হয়েছে। তবে যেটুকু কাজ হয়েছে, সেখানেও নিম্নমানের খোয়া রড ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। আপাতত ক্লাস নেয়ার জন্য টিনশেডের যে ঘর তৈরির কথা ছিল, সেটি নির্মাণ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।

উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তরে বিদ্যালয়টি অবস্থিত। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আরিফ মোল্লা ইমদাদুল শেখ নামের দুজন শ্রমিক গ্রেটবিম তৈরি করতে রড বাঁধছেন। আশপাশে ঘোরাঘুরি করছেন ঠিকাদারের ব্যবস্থাপক পলাশ মোল্লা।

নতুন ভবনের পাশেই একটি গাছতলায় চট বিছিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে। চারপাশ খোলা থাকায় ধুলাবালি উড়ে শিক্ষার্থীদের গায়ে লাগছে। এছাড়া ক্লাস নেয়ার জন্য বিদ্যালয়ের উদ্যোগে টিনশেডের একটি জরাজীর্ণ ছাউনি তৈরি করা হয়েছে, যার এক পাশে পাটকাঠি দিয়ে ঘেরা। অন্য তিন পাশ খালি রয়েছে। তবে এটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে রোদ অথবা বৃষ্টি হলে শিক্ষার্থীদের আশপাশের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করেন, মূল ঠিকাদার কাজটি বিক্রি করে দিয়েছেন লাহুড়িয়ার ঠিকাদার কামরুজ্জামান কমরের কাছে। ওই ঠিকাদারের স্বভাব কাজ নিয়ে ফেলে রাখা, তাই মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কাজের কিছুই হয়নি। গত ছয় মাস কাজ একদম বন্ধ ছিল। গত নভেম্বর থেকে দু-একজন শ্রমিক এসে টুকিটাকি কিছু করে। কাজে কোনো গতি নেই। এভাবে চললে কত বছর লাগবে তার ঠিক নেই।

প্রধান শিক্ষক বলেন, মূল বরাদ্দের মধ্যে একটি টিনশেড ঘর তৈরির কথা থাকলেও ঠিকাদার সেটি করেননি। বরাদ্দের ওই ঘরটি করে দিলে দুর্ভোগ কমে যেত। পুরনো টিনশেড ঘরের জরাজীর্ণ টিন খুলে তা দিয়ে ছাউনি দেয়া হয়েছে।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাব্বি, বাঁধন, রাখি, চন্দ্রাবতীসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, মাঝে মধ্যে ধুলাবালিতে তাদের চোখ-মুখ ভরে যায়, বাতাসে বই-খাতা উড়ে যায়।

বিষয়ে ঠিকাদারের ব্যবস্থাপক পলাশ মোল্লা জানান, কাজ শুরু করতে গত বছর মে মাসে ভিত ঢালাই দেয়ার জন্য মাটি খোঁড়া হয়। এর পরই বর্ষা মৌসুম শুরু হয়। বর্ষায় কাঁচা রাস্তা দিয়ে মালপত্র আনা সম্ভব হয়নি। তাই আর কাজ করা যায়নি। তবে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী অভিজিৎ মজুমদার বলেন, গত বর্ষায় কাজ করা যায়নি। এছাড়া কাজটি মূল ঠিকাদার বিক্রি করে দিয়েছেন অন্য ঠিকাদারের কাছে। এসব কারণে কাজ করতে দেরি হয়েছে। তবে আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে মূল কাঠামো হয়ে যাবে। এরপর ফিনিশিং করা হবে। আপাতত ক্লাস নেয়ার জন্য অর্থ বরাদ্দ হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ছাপড়াটি মডিফাই করতে হবে। অন্য কাজ নিম্নমানের হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন