সুনামগঞ্জ প্রাণিসম্পদ অফিসে জনবল সংকট

প্রয়োজনীয় সহায়তা না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারি

বণিক বার্তা প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ

হাওড় অধ্যুষিত জেলা সুনামগঞ্জে গবাদি পশুর খামার আছে পাঁচ শতাধিক। পশুর প্রজনন রোগবালাইসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে এসব খামার থেকে যোগাযোগ করা হয় প্রাণিসম্পদ অফিসে। তবে জনবল সংকটে খামারিদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারছে না দপ্তরটি। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিরা। এমনকি সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে গবাদি পশুর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলা উপজেলা উভয় পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ অফিসে জনবল সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সংকট নিরসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হলেও জনবল পাওয়া যায়নি।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র জানায়, হাওড় অঞ্চল হওয়ায় সুনামগঞ্জের মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। পরিবারের আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য কমবেশি সব পরিবার গবাদি পশু পালনে যুক্ত। এর বাইরে জেলায় বাণিজ্যিক খামারও আছে। জেলায় শুধু গরুর খামার রয়েছে ৫৩৬টি। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের তালিকাভুক্ত আছে ৩৫২টি খামার। এসব খামারে প্রধানত দুধ উৎপাদন করা হয়। জেলায় প্রতিদিন দুধ উৎপাদন হয় হাজার ৪০ লিটার। তবে গবাদি পশু পালন দুধ উৎপাদনে ভালো সম্ভাবনা থাকলেও জেলায় খামারি পর্যায়ে সহায়তা দেয়া যাচ্ছে না জনবল সংকটের কারণে।

সূত্র জানায়, জেলার ১১ উপজেলার মধ্যে সাতটিতে প্রাণিসম্পদ অফিসের লাইভস্টোক অফিসারের সাতটি পদই খালি। পাঁচটিতে নেই ভেটেরিনারি সার্জন। সদর, দোয়ারা, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, দিরাই, শাল্লা, তাহিরপুর দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় সরেজমিন সহকারী (কৃত্রিম প্রজনন) নেই। ১১ উপজেলায় ভিএফএ পদ আছে ৩২টি, যার অধিকাংশই খালি। অফিস সহকারীর পদের মধ্যে নয়টি উপজেলায় কেউ নেই।

খামারিরা জানান, গাভীর গর্ভধারণের সময় সরেজমিন সহকারীকে (কৃত্রিম প্রজনন) খুঁজলেও পাওয়া যায় না। তাকে খুঁজে আনতে আনতে সময় পেরিয়ে যায়। এতে গবাদি পশুর প্রজনন তথা দুধ উৎপাদন ব্যাহত হয়। গরুর অসুখ হলে চিকিৎসা দেয়ার কেউ থাকে না। ফলে গরু মারা যায়।

শহরের ধোপাখালী এলাকায় খামারের মালিক মো. মমিনুল হক বলেন, আমার নিজের খামারে এফএমডি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গরু মারা গেছে। চিকিৎসার জন্য কাউকে পাইনি।

ষোলঘর এলাকার খামারি সুজাতা রানী বলেন, যখনই যাই, তখনই শুনি প্রাণিসম্পদ অফিসে জনবল সংকট। কারণে সময়মতো গরুর চিকিৎসা পাওয়া যায় না বলে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

তাহিরপুর উপজেলার দুতমা গ্রামের খামারি এনামুল হক জানান, আমি দুই বছর ধরে খামার করছি। আজ পর্যন্ত প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে কোনো সহায়তা পাইনি। একই অভিযোগ সোহাগ দুগ্ধখামারের মালিক দেলোয়ার হোসেন দুলাল শান্তিবাগ এলাকার খামারি মো. সোহেল মিয়াসহ আরো অনেকের।

জেলা ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. নুরুল আলম বলেন, কয়েক বছর ধরে সুনামগঞ্জে বেশকিছু খামার গড়ে উঠেছে। খামারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পশুর রোগব্যাধি বাড়ছে। এজন্য প্রাণিসম্পদ অফিসকে আরো সক্রিয় করতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে গবাদি পশু লালন-পালন দুধ উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

খামারিদের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, আমাদের অফিসে লোকবল সংকট আছে। কারণে খামারিদের প্রয়োজনমতো সহায়তা দেয়া সম্ভব হয় না।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের উপপরিচালক ডা. মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন, সুনামগঞ্জে ৫৩৬টি গরুর খামার রয়েছে। খামার ছাড়াও পশুর রোগব্যাধি দেখাশোনায় প্রতি ইউনিয়নে একজন করে কৃত্রিম প্রজনন কর্মী আছেন। তবে পশু চিকিৎসক-ভেটেরিনারি সার্জনসহ বিভিন্ন পদে জনবল সংকট আছে। সংকট নিরসনের জন্য আমরা একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আশা করি, এবার কিছু জনবল পাওয়া যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন