রাজধানীর পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলার দায়ে ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় মো. মশিউর রহমান ও রফিকুল ইসলাম মিরাজকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রবিউল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন মুফতি মাঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান ও নুর ইসলাম।
২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি এ বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আটজন নিহত ও ২৩ জন আহত হন। হামলার ১৯ বছর পর রায় ঘোষণা করেন আদালত।
ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। দীর্ঘদিন পর হলেও সুন্দর একটি রায় আমরা পেয়েছি। আশা করি এ রায়ে নিহত ও আহতদের পরিবার সন্তুষ্ট হবে।
এদিকে বোমা হামলার মামলায় মুফতি আব্দুল হান্নান প্রধান আসামি ছিলেন। কিন্তু অন্য মামলায় ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাকে ওই বছরের ১৩ জুন অব্যাহতি দেন আদালত।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক হামলার কারণ সম্পর্কে বলেন, আসামিরা হরকাতুল জিহাদ আল ইসলাম বাংলাদেশের (হুজি) সদস্য। তাদের ধারণা, সিপিবির লোকেরা কাফের, বিধর্মী, নাস্তিক, ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী নয়, ইসলাম ধর্মের শত্রু ও আল্লাহ-খোদা মানে না। সে কারণে সিপিবিকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে আসামিরা এ বোমা হামলা ঘটিয়েছে। এছাড়া তত্কালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে উত্খাত ও বিব্রত করার জন্য এ বোমা হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে আদালত বলেন, অভিযোগ প্রমাণ হওয়া ১০ আসামির প্রত্যেকেই একাধিক হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার আসামি। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সিরিজ বোমা হামলার মাধ্যমে তারা নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগের নারায়ণগঞ্জ জেলার নেতা শামীম ওসমান এমপির অফিসে বোমা হামলা ও রমনা বটমূলের বোমা হামলা মামলারও তারা আসামি। এমনকি আসামিরা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলারও আসামি। আসামিদের প্রতিটি বোমা হামলায় অসংখ্য নিরীহ মানুষ মারা গেছে। মামলার আসামিদের মধ্যে আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ি হরকাতুল জিহাদের হেডকোয়ার্টার ছিল। তারা পল্টন ময়দানে সিপিবির মহাসমাবেশে বোমা হামলার মাধ্যমেও পাঁচজন নিরীহ ও নির্দোষ মানুষকে হত্যা করে। এ হামলায় সমাবেশের পাশের এলাকার আরো তিনজনকে হত্যা করা হয়।
বোমা হামলায় যারা নিহত হয়েছেন তারা হলেন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সিপিবি নেতা হিমাংশু মণ্ডল, খুলনার রূপসা উপজেলার সিপিবি নেতা ও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা আব্দুল মজিদ, ঢাকার ডেমরা থানার লতিফ বাওয়ানি জুট মিলের শ্রমিক নেতা আবুল হাসেম ও মাদারীপুরের মুক্তার হোসেন, খুলনার বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রদাস, ফুটপাতের হকার মোবারক হোসেন, বাদল ও সবুর। এ ঘটনায় সিপিবির তত্কালীন সভাপতি মনজুরুল আহসান বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন।