শতবর্ষী ফেনী সরকারি কলেজে শ্রেণীকক্ষ সংকট

ব্যাহত পাঠদান

নুর উল্লাহ কায়সার ফেনী

ফেনী, নোয়াখালী লক্ষ্মীপুর জেলার প্রাচীন বিদ্যাপীঠ ফেনী সরকারি কলেজ। প্রতি বছর অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু শিক্ষক শ্রেণীকক্ষ সংকটের কারণে পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।

১৯২২ সালে আগস্ট ১৪৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হওয়া কলেজে বর্তমানে প্রায় ২৩ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। বর্তমানে ১৫টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান), ১৫টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ১০টি বিষয়ে মাস্টার্স (প্রিলি) চালু রয়েছে। এছাড়া প্রাইভেট ডিগ্রি মাস্টার্স শেষ পর্বও রয়েছে কলেজে। শিক্ষককের ৭৩টি পদের বিপরীতে কর্মরত ৬৯ জন। এছাড়া পদার্থবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে প্রদর্শকের পদ থাকলেও নিয়োগ দেয়া হয়নি। আইসিটি বিষয়ে নেই কোনো শিক্ষক।

ফেনী সরকারি কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বাংলা, ইংরেজি অর্থনীতি বিভাগে ছয়টি করে শ্রেণীকক্ষের প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে প্রতিটি বিভাগের জন্য মাত্র দুটি করে শ্রেণীকক্ষ বরাদ্দ রয়েছে। একই অবস্থা ইসলামের ইতিহাস, ইতিহাস, দর্শন, সমাজকর্ম, গণিত, ব্যবস্থাপনা উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগেও। এছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ছয়টি শ্রেণীকক্ষের বিপরীতে আছে তিনটি।

এদিকে পদার্থবিজ্ঞান মাস্টার্স প্রিলির জন্য কোনো কক্ষই বরাদ্দ নেই। এর মধ্যে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ক্লাস হয় দুটি ল্যাবে।

অন্যদিকে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ছয়টির বিপরীতে তিনটি, রসায়নবিদ্যা বিভাগে ছয়টির বিপরীতে একটি, ডিগ্রিতে নয়টির বিপরীতে দুটি শ্রেণীকক্ষ রয়েছে। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিকে ছয়টির মধ্যে চারটি শ্রেণীকক্ষ রয়েছে। কলেজটিতে ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৭০ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে ৬২ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

সূত্রটি জানায়, কলেজে অধ্যক্ষ উপাধ্যক্ষ ছাড়া শিক্ষকের পদ আছে ৭৩টি। এর মধ্যে কর্মরত ৬৯ জন শিক্ষক। আবশ্যিক বাংলা ইংরেজি দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে বর্তমানে মাত্র তিনজন করে শিক্ষক রয়েছেন। যদিও ১৫২ শিক্ষকের পদ সৃষ্টি না হলে কলেজটির শ্রেণী কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করা যাবে না বলে এনাম কমিশনের সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছিল। এছাড়া কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকজন অধিকাংশ সময় কলেজে অনুপস্থিত থাকেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থীরা জানান, কয়েকজন বিভাগীয় প্রধান কলেজে অনিয়মিত। তারা ফেনীর বাইরে পরিবার নিয়ে থাকেন। কেউ কেউ মাসে এক বা দুদিন বিভাগে আসেন।

বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলা বিভাগে শিক্ষকের ১২টি পদ থাকার কথা থাকলেও আছে ছয়টি। এর মধ্যে কর্মরত তিনজন। এছাড়া একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন। বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ক্লাস নিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়।

ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আফ্লাতুন বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত ইংরেজি বিভাগে পাঁচ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। বিভাগে শিক্ষকের পদ ১২টি থাকার কথা। কিন্তু পদ আছে পাঁচটি। এর মধ্যে আবার দুটি পদ শূন্য। একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক নেয়া হয়েছে। এজন্য চারজন শিক্ষক দিয়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান চালানো হচ্ছে।

উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাবেক শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন মিলন জানান, বিভাগে সম্মান শ্রেণীতে চারটি ব্যাচ রয়েছে। কিন্তু শ্রেণীকক্ষ একটি। ফলে বারান্দায় টেবিল বসিয়ে শ্রেণী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এতে ক্লাস চলাকালে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হয়।

কলেজ সূত্র জানায়, এনাম কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগে ১৫২ জন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত পদগুলো সৃষ্টি হয়নি। কলেজটিতে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিভাগ বাড়লেও শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হয়নি। বর্তমানে শিক্ষক শিক্ষার্থীর অনুপাত : ৩৩৩।

শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মোহাম্মদ জহির উদ্দিন বলেন, শ্রেণীকক্ষ সংকটের কারণে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়। জরুরি ভিত্তিতে একটি নতুন বিজ্ঞান ভবন প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজের বিভিন্ন বিভাগের ১৮টি শ্রেণীকক্ষে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা থাকলেও অনেক সময় যন্ত্রাংশ নষ্ট থাকে। ফলে পেছনে থাকা শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের আলোচনা শুনতে পান না।

এদিকে ২৩ হাজার শিক্ষার্থীর বিদ্যাপীঠে ১২০ ছাত্রের জন্য দুই কিলোমিটার দূরে একটি আবাসিক হল রয়েছে। কিন্তু সেখানেও নানা সমস্যার কারণে ৫০-৭০ জনের অধিক শিক্ষার্থী থাকতে পারেন না। ছাত্রীদের জন্য কলেজ কম্পাউন্ডেই ২৪০ আসনের আবাসিক হল নির্মাণ করা হলেও গ্যাস পানির সংযোগ না থাকায় তা চালু করা যাচ্ছে না।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল আলিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতি বছরই উন্নয়ন ফিসহ নানা ধরনের ফি আদায় করছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকলে টাকা দিয়েই অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব।

ব্যাপারে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক বিমল কান্তি পাল বণিক বার্তাকে বলেন, নানা সংকটের মধ্য দিয়ে কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এরই মধ্যে ছয়তলাবিশিষ্ট একটি বিজ্ঞান ভবন নির্মাণের জন্য নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাজ শুরু হবে। কয়েকজন খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হচ্ছে।  

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন