গভীর সংকটে থাইল্যান্ডের চাল রফতানি খাত

সাত বছরের সর্বনিম্নে নামতে পারে রফতানি

বণিক বার্তা ডেস্ক

এক দশক আগে থাইল্যান্ড ছিল বিশ্বের শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ। অথচ এখন পণ্যটির বিশ্ববাণিজ্যে দেশটির হিস্যা মাত্র ১৫ শতাংশে ঠেকেছে। বিগত দশকে দেশটিতে পণ্যটির উৎপাদন কমার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বাজার জটিলতা। অন্যদিকে বৈশ্বিক চাহিদার টেকসই উন্নয়নে ভারত, ভিয়েতনাম চীন আন্তর্জাতিক চাল রফতানি বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রস্তুত রয়েছে।

২০১৭ সালে রেকর্ড চাল রফতানি করেছিল থাইল্যান্ড। এর পর থেকেই দেশটির চাল রফতানিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। গত দুই বছর ধারাবাহিক পতনের পর চলতি বছরেও একই অবস্থা বজায় থাকবে বলে পূর্বাভাস করেছে দেশটির রাইস এক্সপোর্ট গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, চলতি বছরে থাইল্যান্ডের চাল রফতানি কমে গত সাত বছরের সর্বনিম্নে চলে আসতে পারে।

থাই রাইস এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছর দেশটি সব মিলিয়ে ৭৫ লাখ টন চাল রফতানি করতে পারে, যা ২০১৩ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন। সে সময়ে দেশটি মোট ৬৬ লাখ টন চাল আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি করেছিল। ২০১৭ সালে বিশ্ববাজারে কোটি ১৬ লাখ টন চাল রফতানি করে রেকর্ড করে থাইল্যান্ড। এরপরের দুই বছর দেশটির চাল রফতানি খাত নিম্নমুখী রয়েছে। গত বছর ৭৮ লাখ টন চাল রফতানির প্রত্যাশা থাকলেও তা পূরণে ব্যর্থ হতে পারে দেশটি।

পণ্য বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাথের (থাইল্যান্ডের মুদ্রা) শক্তিশালী অবস্থানে স্থানীয় বাজারে চালের মূল্য বেড়েছে। ফলে বেড়েছে রফতানি মূল্য। এতে পণ্যটির অন্যান্য শীর্ষ রফতানিকারক দেশের সঙ্গে থাইল্যান্ডের প্রতিযোগিতা দুর্বল হয়ে পড়বে, যা সামগ্রিকভাবে খাদ্যপণ্যটি রফতানি কমাতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে।

২০১৯ সালজুড়ে এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা ছিল বাথ। কেবল গত বছরেই শতাংশ বেড়ে মুদ্রাটির বিনিময় হার বর্তমানে ছয় বছরের বেশি সময়ের সর্বোচ্চে অবস্থান করছে। এদিকে দেশটির মধ্য, উত্তর উত্তর পূর্বাঞ্চল নিয়ে মোট ১৮টি প্রদেশে খরা বিরাজ করছে। এতে ধানের ফলন হ্রাসের সঙ্গে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। সব মিলিয়ে দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দামে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে।

চাল রফতানিতে থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী ভারত ভিয়েতনাম। খাদ্যপণ্যটির রফতানিতে ভারতের অবস্থান প্রথম, আর ভিয়েতনাম তৃতীয়। দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ড। বর্তমানে ভারত ভিয়েতনামে পণ্যটির রফতানি মূল্য থাইল্যান্ডের চেয়ে ২০ শতাংশ কম। ফলে ফিলিপাইনসহ পণ্যটির অন্যান্য আমদানিকারক দেশ থাইল্যান্ডের পরিবর্তে বিকল্প বাজারে ঝুঁকছে। বিদায়ী বছরে ফিলিপাইন বিশ্বের শীর্ষ চাল আমদানিকারকে পরিণত হয়েছে। অথচ দেশটির মোট চাল আমদানিতে থাইল্যান্ডের হিস্যা ছিল যৎসামান্য।

থাইল্যান্ডের চালের দ্বিতীয় শীর্ষ ক্রেতা চীন। উৎপাদন মজুদ বৃদ্ধির জেরে দেশটি সম্প্রতি পণ্যটির নিট আমদানিকারক থেকে নিট রফতানিকারকে পরিণত হয়েছে। ফলে বিদায়ী বছরে চীনের বাজারে পণ্যটির রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। একই অবস্থা ইন্দোনেশিয়ার ক্ষেত্রেও। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন সরবরাহ বাড়ায় থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশ থেকে পণ্যটির আমদানি কমিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। এদিকে আফ্রিকার দেশগুলো ঝুঁকছে তুলনামূলক সস্তা বাজারের দিকে। সব মিলিয়ে থাইল্যান্ডের চাল রফতানি বর্তমানে গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে।

 

রয়টার্স ইউএসডিএ অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন