মুদ্রানীতিতে সংশোধন

পুঁজিবাজার ও বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়াতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধারাবাহিক পতনের ফলে কিছুদিন আগে পুঁজিবাজারের সূচক ভিত্তিমূল্যের নিচে নেমে যায়। পরবর্তী সময়ে অবশ্য হঠাৎ উত্থানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচকে (ডিএসইএক্স) যোগ হয়েছে তিনশর বেশি পয়েন্ট। পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল করতে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পুঁজিবাজারসহ দেশের বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ব্যাপক মুদ্রার (ব্রড মানি) সরবরাহ শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটারি পলিসি কমিটির (এমপিসি) বৈঠকে পরিবর্তন আনা হয়।

অর্থবছরের শুরুতে ঘোষিত মুদ্রানীতি দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য এক দশকের বেশি সময় ধরে অর্থবছরের জন্য দুটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হচ্ছিল। তবে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য গত জুলাইয়ে একটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর ফজলে কবির। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সেই মুদ্রানীতিতে কিছুটা সংশোধন আনা হলো গতকাল। তবে অন্যান্য বছরের মতো সংবাদ সম্মেলন করে নয়, বরং বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে গণমাধ্যমকে সংশোধনের বিষয়টি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সুদহারে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। বাড়ানো হয়নি বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যও। তবে ঋণ জোগানের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে সরকারি খাতে। এর আগে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ২৪ দশমিক শতাংশ। যদিও সরকার এরই মধ্যে ৫৭ শতাংশ বেশি ঋণ নিয়েছে। এজন্য বাধ্য হয়েই সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির নতুন লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩৭ দশমিক শতাংশ। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে মাত্র দশমিক ৮৭ শতাংশ।

তারল্য সংকটের কারণে দুই বছরের বেশি সময় ধরে ঝিমিয়ে আছে বেসরকারি খাত। ব্যাংকগুলোতে উৎপাদনশীল খাতে নতুন উদ্যোক্তা নেই বললেই চলে। একই সময়ে ঝড় বয়ে গেছে পুঁজিবাজারে। সূচকের ধারাবাহিক পতনে ডিএসই সিএসইর প্রধান সূচক তলানিতে নেমে এসেছে। পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার বেসরকারি খাতকে চাঙ্গা করতে ব্যাপক মুদ্রা  (ব্রড মানি) সরবরাহের লক্ষ্য কিছুটা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত খাতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল ১২ দশমিক শতাংশ। গতকাল ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্য দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সার্বিক অর্থ ঋণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নীতি সুদহারে কোনো পরিবর্তন না এনে সার্বিক সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি দেশের পুঁজিবাজারসহ বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে উল্লিখিত মাত্রায় ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈশ্বিক অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির ওপর বিস্তারিত আলোচনার পর চলতি অর্থবছরের মুদ্রা ঋণ কর্মসূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাণিজ্য ঘাটতি বাড়লেও রেমিট্যান্সের অন্তর্মুখী প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি মুদ্রানীতিতে প্রক্ষেপিত দশমিক শতাংশের কাছাকাছিই থাকবে বলে প্রত্যাশা রয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্যও কিছুটা বেড়েছে। এর ফলে সাধারণ মূল্যস্ফীতি সাড়ে শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। তার পরও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে পণ্যসামগ্রীর সরবরাহ পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতির ফলে অর্থবছর শেষে তা লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছিই থাকবে বলে ধারণা করা যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাষ্য হলো, রফতানি আয় আমদানি ব্যয় হ্রাস পেলেও প্রবাসী আয়ে জোরালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এতে অর্থবছরের প্রথমার্ধে চলতি হিসাব সার্বিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। সরকারের নগদ প্রণোদনানীতি বিদ্যমান থাকায় রেমিট্যান্সের বিদ্যমান প্রবৃদ্ধি নিকট ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। সরকার এরই মধ্যে রফতানিকারকদের জন্য এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড থেকে নেয়া ঋণের সুদহার ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমানোর পরিপ্রেক্ষিতে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছর শেষে ধনাত্মক হওয়ার প্রত্যাশা করা যায়।

এছাড়া সরকারের গৃহীত অবকাঠামোগত বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের সূত্রে বৈদেশিক ঋণের অন্তঃপ্রবাহ সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির সূত্রে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকায় চলতি অর্থবছর শেষে সার্বিক লেনদেনের ভারসাম্যে প্রায় ৪১০ মিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে মুদ্রা ঋণ কর্মসূচিতে ব্যাংকিং খাতে নিট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি করা সমীচীন হবে বলেই মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন