লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ

চেয়ারম্যান-প্রধান নির্বাহীর দ্বন্দ্বে আটকে আছে সোয়া ৪ কোটি টাকার কাজ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি লক্ষ্মীপুর

উন্নয়নকাজ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ৪৭টি প্যাকেজের কাজ বাস্তবায়ন আটকে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দুই শীর্ষ ব্যক্তির পরস্পরবিরোধী অবস্থানে অর্থবছর শেষ হয়ে গেলেও এখনো এসব উন্নয়নকাজ শুরুই করা যায়নি। জটিলতার মধ্যে কুমিল্লায় বদলি করা হয়েছে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেনকে।

লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় (স্মারক নং- ৩৮১, তাং- মার্চ ২০১৯) জেলা পরিষদকে কোটি ৮৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়াও রাজস্ব রাজস্ব রিজার্ভ ফান্ডের আওতায় (স্মারক নং- ৩৬৯, তাং- মার্চ ২০১৯ ইং স্মারক নং- ১২৮৯, তাং- ২৮ জুলাই১৯) বরাদ্দ দেয়া হয় কোটি ৪৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ওই অর্থবছরে কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ পায় জেলা পরিষদ।

মসজিদ, মাদ্রাসা মন্দির সংস্কার এবং কালভার্ট নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নের জন্য এডিপি তহবিলের আওতায় বরাদ্দ দেয়া অর্থে ৩৪টি প্যাকেজ তৈরি করা হয়। রাজস্ব রাজস্ব রিজার্ভ ফান্ডের আওতায় বরাদ্দ পাওয়া অর্থে উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নে তৈরি করা হয় আরো ১৩টি প্যাকেজ। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দরপত্র না দিয়ে কোটেশন বিভিন্ন বিল ভাউচারের মাধ্যমে এসব প্যাকেজ বাস্তবায়ন করার পক্ষে। জেলা পরিষদের সদস্যরাও তাকে সমর্থন করছেন।

অন্যদিকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেন দরপত্র ছাড়া উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নে আগ্রহী নন। দরপত্র ছাড়া কোটেশন বিভিন্ন বিল ভাউচারের মাধ্যমে কাজ করার বিপক্ষে তালিকাভুক্ত ঠিকাদাররাও। দ্বন্দের কারণে ৪৭টি প্যাকেজের সবগুলোর বাস্তবায়ন আটকে গেছে। এমনকি -সংক্রান্ত নথিতে একজন স্বাক্ষর করলেও অন্যজন স্বাক্ষর দিচ্ছেন না।

এরই মধ্যে জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেনকে কুমিল্লায় বদলি করা হয়েছে। আজ তার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে বিদায় নেয়ার কথা রয়েছে। নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা যোগ দেয়ার আগ পর্যন্ত উন্নয়নকাজ শুরুর প্রক্রিয়াও স্থগিত থাকবে।

ব্যাপারে জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী নাজিমুল হক সরকার বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বরাদ্দ পাওয়া কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার টাকা ৪৭টি প্যাকেজের আওতায় এনে দরপত্রের জন্য পাঠানো হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু দুই প্রধানের অনুমোদন ছাড়া দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব না। মূলত, চেয়ারম্যান নির্বাহী কর্মকর্তার দ্বন্দ্ব সমন্বয়হীনতার কারণেই এসব প্যাকেজের কাজ আটকে আছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা পরিষদের এক সদস্য বলেন, জেলা পরিষদের কোনো কার্যক্রমই আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে করা হয় না। কারণ ছাড়াই যখন যেখানে স্বাক্ষর প্রয়োজন, দিতে হয়েছে। সমন্বয়হীনতার কারণে জেলা পরিষদের সব কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে।

জেলা পরিষদের তালিকাভুক্ত একাধিক ঠিকাদার জানান, বরাদ্দকৃত টাকা টেন্ডারের মাধ্যমে না দিয়ে কোটেশন, বিল ভাউচার সদস্যদের মাঝে বণ্টনের চেষ্টা করছে একটি চক্র। ফলে তালিকাভুক্ত ঠিকাদাররা কাজ না পেয়ে কর্মহীন হয়ে পড়ছে।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা মীর শওকত আলী বলেন, আমাকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে যিনি দায়িত্বে আসবেন তিনিই এসব দেখবেন।

কাজ আটকে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, দুই মাস আগে টেন্ডারের জন্য স্বাক্ষর দেয়া হয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বাক্ষর না করায় টেন্ডারের কার্যক্রম ঝুলে রয়েছে।

ব্যাপারে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, রেজিস্টার খাতাসহ দপ্তরের বিভিন্ন কাগজপত্র তিনি নিজের আয়ত্তে রাখেন। কাজের ফাইল দুই মাস ধরে তার টেবিলে পড়ে ছিল। তিনি ফাইলে স্বাক্ষর করেন না, যার কারণে আমিও স্বাক্ষর দিতে পারছি না। তবে খুব দ্রুত এসব উন্নয়নকাজ শুরু করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন