চবিতে নিহত ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজের অনুসারীদের অবস্থান পরিবর্তন!

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, চবি

তিন বছর আগে নিজ বাসায় খুন হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ‘লাশ নিয়ে অপরাজনীতি’র অভিযোগ তুলেছেন খোদ তার অনুসারীরা। আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি কুচক্রী মহল মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ তাদের।

আজ রোববার বিকেলে চবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করে দিয়াজের অনুসারী শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ বাংলার মুখের নেতাকর্মীরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতা পাঠ করেন বাংলার মুখের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক আমির সোহেল। এসময় উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রলীগের সাবেক আইন সম্পাদক আবু সাঈদ মারজান, বাংলার মুখের নেতা আবু সুফিয়ান ও জান্নাতুল নাঈমা প্রমুখ। দিয়াজ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে ছাত্রলীগ নেতা আমির সোহেল বলেন, ‘দিয়াজ ভাইয়ের মৃত্যুর পর থেকে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এর প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের দাবি জানিয়ে আসছি। এই দাবিতে বিভিন্ন সময় আমরা সংগ্রামও করেছি। আমরা চাই, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে যদি এটি হত্যাকাণ্ড হয়, তবে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হোক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমরা লক্ষ্য করেছি, দিয়াজ ভাইয়ের লাশ নিয়ে অপরাজনীতির খেলায় মেতে উঠেছে। আমরা তাদের হুঁশিয়ারি করে বলতে চাই, আপনারা থামুন। অপরাজনীতি থেকে দূরে থাকুন। যেকোন মূল্যে এই অপরাজনীতি রুখে দেব।’

দিয়াজের মৃত্যুর পর থেকে বিষয়টিকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে বিভিন্ন সময় আন্দোলনও করেছিল প্রয়াত এই ছাত্রলীগ নেতার অনুসারী চবি ছাত্রলীগের এ অংশটি। এছাড়া প্রতি বছর মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘শহীদ দিয়াজ ইরফান’ উল্লেখ করে এ হত্যার বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পোস্টার লাগিয়েছিল তার অনুসারীরা। তবে প্রথমবারের মতো এই সংবাদ সম্মেলনে ঘটনাটিকে ‘মৃত্যু’ উল্লেখ্য করেন খোদ তার অনুসারীরা। 

‘বাংলার মুখের সঙ্গে দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর পরিবারের কোন সম্পৃক্ততা নেই’ উল্লেখ্য করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘আমরা আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। নেতার প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল। দিয়াজ ভাইয়ের বিষয়টি তদন্তাধীন, এটি নিয়ে কারো মন্তব্য কাম্য নয়। এটি আইনি প্রক্রিয়ায় রয়েছে, সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ধৈর্য্য ধারণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’  

গত ৩১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে মেয়র নাছিরের উপস্থিতিতে দিয়াজ ইস্যুতে বক্তব্য দেন মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। দিয়াজও মেয়র নাছিরের অনুসারী হয়ে ক্যাম্পাস রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। এরপর থেকে দিয়াজের পরিবারের সঙ্গে মেয়র নাছিরের দূরত্ব প্রকাশ্যে আসে। 

সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায় দিয়াজের বড় বোন অ্যাডভোকেট জুবাঈদা সরওয়ার চৌধুরী নিপা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দিয়াজের মৃত্যুর পর আসলে তার কোন অনুসারী নেই। দিয়াজ যার রাজনীতি করতো, অনুসারীরাও একই নেতার রাজনীতি করে। তাদের কারা, কী শিখিয়ে দিয়েছে? তা আমরা বলতে পারবো না। পরিবার লাশ নিয়ে তখনই রাজনীতি করতো, যদি দিয়াজ ফিরে আসতো।’

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট এলাকার নিজ বাসা থেকে ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এর তিনদিন পর ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চিকিৎসকদের দেয়া প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়। তার ভিত্তিতে হাটহাজারী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে পুলিশ।

তবে দিয়াজের পরিবার ও তার অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীরা শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নির্মাণ কাজের দরপত্র নিয়ে কোন্দলের সূত্র ধরে এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যা’ বলে অভিযোগ করে আসছিল। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদী হয়ে আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকসহ সাবেক ছাত্রলীগের সাবেক ১০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। অভিযুক্ত সবাই নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন