জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। বাড়ছে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ ও বৈশ্বিক তাপমাত্রাও। জলবায়ুর এ বিরূপ আচরণে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে উপকূলীয় দেশগুলো। ফলে একদিকে যেমন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, একই সঙ্গে বাড়ছে তাদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ঝুঁকিও। মুডি’স ইনভেস্টর্সের গবেষণা বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাবে দীর্ঘমেয়াদি ঋণঝুঁকি মোকাবেলা করতে হবে বাংলাদেশকেও।
সম্প্রতি প্রকাশিত এ গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে এশিয়ার উপকূলীয় দেশগুলো, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকার ছোট ছোট দ্বীপগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
সর্বাধিক ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সামনের সারিতে।
ঝুঁকিতে থাকা অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশকেও নানা অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষয়ক্ষতির
শিকার হতে হবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট
দেশগুলোর অর্থনীতিতে চাপ পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এছাড়া এর
ধারাবাহিকতায় ঋণের চাপ বৃদ্ধি, বিনিয়োগ ও
সক্ষমতা হ্রাস পাবে বলেও সতর্ক করে দিয়েছে মুডি’স। একই সঙ্গে সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকিং
খ্যাতে লোকসানের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক চাপসহ নানা ধরনের হুমকি বাড়বে বলে
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
মুডি’সের প্রতিবেদনে উল্লিখিত শঙ্কাগুলো বাস্তবে রূপ নিলে তা দেশকে বিনিয়োগ ঝুঁকিতে
ফেলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা
বাড়লে তা বিদেশী বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলবে এ তথ্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন
বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন।
বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবে কিনা, সেটি নির্ভর করছে এ ঝুঁকি মোকাবেলা করার জন্য যে বিনিয়োগটা দরকার সেটি হচ্ছে কিনা। আর সে বিনিয়োগের অর্থায়নটা কীভাবে হচ্ছে। এ ধরনের বিনিয়োগে যদি কোনো ব্যবসায়িক সাফল্য না পাওয়া যায়, তাহলে তো সরকারের রাজস্ব বাড়বে না। রাজস্ব আয় না বাড়লে সেখানে ব্যবসায়ীদের বিশ্বাসটা কমবে, তখন তারা আগ্রহ হারাবে।
ঋণের ঝুঁকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আসলে কী
ধরনের সহায়তা আসছে, সেটার ওপর নির্ভর করছে
আমাদের ঋণের ঝুঁকিটা বাড়বে কি বাড়বে না। তবে কমার্শিয়াল লোনের ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা
অবশ্যই বাড়বে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট
দেশগুলো নিরাপত্তাঝুঁকি ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা
হয়। এছাড়া কৃষি-পর্যটন শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতেও নেতিবাচক প্রভাব
পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে এতে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গিয়ে জনসাধারণের আয় কমে জীবনমান
ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং
অন্যান্য দুর্যোগের কারণে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রতিনিয়ত এ ধাক্কা বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা তৈরির
পাশাপাশি সম্ভাব্য উৎপাদন ও অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করবে বলে আশঙ্কা করছে মুডি’স। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ
অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আইনুন নিশাত বলেন, জলবায়ু পবিবর্তনের ফলে
উপকূলীয় এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবেই। বিশেষ করে লবণাক্ততা বেড়ে গেলে সেখানকার উৎপাদন
ক্ষমতা কমে যাবে, মাইগ্রেশন হবে—সব মিলিয়ে তো অর্থনীতিতে প্রভাব আছেই। তবে বাংলাদেশের চেয়ে দ্বীপরাষ্ট্রগুলো
বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান তুলে ধরে মুডি’স জানিয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জিডিপিতে
প্রভাব পড়ার দিক থেকে বাংলাদেশ প্রথম সারিতে। দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার যখন ৩
দশমিক ৮ ছিল, সে সময়ও এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে
নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল দশমিক ৯ শতাংশীয় পয়েন্ট।