উজ্জ্বল স্থানীয়রাও

ক্রীড়া প্রতিবেদক

রাজশাহী রয়্যালসের প্রথমবারের মতো শিরোপা উঁচিয়ে ধরার মধ্য দিয়ে পর্দা নামল বঙ্গবন্ধু বিপিএলের। শুরুতে এবারের আয়োজন নিয়ে ছিল নানা শঙ্কা ও সমালোচনা। বিশেষ করে বিসিবি বনাম ফ্র্যাঞ্চাইজি বিরোধে আসর মাঠে গড়াবে কিনা, তা নিয়েই ছিল সংশয়। এরপর ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো বাদ দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ বিপিএল আয়োজনের ঘোষণা দেয় বিসিবি নিজেই। পরে ১১ ডিসেম্বর শুরু হয়ে মাঠের লড়াই, শেষ হয় গত শুক্রবার।

এবারের বিপিএলে টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে রাজশাহী চ্যাম্পিয়ন হলেও ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে পিছিয়ে ছিলেন না অন্য দলগুলোর খেলোয়াড়রাও। এমনকি রানের তালিকায় শীর্ষে থাকা দুই ব্যাটসম্যানই রানার্সআপ খুলনা টাইগার্সের। আবার বোলিংয়ে শীর্ষে থাকা মুস্তাফিজুর রহমানের রংপুর প্লে-অফেই উঠতে পারেনি। তবে এবারের বিপিএলের বিশেষ আকর্ষণ ছিল দেশীয় ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স। আগের আসরগুলোর চেয়ে বেশ উজ্জ্বল ছিল স্থানীয়দের পারফরম্যান্স। যদিও ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে খুব কম সময়েই কার্যকরী হতে পেরেছেন তারা। সেক্ষেত্রে বিদেশী ক্রিকেটাররাই হয়ে উঠেছিলেন মূল ক্রীড়নক।

ব্যাটসম্যানদের তালিকায় এবার সবার উপরে থেকে শেষ করেছেন খুলনার দক্ষিণ আফ্রিকান তারকা রাইলি রুশো। ১৪ ম্যাচে তার রান ৪৯৫। ঠিক পরের স্থানেই খুলনার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ১৪ ম্যাচ খেলে রুশোর চেয়ে ৪ রান কম মুশফিকের। যদিও গড়ের দিক থেকে রুশোর চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে মুশফিক (৭০.১৪)। রান সংগ্রাহকের তালিকায় তৃতীয় স্থানটা চ্যাম্পিয়ন রাজশাহীর ব্যাটসম্যান লিটন দাসের। জাতীয় দলের জার্সিতে অধারাবাহিক লিটন বিপিএলে ছিলেন বেশ ধারাবাহিক। ১৫ ম্যাচে ৩২.৫০ গড় ও ১৩৪.২১ স্ট্রাইক রেটে লিটনের রান ৪৫৫। তার সমান রান করে চতুর্থ স্থানে রাজশাহীরই আরেক অলরাউন্ডার শোয়েব মালিক। তালিকার পঞ্চম কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের ডেভিড মালান। দল প্লে-অফ খেলতে না পারলেও ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়ে মাত্র ১১ ম্যাচে মালানের রান ৪৪৪। বিপিএলের অন্যতম চমক ছিলেন ইমরুল কায়েস। জাতীয় দলে সময়টা ভালো কাটছিল না। সমালোচনার মুখেও ছিলেন। কিন্তু ব্যাট হাতে জবাবটা ভালোই দিলেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে খেলা এ বাঁহাতি। ১৩ ম্যাচে তার রান ৪৪২। বিপিএল শুরুর আগে সমালোচনার মুখে ছিলেন তামিম ইকবালও। কিন্তু বেশ কয়েকটি ম্যাচে দলকে পথ দেখিয়েছেন তিনি। ১২ ম্যাচে করেন ৩৯৬ রান। এই কয়জনের পাশাপাশি ব্যাট হাতে দারুণ নৈপুণ্য দেখান আরো কয়েক বাংলাদেশী। তামিমের পর চারটি নাম যথাক্রমে আফিফ হোসেন (৩৭০), মোহাম্মদ নাঈম (৩৫৯), মোহাম্মদ মিঠুন (৪৯) ও সৌম্য সরকার (৩৩১)। তবে বিপিএলে দেশীয় তারকাদের মাঝে একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসেন শান্ত (৩০৮) কিছুটা পিছিয়েই আছেন।

ব্যাটসম্যানদের পাশাপাশি বল হাতেও উজ্জ্বল ছিলেন বাংলাদেশী তারকারা। প্রথম দিকে অনুজ্জ্বল বোলিং নৈপুণ্যের কারণে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন মুস্তাফিজুর রহমান। তবে টুর্নামেন্ট শেষে যথারীতি সর্বোচ্চ উইকেট শিকারে সবার উপরে মুস্তাফিজ। তার সমান ২০ উইকেট পেয়েছেন আরো তিনজন। কিন্তু প্রত্যেকেই মুস্তাফিজের চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন। ২০ উইকেট পাওয়া অন্য বোলাররা হলেন মোহাম্মদ আমির, রুবেল হোসেন ও রবি ফ্রাইলিংক। ১৯ উইকেট নিয়ে পরের স্থানে শহিদুল ইসলাম। মাত্র ১০ ম্যাচ খেলে ১৮ উইকেট নিয়ে আলোচনায় ছিলেন চট্টগ্রামের মেহেদী হাসান রানাও। উইকেট শিকারে পিছিয়ে থাকলেও বৈচিত্র্য দেখিয়ে হাসান মাহমুদও ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে। জায়গা পেয়েছেন পাকিস্তান সফরের টি২০ দলেও। তবে এবারের বিপিএলে একেবারে ভালো সময় কাটেনি স্পিনারদের। বিশেষ করে দেশীয় স্পিনাররা তেমন সুবিধাই করতে পারেননি। অন্যদিকে অলরাউন্ডার হিসেবে আলো ছড়িয়েছেন বেশ কয়েকজন। যাদের মাঝে টুর্নামেন্ট সেরা আন্দ্রে রাসেল উল্লেখযোগ্য নাম। যিনি ২২৫ রান করার পাশাপাশি নিয়েছেন ১৪ উইকেট। একইভাবে সৌম্য সরকারও ব্যাটে-বলে দারুণ করেন। বল হাতে নিয়েছেন ১২ উইকেট।

সেরা ৫ ব্যাটসম্যান :

     নাম         দল      ম্যাচ    রান

রাইলি রুশো            খুলনা  ১৪      ৪৯৫

মুশফিকুর রহিম      খুলনা  ১৪      ৪৯১

লিটন কুমার দাস    রাজশাহী        ১৫      ৪৫৫

শোহেব মালিক        রাজশাহী        ১৫      ৪৫৫

ডেভিড মালান          কুমিল্লা           ১১       ৪৪৪

 

সেরা ৫ বোলার :

       নাম      দল      ম্যাচ    উইকেট

মুস্তাফিজুর রহমান  রংপুর ১২      ২০

মোহাম্মদ আমির     খুলনা  ১৩      ২০

রুবেল হোসেন         চট্টগ্রাম           ১৩      ২০

রবি ফ্রাইলিংক         খুলনা  ১৪      ২০

শহিদুল ইসলাম       খুলনা  ১৩      ১৯

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন