সরকারি সহায়তা ছাড়াই তিন বছর ধরে মিড
ডে মিল চালু আছে বাগেরহাট সদর উপজেলার কাঠিগোমতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এটিই
বাগেরহাটের একমাত্র বিদ্যালয়,
যেখানে দুপুরে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত খাবার
পাচ্ছে। এতে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ
জানিয়েছে, এলাকাবাসী ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের মিড ডে মিল হিসেবে
পুষ্টিকর খাবার দেয়া হচ্ছে। এসব খাবারের বেশির ভাগ উৎপাদন হচ্ছে বিদ্যালয়ের নিজস্ব
জমিতে।
জানা গেছে, কাঠিগোমতি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৮৬ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। ২০১৭ সালের ১৭
জানুয়ারি ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন রওশন আরা খানম। যোগদানের
পরই তিনি এ বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চালুর উদ্যোগ নেন। তাকে সহায়তায় এগিয়ে আসেন
স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকরা। তাদের মধ্য থেকে বয়োজ্যেষ্ঠদের নিয়ে গঠন করা হয় ১১
সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ এ
বিদ্যালয়ে চালু হয় মিড ডে মিল। মিড ডে মিলের জন্য বিদ্যালয়ের জমিতে সবজি ও পুুকুরে
মাছ চাষ হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক যে যেভাবে পারেন, নিয়মিত
বিদ্যালয়ে খাবার দিয়ে সহায়তা করেন। এরই সুবাদে বিদ্যালয়টিতে এখনো মিড ডে মিল চালু
রাখা সম্ভব হয়েছে। স্থানীয়ভাবে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে এ উদ্যোগ। নিয়মিত দুপুরের
খাবার দেয়ায় বিদ্যালয়ে উপস্থিতিও বেড়েছে।
সুজতা রানী মণ্ডল ও রত্না রায় নামে
দুই অভিভাবক বলেন, অনেক সময় আমরা বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে চাল ও সবজি নিয়ে আসি। বিদ্যালয়ে
রান্নার জন্য নির্ধারিত বাবুর্চিকেও সহযোগিতা করি। আমাদের সন্তানরা দুপুরে
বিদ্যালয় থেকে নিয়মিত খাবার খেতে পারে। এতে তাদের মন যেমন ভালো থাকে, তেমন
লেখাপড়াও ভালো হয়।
চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী অর্পিতা
মণ্ডল, রুদ্র মণ্ডল, রোকসানা আক্তার,
মিরাজুল ইসলাম জোহান ও তৃষা রানী বলেন, সকালে
বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে আসি। ক্লাস শেষে টিফিনের সময় বিদ্যালয়ে আমরা সবাই একসঙ্গে
খাবার খাই। একসঙ্গে একই ধরনের খাবার খেতে আমাদের বেশ ভালো লাগে।
তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইয়াছিন
আরাফাত গাজী, অন্তর কুমার পাল,
সাথী মণ্ডল, সঞ্জীব মণ্ডল ও সামিয়া সুলতানা বলে, দুপুরে
আমাদের ভাত, মাছ, সবজি, ডাল, ডিম, ভর্তা, খিচুড়ি, পিঠাসহ নানা প্রকার খাবার দেয়া হয়। একেক দিন একেক রকম খাবার খাই আমরা।
বাড়ি থেকে আনা টিফিনের থেকে এ খাবার অনেক ভালো লাগে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রওশন আরা
খানম বলেন, নিয়মিত মিড ডে মিল চালু রাখতে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে।
শিশুদের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিতের জন্য আমরা বিদ্যালয়ের নিজস্ব
জমিতে বেশির ভাগ সবজি ও মাছ উৎপাদন করি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কবির
হোসেন বলেন, কাঠিগোমতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যে মিড ডে মিল চালু রয়েছে, তা
একটি দৃষ্টান্ত। অন্যান্য বিদ্যালয়ও চাইলে একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে।
কাঠিগোমতি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা
কমিটির সভাপতি জগদীশ চন্দ্র রায় বলেন,
প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগে এবং এলাকাবাসীর
সহযোগিতায় ২০১৭ সালে আমরা বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চালু করি। সেই থেকে আমরা অনেক
চেষ্টা করে মিড ডে মিল চালু রেখেছি। আগামীতেও যেন মিল চালু থাকে, সে
চেষ্টাই আমরা করছি।