ভারত-চীন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য কমেছে ৩০০ কোটি ডলার

বণিক বার্তা ডেস্ক

গত বছর ভারত ও চীনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৩০০ কোটি ডলার কমেছে। এছাড়া চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি ৫ হাজার ৬৭৭ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দুই অর্থনীতিতেই শ্লথগতি বিরাজ করায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে প্রভাব ফেলেছে। চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমস অব চায়না (জিএসিসি) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। খবর পিটিআই।

এক সংবাদ বিবৃতিতে বার্ষিক বাণিজ্য উপাত্ত প্রকাশের সময় জিএসসিসির উপমন্ত্রী ঝু ঝিয়ু জানান, ভারত ও চীনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বছরওয়ারি ১ দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়ে ৬৩ হাজার ৯৫২ কোটি ইউয়ান বা ৯ হাজার ২৬৮ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০১৮ সালের ৯ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার থেকে যা প্রায় ৩০০ কোটি ডলার কম।

ভারতে চীনের রফতানি ২ দশমিক ১০ শতাংশ বেড়ে ৫১ হাজার ৫৬৩ কোটি ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ভারত থেকে চীনের আমদানি শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১২ হাজার ৩৮৯ কোটি ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে। এতে ২০১৯ সালে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি ইউয়ান। ২০১৮ সালে উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দাঁড়িয়েছিল ৯ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার। তখন আশাবাদের সঞ্চার হয়েছিল ২০১৯ সালে দুই প্রতিবেশী দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১০ হাজার কোটি ডলারের সীমা অতিক্রম করবে। কিন্তু গত বছর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০১৮ সালের চেয়ে ৩০০ কোটি ডলার কমে ৯ হাজার ২৬৮ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছর ভারতে চীনের রফতানি হয়েছে ৭ হাজার ৪৭২ কোটি ডলারের পণ্য, ২০১৮ সালে যেখানে পণ্য রফতানি হয়েছিল ৭ হাজার ৬৮৭ কোটি ডলারের। অন্যদিকে ২০১৯ সালে চীনে ভারত থেকে রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৭৯৫ কোটি ডলারের পণ্য, যেখানে ২০১৮ সালে হয়েছিল ১ হাজার ৮৮৩ কোটি ডলারের পণ্য।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সংকোচনের জেরে বাণিজ্য ঘাটতি ২০১৮ সালের ৫ হাজার ৮০৪ কোটি ডলার থেকে কমে ৫ হাজার ৬৭৭ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য সংকোচনের পেছনে উভয় দেশের অর্থনীতিতে শ্লথগতিকে দায়ী করা হচ্ছে।

বেইজিংয়ে ভারতীয় দূতাবাসের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত সর্বশেষ উপাত্ত অনুসারে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পূর্ববর্তী বছরের ১১ মাসের তুলনায় ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ কমেছে।

ভারত ও চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে তিক্ততার বিষয় হিসেবে দাঁড়িয়েছে বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টি। ভারত চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে তারা যেন তাদের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) ও ওষুধ খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়, যাতে রফতানি বাড়াতে পারে ভারত। চীন ভারতের উদ্বেগের কথা আমলে নিচ্ছে বলে আশ্বাস দিয়েছে এবং গত বছর উভয়পক্ষের মধ্যে এ নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে।

গত বছরের অক্টোবরে মামাল্লাপুরামে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে দ্বিতীয় অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সেবা খাত নিয়ে আলোচনায় ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ও চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী হু চুনহুয়ার মধ্যে নতুন একটি মেকানিজম স্থাপনের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন দুই নেতা।

বেইজিংয়ে ভারতীয় দূতাবাসের ওয়েবসাইটে লেখা এক বিবৃতিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে আমাদের উদ্বেগ দ্বিমুখী। প্রথমটি হচ্ছে আমাদের ঘাটতির প্রকৃত আকার। দ্বিতীয়টি হলো বছরের পর বছর বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৮০৪ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সঙ্গে সংগতি রেখে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি হয়নি। যেখানে দেশ দুটি বিশ্বের শীর্ষ বিনিয়োগ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে, সেখানে দুই দেশের পারস্পরিক বিনিয়োগে গতি পায়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন