ইইউ-ভিয়েতনাম বাণিজ্য চুক্তির কেন্দ্রে আছে শ্রমিক অধিকার

বণিক বার্তা ডেস্ক

একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দীর্ঘ আট বছর ধরে আলোচনা করে আসছে ভিয়েতনাম ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) চুক্তিটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিকাশমান বাজারটিকে বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্য জোটের জন্য উন্মুক্ত করবে। ইইউ-ভিয়েতনাম ফ্রি-ট্রেড এগ্রিমেন্ট (ইভিএফটিএ) যেকোনো উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে করা জোটের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী চুক্তি বলে মনে করছে ইইউ।

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিটি ৯৯ শতাংশ কাস্টমস শুল্ক দূর করবে এবং গাড়ি ও ওষুধের মতো পণ্যগুলোর মানদণ্ড সমন্বিত করার মাধ্যমে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করবে। একই সঙ্গে ইউরোপ ও ভিয়েতনামউভয় পক্ষের কোম্পানিগুলোর জন্য বাজার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে।

ইইউর হিসাবে, বাণিজ্য চুক্তিটির ফলে ২০৩৫ সাল নাগাদ ইইউতে বার্ষিক ১ হাজার ৫০০ কোটি ইউরো (১ হাজার ৬৬০ কোটি ডলার) অতিরিক্ত রফতানি সম্ভব হবে। মঙ্গলবার ইইউ পার্লামেন্টের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিটি (আইএনটিএ) ইভিএফটিএর একটি খসড়া রেজল্যুশন উপস্থাপন করবে। ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে রেজল্যুশনটি অনুমোদন পেলে এক মাস পর ইভিএফটিএ কার্যকর হবে।

জার্মানিতে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত নগুয়েন মিনহ ভু চুক্তিটিকে উভয় অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করছেন। তিনি বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা ও ক্রমবর্ধমান সংরক্ষণবাদের প্রেক্ষাপটে ইভিএফটিএ  বিশ্বায়নের প্রতি উভয় পক্ষের শক্তিশালী সমর্থনের পাশাপাশি একটি মুক্ত ও নিয়মতান্ত্রিক বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রতি প্রত্যয় ইঙ্গিত করে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গেও একই ধরনের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় রয়েছে ইইউ। তবে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মধ্যে অঞ্চলটিতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ইইউর কাছে ভিয়েতনাম কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। গত বছরই দেশটির সঙ্গে একটি নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব চুক্তি করেছে ইইউ।

এদিকে ভিয়েতনামের রফতানিমুখী অর্থনীতি বছরের পর বছর ধরে মুক্ত বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করে আছে। মোট ১১টি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে ভিয়েতনামেরও পাঁচটি নিয়ে আলোচনা চলছে। সিঙ্গাপুর বাদে আর কোনো আসিয়ান দেশের এত বেশি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নেই। তবে এখন পর্যন্ত এ কৌশলে সফল হয়েছে ভিয়েতনাম। গত পাঁচ বছরে দেশটির অর্থনীতি গড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। ইভিএফটিএ চুক্তির ফলে ইইউ থেকে আরো বেশি এফডিআই আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পাশাপাশি ইভিএফটিএর জন্য ভিয়েতনামকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) শ্রম ও পরিবেশ মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে। আইএলওর আটটি মানদণ্ডের মধ্যে ছয়টি অনুমোদন করেছে ভিয়েতনাম। কিন্তু এখনো সমাবেশের স্বাধীনতা ও বলপূর্বক শ্রম নিষিদ্ধ করা বাকি রয়েছে। ২০১৯ সালের নভেম্বরে দেশের শ্রম আইন সংশোধন করে ভিয়েতনাম সরকার।

দুই পক্ষই ব্যবসার ক্ষেত্রে একই ধরনের কিছু মানদণ্ড অনুসরণ করলেও স্বচ্ছতা ও সুশীল সমাজ নিয়ে বড় পার্থক্য রয়েছে। কর্তৃত্ববাদী ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মত দমন ও বাক্-স্বাধীনতা না থাকার অভিযোগ রয়েছে।

অতীতেও মুক্ত বাণিজ্য আলোচনায় ভিয়েতনামের কাছে শ্রম ও পরিবেশ মানদণ্ডের দাবি করেছে ইইউ। কিন্তু এখন পর্যন্ত চুক্তি অনুযায়ী শ্রম মানদণ্ড নির্ধারণে অর্ধেক পথ পাড়ি দিতে পেরেছে ভিয়েতনাম। ইইউর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সফল করতে ভিয়েতনামকে এসব প্রতিবন্ধকতা পার হতে হবে।

            সূত্র: ডয়েচে ভেলে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন