চলচ্চিত্র নায়ক, না নায়িকার?

ফিচার ডেস্ক

গত বছর বলিউডে মুক্তি পায় অমিতাভ বচ্চন তাপসী পান্নু অভিনীত ছবি বদলা। ছবিটি বেশ আলোচিত হয়েছে। কিন্তু তাপসী পান্নু অবাক হয়েছিলেন একটি ভিন্ন বিষয় প্রত্যক্ষ করে। বলিউডের ট্রেড অ্যানালিস্ট থেকে দর্শকদের এক বিরাট অংশ ছবিটিকেঅমিতাভ বচ্চন ফিল্মহিসেবে লেবেল সেঁটে দেন। অথচ বদলা ছবিতে পর্দায় সবচেয়ে বেশি সময় দেখা গেছে তাপসী পান্নুকেই। স্প্যানিশ ছবি কন্ট্রাটিয়েম্পোর রিমেক ছিল বদলা, আর ছবির পরিচালক ছিলেন সুজয় ঘোষ। বদলা বাণিজ্যিকভাবে সফল ছিল, মুক্তির দিন ছবিটি কোটি রুপির বেশি আয় করে এবং বৈশ্বিকভাবে ১০০ কোটির বেশি আয় করে।

তাপসী পান্নুর বিস্ময়কে মাথার রেখে ডেইলি ওতে সমালোচক গৌতম চিন্তামণি লিখেছেন, কোনো ছবি কোন অভিনেতা বা অভিনেত্রীর নামে পরিচিত হয়ে যায়, তা ছবিতে তাকে কতক্ষণ দেখা যায়, তার ওপর নির্ভর করে না।

বদলার পর সান্দ কি আঁখ ছবি পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় ছবিতে অভিনেতা-অভিনেত্রী বাছাই করতে কেন নির্দিষ্ট কিছু বিবেচনা মাথায় রাখা হয়। বদলা ছবিতে অ্যান্টাগনিস্ট তরুণের চরিত্র বদলে দেয়া হয়েছে তরুণীর চরিত্রে; সান্দ কি আঁখ ছবিতে দেখানো হয়েছে দুজন নারী শুটারের জীবন, যারা ষাটের দশকে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ছবিতে নারী শুটারদের অশীতিপর অবস্থাও দেখানো হয়েছে তরুণী নায়িকাদের মাধ্যমে। বলিউডে অশীতিপর নারী চরিত্রে কোনো বয়সী অভিনেতাকে দেখতে প্রস্তুত নন দর্শকরা, ছবির পরিচালকরাও। তাই তাপসীকেই তার চরিত্রের অশীতিপর চেহারাটি ফুটিয়ে তুলতে হয়। 

ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের বয়স পরিচালক অভিনেতার জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। অনেক তরুণ অভিনেতা বয়সী কোনো চরিত্রে অভিনয় করতে সক্ষম নন। তাই বলিউডে ৫০-৬০ বছরের কোনো পুরুষ চরিত্রের জন্য পরিচালকদের অমিতাভ বচ্চন কিংবা অনিল কাপুরের শরণাপন্ন হতে হয়। যেসব চলচ্চিত্র কিংবা টেলিভিশন সিরিজে কোনো কেন্দ্রীয় চরিত্র নেই, সেগুলোতে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী চরিত্রগুলো দর্শকদের যথেষ্ট আকর্ষণ করতে পারে না।

দ্য গডফাদার (১৯৭২) কিংবা দ্য সাইলেন্স অব ল্যাম্বস (১৯৯১) কালোত্তীর্ণ ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়। গডফাদার- মার্লোন ব্রান্ডো কিংবা দ্য সাইলেন্স অব ল্যাম্বস- অ্যান্থনি হপকিন্সের উপস্থিতি মূল ছবির দৈর্ঘ্যের তুলনায় বেশ স্বল্পকালীন, তার পরও ছবিগুলো তাদের ছবি বলেই দুনিয়াখ্যাত। এবারের একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের মনোনয়নগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যাবে কীভাবে একটি ছবি কোনো নির্দিষ্ট অভিনেতার হয়ে ওঠে এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে বদলে যায় ছবি দেখার দৃষ্টিভঙ্গি। কোয়ান্টিন টারান্টিনোর ওয়ান্স আপন টাইম ইন হলিউড ছবিতে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও ব্রাড পিট দুজনই ছিলেন মুখ্য চরিত্রে। কিন্তু অস্কারে সেরা অভিনেতার জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও আর ব্রাড পিট পেয়েছেন সেরা পার্শ্ব-অভিনেতা বিভাগে। সমালোচক, দর্শকরা একমত যে ওয়ান্স আপন টাইম ইন হলিউড ছবিতে কাহিনীর কেন্দ্র হিসেবে ক্যাপ্রিওর চেয়ে ব্রাড পিটের ভূমিকা বেশি। দ্য সাইলেন্স অব ল্যাম্বস ছবিতে পর্দায় অ্যান্থনি হপকিন্সের উপস্থিতি ছিল ১৬ মিনিটের কম সময় কিন্তু ছবি একবার যিনি দেখেছেন, তিনি ভালোই জানেন কয়েক মিনিটের অভিজ্ঞতা। পুরো ছবির কথা ভাবলে যে কারো চোখে কেবল হপকিন্সের চরিত্রটিই ভেসে উঠবে। ছবিটি মোট পাঁচটি বিভাগে অস্কার জিতে নিয়েছিল এবং সেরা অভিনেতার অস্কার পেয়েছিলেন অতি অবশ্যই অ্যান্থনি হপকিন্স।


আবার ফেরা যাক বদলা ছবিতে। ছবিতে অমিতাভ বচ্চনকে নেয়া হয়েছে ভাবনাচিন্তা করেই। মূল স্প্যানিশ ছবিতে চরিত্র করেছেন একজন নারী এবং তাকে ঘিরেই ছবির গল্প আবর্তিত হয়েছে। ছবির বলিউড সংস্করণ কেন অমিতাভ বচ্চনের ছবি হয়ে উঠল? স্প্যানিশ ছবিটির অনুকরণে চরিত্রটি কেন কোনো নারীকে না দিয়ে অমিতাভ বচ্চনকে দেয়া হলো? এজন্য অনেক সমালোচক দায়ী করেছেন ছবির পরিচালক এবং বলিউডি সংস্কৃতিকে। বদলা ছবিতে অমিতাভ ছাড়াও ছিলেন অমৃতা সিং, যিনি আশির দশকে অমিতাভ বচ্চনের সহশিল্পী ছিলেন। বদলায় অমৃতা সিংয়ের চরিত্রটিও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু খেয়াল করার বিষয় হলো স্প্যানিশ ছবির নারী চরিত্রটি হিন্দি ছবিতে কোনো অভিনেত্রীকে না দিয়ে দেয়া হয়েছে অমিতাভ বচ্চনকে। বলিউডের অভিনেতা বা নায়ক নির্ভরতার সংস্কৃতি মাথায় রাখলে বোঝা যায় যে বদলা ছবিতে চাইলে তাপসী পান্নুর চরিত্রটি বরুন ধাওয়ান কিংবা রকম কোনো তরুণ অভিনেতা করতে পারবেন কিন্তু অমিতাভের চরিত্রটি তার সমবয়সী কোনো অভিনেত্রী করবেন, এমনটা কল্পনাও করা যায় না। এক্ষেত্রে বদলায় অমিতাভ বা উকিলের চরিত্রটিতে সর্বোচ্চ মাধুরী দীক্ষিত কিংবা জুহি চাওলা পর্যন্ত ভাবা যায়, তার বেশি বয়সী কোনো অভিনেত্রীকে নয়।

চলচ্চিত্র জগতে বহুকাল ধরেই একটি প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসেছবিটি কার? মানে কোন অভিনেতা বা অভিনেত্রীর? সহজ উত্তরটি হলো দর্শকের।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন