ব্র্যাক ও কেএফডব্লিউর যৌথ উদ্যোগ

শহরের জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য ১২ মিলিয়ন ইউরোর তহবিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের (সিডিএমপি-২) তথ্যানুসারে, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতি সাতজনে একজন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাস্তুহারা হবে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, যা গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে দরিদ্র জনগণের জন্য জীবিকার সংকট তৈরি করবে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সুবিধা দিতে প্রায় ১২ মিলিয়ন ইউরোর একটি কার্যক্রম চালু হয়েছে।

জার্মান সরকারের পক্ষে জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (কেএফডব্লিউ) এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের যৌথ উদ্যোগেক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ড নামে এ কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১ কোটি ১৭ লাখ ৩৫ হাজার ইউরো তহবিল নিয়ে এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে জলবায়ু সমস্যার কারণে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে কিংবা উদ্বাস্তু হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এমন জনগোষ্ঠীগুলোর দুর্যোগ মোকাবেলার সামর্থ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবে ফান্ডটি। মূলত শহরাঞ্চলে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা মানুষই সুবিধা পাবেন।

সম্প্রতি রাজধানীতে এ ফান্ডের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহে্্র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোল্টজ, কেএফডব্লিউর কান্ট্রি ডিরেক্টর অনির্বাণ ক্লুসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং দাতাগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা।

জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বরে এ তহবিল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হবে। প্রথমে খুলনা, বরিশাল, সাতক্ষীরা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় জলবায়ু-ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর দুর্যোগ মোকাবেলায় সামর্থ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ তহবিলের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। শহর এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনায় দক্ষ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ডের সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারবে। তহবিলটির নির্দিষ্ট বাজেটের মধ্যে ব্র্যাকও বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন বিশ্বব্যাপী একটি সংকটপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। আগামী পাঁচ বছর ব্র্যাকের কার্যক্রমের অন্যতম প্রধান এলাকা হবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা। এ তহবিল বাংলাদেশের জন্য একটি চমত্কার উদ্ভাবনী উদ্যোগ, যার মাধ্যমে টেকসই কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি সাধারণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকেও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য উপযুক্ত পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব হবে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কার্যক্রমের উত্তরোত্তর বিস্তার ঘটবে।

কেএফডব্লিউর কান্ট্রি ডিরেক্টর অনির্বাণ ক্লু বলেন, ব্র্যাকের সঙ্গে এ রকম একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে মূলত শহর এলাকায় জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলার পদক্ষেপে দীর্ঘদিনের আর্থিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য। রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোল্টজ বলেন, স্বল্পোন্নত ও উদীয়মান দেশগুলোর ইতিবাচক পরিবর্তনে আর্থিক সহায়তা চালিয়ে যেতে জার্মানি অঙ্গীকারবদ্ধ।

বাংলাদেশ সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, কৃষকদের অন্য এলাকায় স্থানান্তর এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যানগত সম্পর্ক পরিলক্ষিত হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের ফলে নগরে বস্তির সংখ্যা ও বস্তিবাসী জনসংখ্যা উভয়ই বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে শহরাঞ্চলে জীবিকার সুযোগপ্রাপ্তি, আবাসন, পানি সরবরাহ, পয়ঃব্যবস্থা ও নিষ্কাশন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অন্যান্য অবকাঠামোসহ মৌলিক সেবাগুলোর বিপুল চাহিদা সৃষ্টি হবে ও সংকট বাড়বে। দেশের শহরাঞ্চলগুলোর অন্যতম কেন্দ্র খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, সাতক্ষীরা ও সিরাজগঞ্জ। শহরের বস্তিবাসীদের জীবন-জীবিকা মৌলিক সেবা ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে ক্রমেই আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠছে এবং বন্যা, জলাবদ্ধতা, তাপপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ, খরা, ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা, সংক্রামক রোগের বিস্তারসহ বিভিন্ন দুর্যোগের দ্বারা আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন