বিপিএলে সপ্তম আসর শেষ। বিদেশীদের
সঙ্গে তুল্যমূল্য বিচারে দেশীয়দের পারফরম্যান্স বেশ সন্তোষজনক। রান সংগ্রহের দিক
থেকে প্রথম ১১ জনের মধ্যে আটজনই স্থানীয়। এমনকি সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীও
বাংলাদেশের। বল হাতেও একই ব্যাপার। সর্বোচ্চ শিকারি ১২ জনের মধ্যে সাতজনই স্থানীয়
বোলার। শীর্ষ উইকেট শিকারি প্রথম পাঁচজনের তিনজনই বাংলাদেশের। তার পরও কথা থেকেই
যায়। যেহেতু টি২০ আয়োজন, তাই বাংলাদেশ ক্রিকেট টি২০ স্পেশালিস্ট পেল কিনা, সে
প্রশ্নটা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগই নেই। এ জায়গাটিতে আগের আসরগুলোর চেয়ে ব্যতিক্রম
খুব একটা ঘটেনি।
সপ্তম আসরেও টি২০ স্পেশালিস্ট হিসেবে
নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি আমাদের টাইগাররা। প্রথমে দৃষ্টি দেয়া যাক
ব্যাটিংয়ের দিকে। দেড়শোর্ধ্ব স্ট্রাইক রেট রেখে এবারের আসর শেষ করেছেন ১২ জন। এদের
মধ্যে দেশীয় ক্রিকেটার মাত্র একজন। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ
রিয়াদের স্ট্রাইক রেট ১৭০.৩৩। ৭ ম্যাচে ৪০.২০ গড়ে ২০১ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে।
রান সংগ্রহের দিক থেকে মাহমুদউল্লাহ অবশ্য প্রথম ২০ জনের তালিকাতেও নেই। অবশ্য
ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি অনেকগুলো ম্যাচ।
শীর্ষ রান সংগ্রাহকের তালিকাটা একটু
দেখে নেয়া যাক। রান সংগ্রহে পিছিয়ে না থাকলেও স্ট্রাইক রেটে বিদেশীদের চেয়ে ঢের
পেছনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। গতকাল ফাইনাল ম্যাচের আগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ
সংগ্রাহক মুশফিক। তার স্ট্রাইক রেট ১৪৭.৩৩। রান করার দিক থেকে সেরা পাঁচে আছেন
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ইমরুল কায়েস। ১৩ ম্যাচে ৪৯.১১ গড়ে ৪৪২ রান নিয়েছেন
তিনি। তার স্ট্রাইক রেট ১৩২.৩৩। পাশাপাশি ফাইনালের আগ পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ
সংগ্রহকারী রাইলি রুশোর স্ট্রাইক রেট ১৫৬.৩১। তিনশোর্ধ্ব রান করা ব্যাটসম্যানদের
মধ্যে বাংলাদেশের একজনও দেড়শর ওপর স্ট্রাইক রেট রাখতে পারেননি।
বোলিংয়ের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার।
উইকেট শিকারে পিছিয়ে না থাকলেও বলার মতো ইকোনমি রেট কারোরই নেই। ফাইনালের আগ
পর্যন্ত উইকেট শিকারের দিক থেকে সবার উপরে রংপুর রেঞ্জার্সের মুস্তাফিজুর রহমান ও
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের রুবেল হোসেন। মুস্তাফিজ ১২ ম্যাচে শিকার করেছেন ২০
উইকেট। আর রুবেল সমানসংখ্যক উইকেট পেয়েছেন ১৩ ম্যাচে। মুস্তাফিজের ইকোনমি ৭.০১। আর
রুবেলের ৭.৩১। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ওভারপ্রতি ৭-এর নিচে রান দিয়েছেন এমন
একজনও নেই। বিদেশী বোলারদের মধ্যে প্রতি ওভারে গড়ে সাতের নিচে তো বটেই একাধিক জনরা
দিয়েছেন ৬-এরও নিচে। ১২ ম্যাচে ১৫ উইকেট পেয়েছেন আফগান স্পিনার মুজিব উর রহমান।
কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের এ স্পিনারের ইকোনমি মোটে ৫.০৬। ফাইনালের আগে রাজশাহী
রয়্যালসের হয়ে খেলা পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ ইরফানের ইকোনমি ৫.৭৪। তার ঝুলিতে ১১
ম্যাচে ১৩ উইকেট। গতকাল ম্যাচ খেলার আগে খুলনা টাইগার্সের পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার
মোহাম্মদ আমিরের ইকোনমি ৬.৯০।
ক্রিকেটে, বিশেষ
করে টি২০ ক্রিকেটে পরিসংখ্যানের বাইরে আরো একটা বিষয় থাকে। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে
দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে ম্যাচকে নিজেদের অনুকূলে রাখা। কিংবা বিরূপ
পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত মুনশিয়ানা দেখিয়ে ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দেয়া। এ জায়গাটিতে
বিদেশীদের সঙ্গে মোটেও পাল্লা দিতে পারেননি আমাদের ক্রিকেটাররা। ফাইনালে ওঠার দুটো
ম্যাচ আবারো স্মরণ করা যাক। প্রথম কোয়ালিফায়ারে রাজশাহীকে একাই শেষ করে দেন
পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার আমির। মাত্র ১৫৮ রানের পুঁজি নিয়েও ম্যাচে খুলনা জিতেছে ২৭
রানের ব্যবধানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান খরচায় ৬ উইকেট তুলে নেন আমির। দ্বিতীয়
কোয়ালিফায়ারে খাদের কিনারে থাকা দলকে একাই জেতান ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার আন্দ্রে
রাসেল। চট্টগ্রামের বিপক্ষে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে একটা পর্যায়ে মাত্র ১৮ বল থেকে
রাজশাহীর প্রয়োজন পড়ে ৩৭ রানের। শেষ ১২ বলে এ সমীকরণ দাঁড়ায় ৩১ রানের। হাতে মাত্র
২ উইকেট। এ জটিল সমীকরণ অনায়াসেই মিলিয়ে ফেললেন রাসেল। মাত্র ২৪ বলের ইনিংসে
অপরাজিত থাকলেন ৫৪ রানে। ২ বল হাতে রেখেই জয় তথা ফাইনালে পৌঁছে গেল রাজশাহী।
সাত-সাতটি আসরের পরও টি২০ স্পেশালিস্ট বের
করতে পারেনি বাংলাদেশ। আর তাই বিপিএল আয়োজনের সার্থকতা কোথায় সে প্রশ্নটির কোনো
উত্তরও মিলছে না।