মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে
স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার বেশ উৎসবমুখর পরিবেশেই শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন বিচার। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের ভাগ্য
নির্ধারণে শুরুতেই নিজেদের ডেস্কে দাঁড়িয়ে পক্ষপাতহীন বিচারের প্রতিজ্ঞা করেন
সিনেটররা। তবে ট্রাম্পের দলের
(রিপাবলিকান) সিনেট সদস্যরা শুরু থেকেই তার
বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির প্রমাণ চাপা দিতে মরিয়া হয়ে আছেন। তারা চাইছেন, যেকোনোভাবেই
হোক ট্রাম্প যেন অভিশংসনের হাত থেকে বেঁচে যান।
রিপাবলিকান সিনেট সদস্যদের এমন চাওয়ার
পেছনে কারণ কী হতে পারে? এমন নয় যে তারা সবাই ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পের একান্ত অনুসারী কিংবা
বশংবদ। কারণ তাদের অনেকেই এর আগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট
হিসেবে যোগ্য নন। তার পরও অভিশংসন প্রশ্নে তারা ট্রাম্পের পক্ষ নিচ্ছেন মূলত বিশেষ
একটি কারণে। তাদের এ পক্ষপাতের মূলে রয়েছে ট্রাম্প এবং তাদের নিজেদের ভোটারদের ভয়।
তাদের এ ভয় একেবারেই অমূলক নয়। কারণ ট্রাম্পের মতোই তার দলের বহু সদস্যের ভোটার
কিংবা বাস্তবতা নিয়ে কোনো ধারণা নেই।
সম্প্রতি কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ে
এক জরিপ হয়। জরিপে অংশ নেয়া ৬৪ শতাংই জানান,
তারা ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের
যুদ্ধাভিযানের বিরুদ্ধে। অথচ বহু রিপাবলিকান ভাবছে, আট কোটি জনসংখ্যার মুসলিম দেশটিতে
তাদের অস্থিরমতি ও অপরিণামদর্শী নেতার
(ট্রাম্প)
পক্ষে যুদ্ধ পরিচালনা করা ইতিবাচক হবে। তাছাড়া
অধিকাংশ রিপাবলিকান কর্মকর্তাদের আচরণ গণতন্ত্রবিরোধী। তারা রীতিনীতির ধার ধারেন
না, নির্বাচনে
কারসাজি করেন, দমিয়ে রাখেন ভোটারদের এবং ঔদাসীন্য দেখান যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে
রাশিয়ান হস্তক্ষেপের বিষয়ে। আর তাদের এ আচরণের মূলে রয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচনে
পরাজয়ের সমূহ সম্ভাবনার ভয়।
ভ্রান্ত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার এ
প্রবণতা রিপাবলিকানদের দিন দিন বাড়ছেই। যেমন ৩৭ শতাংশ রিপাবলিকান মনে করছেন, বৈশ্বক
উষ্ণতা যে বাড়ছে, সে বিষয়ে অকাট্য কোনো প্রমাণ নেই। এ বিষয়ে সংশয়ের কথা জানান ১৮ শতাংশ
রিপাবলিকান। একই সঙ্গে রিপাবলিকানরা এও মনে করেন যে যুক্তরাষ্ট্রে এভাঞ্জেলিক
খ্রিস্টানরা মুসলিমদের মতোই বৈষম্যের শিকার। একইভাবে দলটির বড় একটি অংশ বিশ্বাস
করে, যুক্তরাষ্ট্রের
শ্বেতাঙ্গরা কালোদের মতোই বৈষম্যের শিকার হয়। তাদের মতে, অনেক
ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গরা বৈষম্যের শিকার হয় আরো বেশি।
এ অবস্থায় রিপাবলিকানরা যতদিন
রাজনৈতিক ক্ষমতায় থাকবে, যতদিন তারা ডানপন্থী অপপ্রচার চালাবে, ততদিন তারা বাস্তবে পা রাখবে—এমন বিশ্বাসের
সুযোগ খুব কমই আছে। একই সঙ্গে তারা যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে, এমন
আশা পোষণও বোকামি হবে।
২০১২ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী থমাস মান ও
নরম্যান অর্নস্টেইন তাদের বইয়ে রিপাবলিকান পার্টি নিয়ে বলেন, তারা
মতাদর্শগতভাবে চরমপন্থী ও আপসের বিষয়ে ঘৃণাপরায়ণ। তারা প্রমাণ, বিজ্ঞান
ও সত্যের দ্বারাও নিজেদের ভ্রান্ত মত থেকে সরে আসেন না। একই সঙ্গে তারা রাজনৈতিক
বিরোধীদের বৈধতাকেও অস্বীকার করেন।
তার পরও আশা করা হচ্ছে, সংখ্যায়
অল্প হলেও হয়তো কয়েকজন রিপাবলিকান তাদের প্রেসিডেন্টের অনৈতিকতার বিরুদ্ধে উঠে
দাঁড়াবেন। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যে নতুন রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছেন, তারা
সেই সংকট দূর করতে এগিয়ে আসবেন। আর সম্ভবত ট্রাম্পের অভিশংসন এ পথে তাদের সহায় হতে
পারে।
ব্লুমবার্গ থেকে ভাষান্তরিত