বৈরী আবহাওয়ায় সুন্দরবনের চরে শুঁটকি
উৎপাদন কমে গেছে। এতে বন বিভাগের রাজস্ব আয়েও টান পড়েছে। জেলে ও ব্যবসায়ীরা
জানিয়েছেন, মৌসুমের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাত, মধ্যভাগে এসে অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি ও
তীব্র শীত, আবহাওয়ার এমন প্রতিকূলতায় সাগরে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে মাছ পাওয়া যাচ্ছে
না। এতে শুঁটকি উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। তবে বন কর্মকর্তারা বলছেন, আবহাওয়া
অনুকূলে এলে মৌসুমের বাকি সময়ে এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা যাবে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবর
থেকে মার্চ পর্যন্ত সুন্দরবনের দুবলার চরসহ বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন চরে মোংলা, রামপাল, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ
দক্ষিণ উপকূলের প্রায় ২০ হাজার জেলে অস্থায়ী বসতি স্থাপন করে মাছ আহরণ ও শুঁটকি
তৈরি করেন। নির্ধারিত পরিমাণ রাজস্ব পরিশোধ করে বন বিভাগ থেকে পাস-পারমিট নিয়ে
এসব জেলে সাগরে মাছ আহরণ করেন। পরে তারা সমুদ্র থেকে আহরিত লইট্যা, ছুরি, ভেটকি, কোরাল, চিংড়ি, রূপচাঁদাসহ
বিভিন্ন মাছ মাচায় শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করেন। অনেকে চর থেকেই শুঁটকি বিক্রি করে
দেন। কেউ বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সে শুঁটকি দেশের বিভিন্ন
প্রান্ত ও বিদেশে রফতানি হয়।
এবার সুন্দরবনের পাঁচটি চরে ১ হাজার
৪০টি ঘর স্থাপন করে জেলেরা শুঁটকির জন্য মাছ আহরণ করছেন। তাদের সঙ্গে আছেন ৫৩টি
ডিপো মালিক। শুঁটকি উৎপাদন থেকে এবার বন বিভাগ ৩ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য
নির্ধারণ করেছে। গত মৌসুমে রাজস্ব আয় হয়েছিল আড়াই কোটি টাকার বেশি।
সূত্র জানায়, বৈরী
আবহাওয়ায় এবার মৌসুমের শুরু থেকেই শুঁটকি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে রাজস্ব আয়
কমে যাওয়ায় লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে এবার
রাজস্ব আয় গত মৌসুমের চেয়ে কম হতে পারে। চলতি মৌসুমে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ১ কোটি ৩
লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। অথচ গত মৌসুমের একই সময়ে আয় হয়েছিল ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
জেলেরা জানান, এবার
মৌসুমের শুরুর দিকে নভেম্বরে সুন্দরবন উপকূলে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানে। এতে
শুঁটকি উৎপাদনে বড় ধরনের ছেদ পড়ে। মাঝামাঝিতে এসে অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি ও তীব্র শীত
মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এতে মাছ আহরণ কমে যাওয়ার পাশাপাশি মাচায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ফলে শুঁটকি উৎপাদন কমে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
দুবলার চরের বহরদার পঙ্কজ রায় বলেন, ঘূর্ণিঝড়
বুলবুল আঘাত হানার পর থেকে সাগরে তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রচণ্ড শীতের সঙ্গে
মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। যার কারণে সাগরে মাছ ধরা যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে
আমাদের পুঁজি হারাতে হবে।
নজরুল ইসলাম নামে এক জেলে বলেন, বৈরী
আবহাওয়ার কারণে মাছ আহরণ কমে গেছে। আবার যে মাছ পাচ্ছি, তার
আকার-আকৃতিও
ছোট। এ নিয়ে কম-বেশি সবাই বিষণ্ন। শুঁটকির জন্য আপনজন ছেড়ে প্রায় ছয় মাসের জন্য সাগরে
আসতে হয়। এত কিছুর পরও যদি শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয়, তাহলে
এর থেকে কষ্টের কিছু নেই।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন
কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন,
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ও শীতের কারণে জেলেরা এবার মাছ
কম পাচ্ছেন। এতে আমাদের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী দুই
মাসে জেলেরা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন।
এ ব্যাপারে দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের
সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন,
প্রতিবার শুঁটকি মৌসুমে জেলেদের নিজেদের একটি
লক্ষ্য থাকে। এ বছর লক্ষ্য কোনোভাবেই পূরণ হবে না। মৌসুমের বাকি দিনগুলোয় যদি
আবহাওয়া ভালো থাকে এবং মাছ বেশি পাওয়া যায়,
তাহলে কিছুটা পুষিয়ে ওঠা সম্ভব।