প্রকাশ্যে আদালত ভবন ভাঙা হলেও আসামি অজ্ঞাত!

বণিক বার্তা প্রতিনিধি বরিশাল

বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ পৌর এলাকায় অবস্থিত একটি আদালত ভবন প্রকাশ্যে ভেঙে ফেলেছে প্রভাবশালী একটি মহল। ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা এ আদালত ভবনটি গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ্যে ভাঙা হলেও বরিশাল গণপূর্ত বিভাগ ৬ জানুয়ারি অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেছে।

বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট মনসুর আহমেদ জানান, প্রকাশ্যে আদালত ভবন ভাঙায় জেলা জজও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় এক প্রভাবশালীর নির্দেশে মেহেন্দীগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনির জমাদ্দার এটি ভেঙেছেন।

স্থানীয়রা জানায়, ভবনের পাশেই উপজেলা পরিষদ। কিন্তু ভাঙার সময় উপজেলা প্রশাসন কিংবা পুলিশ প্রশাসন থেকে কোনো বাধা দেয়া হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভবনটি ভাঙার ক্ষেত্রে কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। সরকারি অনুমতিও নেয়া হয়নি। পৌনে ২০০ বছর আগের ঐতিহাসিক এ আদালত ভবন ভাঙায় প্রশাসন ছিল নিশ্চুপ। ভবনের ভেঙে ফেলা অংশ কাউন্সিলর মনিরের ঠিকাদারি কাজের নির্মাণাধীন সড়কে ফেলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জেরাল্ড অলিভার গুডা বলেন, মেহেন্দীগঞ্জে আদালত ভবন ভাঙার ঘটনায় প্রথমে জিডি করা হয়েছে। পরে ৬ জানুয়ারি উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বাদী হয়ে মেহেন্দীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়েছে। সার্ভে ভ্যালু অনুযায়ী ভবনটির মূল্য ২০ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রকাশ্যে ভবন ভাঙার ঘটনায় কেন অজ্ঞাত আসামি করা হলো এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, মেহেন্দীগঞ্জ বিচ্ছিন্ন এলাকা হওয়ায় এ বিষয়ে তারা অবগত নন। তবে আদালত ভবন ভাঙা বিধিসম্মত হয়নি বলে জানান তিনি।

বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট মনসুর আহমেদ বলেন, গণপূর্তের মামলায় অজ্ঞাতনামাদের কেন আসামি করা হয়েছেবিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। প্রকাশ্যে আদালত ভবনটি ভাঙা হয়েছে। কার নির্দেশে ভেঙেছে, কারা ভেঙেছে তা ইউএনও, উপজেলা পরিষদ, স্থানীয় লোকজন দেখেছেন। এ ঘটনায় মেহেন্দীগঞ্জ আদালতের বিচারক জিডি করেছেন।

তিনি বলেন, ১৮৫৬ সালে ব্রিটিশ আমলে ওই আদালতে মুনসেফ চৌকি বসত। ১৯৮৫ সালেও এখানে আদালতের কার্যক্রম চলে। এটি পরিত্যক্ত ঘোষণাও হয়নি। অথচ স্থানীয় কাউন্সিলর মনির জমাদ্দারের নেতৃত্বে আদালত ভবন গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মনির মেহেন্দীগঞ্জের একজন জনপ্রতিনিধির নির্দেশে এ সরকারি ভবনটি কোনো অনুমতি ছাড়াই ভেঙে ফেলেছেন।

বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর জানান, আদালত ভবন ভাঙায় গণপূর্ত বিভাগ তাকে চিঠি দেয় মামলা তৈরির জন্য। তিনি বিষয়টি জেলা জজ, ডিসি ও মন্ত্রী পদমর্যাদার আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে অবহিত করেন। পরে মামলার ড্রাফট প্রস্তুত করেন। তাতে মেহেন্দীগঞ্জ পৌর কাউন্সিলর মনির জমাদ্দারকে আসামি উল্লেখ করা হয়। কিন্তু গণপূর্ত বিভাগ রহস্যজনকভাবে তাকে আর কিছু জানায়নি। আদালত ভবন ভাঙার ঘটনায় জেলা ও দায়রা জজের পক্ষ থেকে জিডিও করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, আদালত তো ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারেন। একটি সরকারি ভবন নিয়ম না মেনে ভাঙায় তিনিও ক্ষুব্ধ। এর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া দরকার।

এ বিষয়ে মেহেন্দীগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও উপজেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি মনির জমাদ্দার জানান, আদালত ভবন কারা ভেঙেছে তা তিনি জানেন না। উপজেলা পরিষদের নাকের ডগায় ভবনটি ভাঙা হয়েছে। এ ঘটনা তো ইউএনও, প্রকৌশলী, ওসির অজানা নয়। তার এলাকার মধ্যে ভবন হলেও তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না।

মেহেন্দীগঞ্জ থানার ওসি আবদুর রহমান জানান, এখনো কাউকে আটক করা যায়নি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিযুষ চন্দ্র দে জানান, আদালত ভবন ভাঙার বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে তাকে ওসি জানিয়েছেন যে আদালত ভবন ভাঙার ঘটনায় গণপূর্ত মামলা করেছে। ভবনটি ভাঙার ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়েছে কিনা তা ফাইল না দেখে বলা যাবে না। তাছাড়া যেহেতু এ ঘটনায় মামলা হয়েছে, সেহেতু উপজেলা প্রশাসনের কিছুই করার নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন