তিন দশকের সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি

২০১৯ সালে চীনের ৬.১% প্রবৃদ্ধি অর্জন

বণিক বার্তা ডেস্ক

২০১৯ সালে চীনের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ, যা গত ৩ দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস (এনবিএস) খবর সিনহুয়া ও রয়টার্স।

১৯৯০ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ৬ দশমিক ১ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি পেয়ে আসছে চীন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছিল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ এ অর্থনীতি।

২০১৯ সালে ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল চীন সরকার। সেই হিসেবে অর্জিত প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যের মধ্যে ছিল। কিন্তু দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও বাণিজ্য উত্তেজনার ফলে গত বছরের অর্জিত প্রবৃদ্ধি ছিল তিন দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এনবিএসের উপাত্তে দেখা গেছে, সদ্য বিদায়ী বছরে চীনের জিডিপির আকার ছিল ১৪ দশমিক ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার। ওই বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে চীনে, যা তৃতীয় প্রান্তিকের সমান। এর আগে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং প্রথম প্রান্তিকে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল দেশটিতে।

ওয়াশিংটনে চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী লিয়ু হি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের দুদিন পরই জিডিপি উপাত্ত প্রকাশ করল এনবিএস। প্রথম তিন প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ধীরে ধীরে হ্রাস পেলেও অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল ছিল বলে দাবি চীনের পরিসংখ্যান ব্যুরোর। এনবিএসের কমিশনার নিং জিজে বলেন, বছরব্যাপীই প্রবৃদ্ধি মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল এবং ২০২০ সালেও এমনটা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন তারা।

বেইজিংয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জিজে আরো বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য প্রবৃদ্ধিতেও যে শ্লথগতি বিরাজ করছে, সে বিষয়েও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এখন অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা ও ঝুঁকির অনেকগুলো উৎস রয়েছে।

২০১৯ সালে চীনের মোট জিডিপি ছিল ৯৯ দশমিক শূন্য ৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বা ১৪ দশমিক ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার। মোট জিডিপির অর্ধেকেরও বেশি অবদান ছিল সেবা খাতের। ২০১৯ সালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক নির্দেশক দেশটির মূল্য সংযোজিত শিল্পোৎপাদন পূর্ববর্তী বছরের ৬ দশমিক ২০ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে গত ডিসেম্বরে চীনের শিল্পোৎপাদন প্রথম ১১ মাসের চেয়ে বেড়ে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত নভেম্বরের চেয়ে শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি।

বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ, তাপবিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি খাতে বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ, যা তিনটি প্রধান খাতের মধ্যে সবচেয়ে চাঙ্গা ছিল। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের উৎপাদন বছরওয়ারি ৬ শতাংশ বেড়েছে, তবে মাইনিং খাতে উত্তোলন বেড়েছে ৫ শতাংশ।

এছাড়া গত মাসে খুচরা বিক্রি ৮ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে পূর্বাভাস ছিল ৭ দশমিক ৮০ শতাংশের। আবাসন খাতে গত বছর বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ, যা প্রথম ১১ মাসের ১০ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থেকে কিছুটা কম।

এনবিএস আরো জানায়, গত বছর চীনে স্থিতিশীল কর্মসংস্থান ছিল এবং নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সক্ষম হয়েছে অর্থনীতিটি। গত বছর শহরাঞ্চলে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ১ কোটি ৩৫ লাখ ২০ হাজার, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ১০ লাখ। এ নিয়ে টানা সাত বছর শহরাঞ্চলে ১৩ মিলিয়ন কর্মসংস্থান হলো চীনের। ২০১৯ সালে শহরাঞ্চলে নিবন্ধিত বেকারত্ব হার ছিল ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ, যা সরকারের ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ পূর্বাভাসের চেয়ে কম।

বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরে বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধিতে চীনের কারখানা ও রফতানিকারকদের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখা দিতে পারে ২০২০ সাল। তবে চুক্তি বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা, অভ্যন্তরীণ আর্থিক অস্থিতিশীলতা এখনো দেশটির অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি হিসেবে থাকছে বলে ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে।

অর্থনৈতিক প্রণোদনার জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ সরবরাহ করতে ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বাণিজ্যযুদ্ধে বিরতি ও অতিরিক্ত প্রণোদনা প্যাকেজ গ্রহণ সত্ত্বেও রয়টার্সের অর্থনীতিবিদরা ২০২০ সালের জন্য ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস দিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন