২৬ বছরের পুরনো
বাণিজ্য চুক্তি নর্থ অ্যামেরিকান ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (নাফটা)
অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন
সিনেট। অনুমোদিত চুক্তিটিতে শ্রম ও গাড়ির সরঞ্জামসংশ্লিষ্ট আইনে জোর দেয়া হয়েছে।
তবে এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তির (ইউএসএমসিএ) বার্ষিক বাণিজ্যপ্রবাহ পূর্ববর্তী ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারে
অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। খবর রয়টার্স।
ব্যাপক
সংস্কারের পর গত ১৯ ডিসেম্বর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয় ইউএসএমসিএ
প্রস্তাবটি। এরপর গত বৃহস্পতিবার প্রস্তাবটির ওপর সিনেটে ভোট হয়। এতে প্রস্তাবের
পক্ষে ৮৯ ও বিপক্ষে ১০ ভোট পড়ে। এখন এটি আইনে পরিণত হওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট
ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রসঙ্গত, চীনের সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের বাণিজ্য চুক্তি সইয়ের একদিন আগে
ও সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরুর পরের দিন প্রস্তাবটি সিনেটে পাস হয়।
বহু কাঙ্ক্ষিত
প্রথম পর্যায়ের চীন-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার খবরে
মার্কিন এসঅ্যান্ডপি ৫০০ শেয়ার সূচক বৃহস্পতিবার ৩ হাজার ৩০০ পয়েন্ট বাড়ে।
অন্যদিকে চাঙ্গা ভাব দেখা দিয়েছে দেশটির প্রকৃত খুচরা বিক্রি ও মরগান স্ট্যানলির
আয়ে।
সিনেটে নাফটা
পাস হওয়াকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বড় অর্জন বলে বর্ণনা করেছেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী
স্টিভেন মানিউচিন। এটি নিজেদের বড় বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে পুরনো চুক্তি ঢেলে
সাজানোর ক্ষেত্রে ট্রাম্পের প্রচেষ্টার ফল বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া এটি দেশটির
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চাঙ্গা করবে বলেও আশা করা হচ্ছে। মানিউচিন বলেন, ঐতিহাসিক এ চুক্তির নবায়ন শুধু কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে
আমাদের বাণিজ্য সম্পর্কে আধুনিক ও ঢেলে সাজাবে না। বরং এটি আমাদের অর্থনৈতিক
প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান বাড়াবে। এছাড়া এটি কৃষক, শ্রমিক ও ম্যানুফ্যাকচারারদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের
সরবরাহ নিশ্চিত করবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে চীনের
সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি ও ইউএসএমসিএ পাস দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি)
প্রবৃদ্ধি ৫০ থেকে ৭৫
পয়েন্ট বাড়াতে পারে বলে ফক্স নিউজে মন্তব্য করেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী। অন্যদিকে
মার্কিন সিনেটে চুক্তির অনুমোদনে নিজেদের অর্থনীতির জন্য সুখবর বলে জানিয়েছেন
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদোর। এছাড়া এ চুক্তির ফলে
দেশটিতে বিনিয়োগ বেড়ে যেতে পারে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। তবে নাফটায় সই
করলেও এখনো অনুমোদন করেনি কানাডা। কার্যকর ও প্রতিস্থাপন করার জন্য দেশটির সরকারকে
তা অনুমোদন করতে হবে। তিন দেশের শীর্ষ কর্মকর্তা চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন ২০১৮
সালের সেপ্টেম্বরে।
উল্লেখ্য, নাফটা ঢেলে সাজানো ছিল ট্রাম্পের ২০১৬ সালের নির্বাচনী
প্রচারণার অন্যতম প্রতিশ্রুতি। পুরনো চুক্তির আওতায় মেক্সিকোর নিম্ন মজুরির কারণে
কয়েক হাজার মার্কিন কারখানা কর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ টাম্পের। এমন
পরিস্থিতিতে চুক্তিটি ঢেলে সাজাতে মার্কিন কংগ্রেস টালবাহানা করলে একতরফাভাবে তা
বাতিলেরও হুমকি দেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন হুমকি অনিশ্চয়তায় ফেলেছিল
দেশটির ব্যবসায়ী ও নতুন বিনিয়োগকে।
যুক্তরাষ্ট্রে ১
কোটি ২৫ লাখ শ্রমিকের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন এএফএল-সিআইও মনে করছে, নাফটার কারণে মেক্সিকোতে প্রায় ৮ লাখ ৫১ হাজার ৭০০ কর্মী
চাকরি হারিয়েছে।
২০১৮ সালে
মেক্সিকোর সঙ্গে মার্কিন পণ্য বাণিজ্যের ঘাটতি দাঁড়ায় ৮ হাজার ৭০ কোটি ডলারে। তবে
১৯৯৩ সালে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল ১৭০ কোটি ডলার।
অন্যদিকে চুক্তিটির কারণে ২০১৭ সালে দেশ তিনটির বাণিজ্য চার গুণে পৌঁছে। সালটিতে
দেশ তিনটির বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার।