ধনীরা গরিবদের চেয়ে এক দশক বেশি সুস্থ থাকে

ফিচার ডেস্ক

পুরো পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেও দিন দিন ধনী ও গরিবের মধ্যে আয়ের বৈষম্য বাড়ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধনীরা আরো বেশি ধনী হচ্ছে, অন্যদিকে গরিবরা আরো গরিব হচ্ছে। আর এ আয়বৈষম্য প্রভাব পড়ছে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও। সম্প্রতি বড় একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, কম আয়ের মানুষ বা গরিবদের তুলনায় ধনী ব্যক্তিরা গড়ে নয় বছর বেশি সময় স্বাস্থ্যবান ও প্রতিবন্ধকতামুক্ত জীবনযাপন করে। কয়েক বছর আগে গবেষণায় উঠে আসা অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে আয়ুর তারতম্য হওয়ার বিষয়টি এ সমীক্ষার মাধ্যমে আরো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

গবেষকরা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষের ডাটা বিশ্লেষণ করেছেন। বিশ্লেষণে তারা বার্ধক্যজনিত সমস্যা বা রোগে ভুগতে শুরু করার আগে যেমন বিছানা থেকে একাই উঠতে পারা বা নিজের জন্য রান্না করতে পারার মতো অবস্থায় কত বছর সুস্থভাবে বেঁচেছিলেন, এমন বিষয়গুলো সন্ধান করেছেন।

গবেষণা দলটি আবিষ্কার করেন, ধনী ব্যক্তিরা শারীরিক অসুবিধার সম্মুখীন হওয়ার আগে প্রায় অতিরিক্ত এক দশক উপভোগ করেছে। আর এর বৃহত্তম আর্থসামাজিক কারণ হলো সম্পদ। ৫০ বছর বয়সের পর ধনী একজন পুরুষ যেখানে আরো ৩১টি স্বাস্থ্যকর বছর আশা করতে পারে, সেখানে তুলনামূলক কম সম্পদের অধিকারী একজন পুরুষ কেবল ২২ থেকে ২৩ স্বাস্থ্যকর বছর আশা করতে পারে। নারীর ক্ষেত্রেও ধনী-গরিবের মধ্যে সুস্থ থাকার ব্যবধান প্রায় একই। ৫০ বছরের পর একজন ধনী নারী আরো ৩৩ বছর স্বাস্থ্যকর জীবন উপভোগ করতে পারলেও দরিদ্র একজন নারী পারছে ২৪ বছর।

গবেষণা প্রবন্ধটির প্রধান লেখক ও ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ পাওলো জ্যানিনোট এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, যদিও আয়ু স্বাস্থ্যের একটি কার্যকর সূচক, তবে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাত্রার মানও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর জীবন প্রত্যাশা পরিমাপের মাধ্যমে আমরা স্বাস্থ্যের অনুকূল অবস্থায় বা প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই জীবনের কত বছর ব্যয় করছি, তার একটা অনুমান পেতে পারি।

ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একদল গবেষক এ সমীক্ষা পরিচালনা করেছেন। যদিও মানুষের সুস্থ বা দীর্ঘ জীবন পাওয়ার ক্ষেত্রে সম্পদ কী ধরনের ভূমিকা রাখে; এর উত্তর থেকে এ সমীক্ষা এখনো অনেক দূরে। গবেষকরা জীবন মানের চেয়ে বরং প্রত্যাশার দিকে বেশি নজর দিয়েছেন।


২০১৬ সালের যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ধনী পুরুষরা ৮৭ দশমিক ৩ বছর বেঁচে থাকার প্রত্যাশা করতে পারে, যা কম আয়ের মানুষের তুলনায় ১৫ বছর বেশি। এছাড়া আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোর তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের পুরুষরা বেশি দিন বেঁচে থাকে। অন্যদিকে ধনী নারীরা ৮৯ বছর বেঁচে থাকার প্রত্যাশা করে, যা দরিদ্র নারীর চেয়ে পুরো এক দশক বেশি।

২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণায় উঠে আসে, ধনী মানুষের তুলনায় দরিদ্র মানুষ এক দশক আগেই মৃত্যুবরণ করছে। দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আয়ুর ফারাক দীর্ঘ হচ্ছে। ধনীদের আয়ু বাড়ছে, তারা দীর্ঘ সুস্থ জীবন পাচ্ছে। কিন্তু গরিবদের সেভাবে আয়ু বাড়ছে না। তাদের বেশির ভাগই অল্প বয়সে মারা যাচ্ছে। ধনী পরিবারে জন্ম নেয়া শিশুরা অপেক্ষাকৃত গরিব পরিবারে জন্ম নেয়া শিশুদের চেয়ে গড়ে সাড়ে আট বছর বেশি বাঁচে।

নতুন গবেষণাটির জন্য বার্ধক্যজনিত দুটি সমীক্ষা থেকে ডাটা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি যুক্তরাজ্য থেকে, যেখানে উত্তরদাতা ছিল ১০ হাজার ৭৫৪ জন এবং অন্যটিতে ছিল ১৪ হাজার ৮০৩ জন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরদাতা। গবেষণার ফলে দুই দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি।

গবেষক পাওলো জ্যানিনোট সমীক্ষাটির উপসংহারে লিখেছেন, স্বাস্থ্যকর জীবন প্রত্যাশায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য উভয় দেশেই ব্যবধান বিদ্যমান এবং তা প্রায় একই রকমের। উভয় দেশেই স্বাস্থ্যবৈষম্য হ্রাসের চেষ্টা করা উচিত। এক্ষেত্রে সুবিধা বঞ্চিত মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করা যায়।

সাধারণভাবে বৈশ্বিক জীবন আয়ু প্রত্যাশার সর্বশেষ ডাটা পাওয়া যায় ২০১৬ সালের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, প্রত্যাশায় বৈশ্বিক গড় আয়ু ৭২ বছর। ২০০০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী গড় আয়ু বেড়েছে ৫ দশমিক ৫ বছর। ১৯৬০-এর দশকের পর এটাই দ্রুততম বৃদ্ধি।

 

সূত্র : সিএনএন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন