আমাদের দেশে শিক্ষা নিয়ে ধারণা স্পষ্ট
নয়। আমাদের জাতীয় পরিকল্পনাপ্রণেতা,
রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অংশীজনদের শিক্ষা সম্পর্কে
দিকনির্দেশনা প্রদানের প্রয়াস সত্ত্বেও তাকে পূর্ণাঙ্গ বলা চলে না। আমাদের দেশে
এসব নিয়ে কিছু প্রচলিত ধারণা রয়েছে,
যা ভুল। আসলে অজানাকে জানার সঙ্গে সঙ্গে পছন্দসই
জীবিকার জন্য কাম্য দক্ষতা অর্জন ও সুনাগরিকের দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে
যোগ্যতা লাভের জ্ঞান ও প্রশিক্ষণই শিক্ষা। আমাদের সমাজে আরেকটি প্রচলিত ধারণাও
ভুল। শিক্ষিত নামে পরিচিত ব্যক্তি,
তিনি শিক্ষক অথবা অভিভাবক যা-ই হোন না কেন, পণ্ডিত
হওয়ার দরকার পড়ে না। পাণ্ডিত্যের সঙ্গে শুধু বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান থাকলেও চলে না।
ব্যতিক্রমী বিশেষজ্ঞ জ্ঞান ও গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে নিবিড় সংযোগ থাকতে হয়।
আবার উদ্দেশ্যহীন শিক্ষা আজকের পৃথিবীতে শিক্ষা হিসেবে বিবেচ্য নয়। আপনি শিখবেন
কেন, অভিভাবক
এর জন্য টাকা ঢালবেন কেন, রাষ্ট্র অর্থায়ন করবে কেন,
সেটা সুনির্দিষ্ট হওয়া দরকার। যিনি শিক্ষা নেবেন
এবং যিনি শিক্ষা দেবেন উভয়ের কাছেই সেজন্য লক্ষ্যটা স্পষ্ট হওয়া উচিত। দ্বিতীয়ত, আগে
বলা হতো শিক্ষকতা একটি মহান ব্রত। এটা সঠিক নয়। শিক্ষক আজকে জমিদারনন্দন নন যে তার
বাড়িতে খাওয়া-পরার চিন্তা নেই,
তিনি অকাতরে জ্ঞান বিতরণ করবেন নিছক
চিত্তবিনোদনের জন্য। বাস্তবতা হলো,
একজন শিক্ষক উপার্জিত অর্থ দিয়ে শুধু সংসারের
ব্যয় নির্বাহ করতে চান না। একই যোগ্যতার অধিকারী সমাজের অন্যান্য পেশার মানুষের
মতো জীবনযাপন করতে চান। অন্যদের মতো সমাজে মাথা উঁচু করে থাকতে চান। বাজার থেকে
পছন্দের জিনিসটি কিনতে চান। তার পরিবারের সদস্যরাও গর্বিত মানুষের মতো সমাজে
ওঠাবসা করতে চায়। তৃতীয়ত, আগে বলা হতো অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে একজন শিক্ষক ভালো শিক্ষক হয়ে
থাকেন। কিন্তু একথা এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। সেজন্য বর্তমানে শিক্ষককে শুধু একবারের
জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলে চলে না। তিনি যে বিষয়টি পড়াবেন, সে
বিষয়টি সম্পর্কে তার ধারণা যুগোপযোগী,
আন্তর্জাতিক মানের হতে হয়। যেহেতু শিক্ষা
প্রতিনিয়ত গতিশীল, সেজন্য শিক্ষককে সে গতির সঙ্গে নিজেকে উপযোগী ও মানানসই করে নিতে হয়।
শিক্ষকের অব্যাহত প্রশিক্ষণ এ কারণে এত গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে শ্রেণীকক্ষে শুধু
পাঠদান করলে চলে না। শিক্ষার্থী সে পাঠ কতটুকু গ্রহণ করতে পারছে তা যেমন পরিমাপের
যোগ্যতা শিক্ষকের থাকতে হয়,
তেমনি তাকে শিক্ষার্থীর স্বপ্নের জগৎ ও উপলব্ধির
গভীরে যাওয়ার দক্ষতাও অর্জন করতে হয়। কাজটি সুকঠিন নয়, তবে
অব্যাহত আন্তরিক প্রয়াসনির্ভর।
এবার আসে শিক্ষার সঙ্গে জীবনের সংযোগ, জীবিকা
ও মূল্যবোধের সংযোগ ও সুসমন্বয়ের প্রশ্নে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু
মনি বলেছেন, ‘আমরা এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলছি। ফলে প্রথাগত চাকরির জগৎ বদলে
যাবে। নতুন ধরনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। সে কর্মসংস্থানের জন্য এখন থেকেই
তৈরি করতে হবে কারিকুলাম। শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জন করতে হবে, দক্ষতা
বাড়াতে হবে।’ এদিকে উৎপাদনশীলতার উন্নয়নে তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে ২০২১
শিক্ষাবর্ষের জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে
‘উৎপাদনশীলতার ধারণা’ শীর্ষক অধ্যায়
সংযোজন করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে প্রণীত খসড়া কনটেন্ট এরই মধ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও
পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) পাঠানো হয়েছে। এটি এসএসসি ও দাখিল (ভোকেশনাল) পর্যায়ের
শিক্ষার্থীদের জন্য নবম-দশম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সম্প্রতি শিল্প
মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় উৎপাদনশীলতা কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ তথ্য জানানো
হয়।
চাকরি পাওয়ার পরিবর্তে উদ্যোক্তা
হওয়ার, চাকরি দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করার ধারণা আমাদের দেশে অনেকটাই নতুন। বেশির
ভাগ শিক্ষার্থীর লক্ষ্যই পড়ালেখা শেষ করে চাকরিজীবনে প্রবেশ করা। আর চাকরি করতে না
পারলে তখনই দেখা দেয় হতাশা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চাকরি না হওয়ার কারণ অভিজ্ঞতা আর
দক্ষতার অভাব। এখন অনেকেই বলেন,
চাকরিতে না ঢুকেই কীভাবে অভিজ্ঞতা অর্জন সম্ভব? সম্ভব, সেটি
যদি ছাত্রজীবনেই লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করতে অভ্যস্ত হওয়া যায়। পড়ালেখা শেষে চাকরি
করার বিষয়টি যতখানি না সহজ হয়,
তার চেয়ে বেশি সহায়ক হয় ছাত্রাবস্থায় লেখাপড়ায়
বিঘ্ন ঘটে না, এমন কোনো কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করা গেলে। খণ্ডকালীন চাকরি বেশকিছু
সুবিধা এনে দেয়। এ সপ্তাহে সংবাদপত্রে প্রকাশিত দুটি সংবাদ আমার বিশ্বাসের
ভিত্তিকে আরো শক্তিশালী করেছে। একটি সবজি বিক্রি করে লেখাপড়া করা ড. আল
মামুন বিসিএস ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আরেকটি দিনমজুর ও হোটেলে বয়ের কাজ করে
নাটোরে দুই ভাই কীভাবে নিজেদের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করছে তার ওপর প্রকাশিত সংবাদ।
অন্যদিকে প্রতি বছর হাজার হাজার তরুণ
উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে কর্মসংস্থান নেই,
এ অজুহাতে কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ার গড়তে বিদেশ পাড়ি
জমাচ্ছেন বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে। বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড
ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড.
ফয়সাল আহমেদ বলেছেন, ২০০০
সালে পাস করে বের হওয়া তাদের ব্যাচে ১৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে অর্ধেকই দেশের বাইরে
স্থায়ী হয়েছেন। ‘আমাদের স্টুডেন্ট এফিসিয়েন্সি
(দক্ষতা)
অনুযায়ী দেশে কাজ পাওয়া যায় না। এসব স্টুডেন্ট
বিদেশে গিয়ে মাইক্রোসফট, ইন্টেলসহ বড় বড় মোবাইল ও মোটর কোম্পানিতে চাকরি পাচ্ছে। দেশে এখন
পর্যন্ত বড় একটি মোবাইল কোম্পানি হলো না,
যেখানে আমাদের ছেলেরা নিজেদের মেধা কাজে লাগিয়ে
কাজ করবে। এসব হতাশায় দেশ ছাড়েন তারা।’ তবে দেশে কর্মসংস্থান নেই,
এমন অজুহাতে উচ্চশিক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা
বিদেশে পাড়ি জমালেও নিয়োগদাতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের ভাষ্য, ফ্যাশন
ও ডিজাইনিং, ভারী যন্ত্র পরিচালনা এবং বিপণন ও সরবরাহ চেইন ব্যবস্থাপনাসহ নানা খাতে
দেশীয় দক্ষ কর্মীর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এ ঘাটতি মেটাতেই বিদেশী কর্মী নিয়োগ দিয়ে
উন্নয়ন, উৎপাদন ও রফতানি কার্যক্রম সচল রাখতে হচ্ছে তাদের। আবার পরিকল্পনা
কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব অধ্যাপক ড.
শামসুল আলম বলেন, ‘দেশে কাজ নেই
বললেও বিদেশীরা এসে কাজ করছেন। হয়তো মনমতো কাজের অভাব আছে, তাই
বলে কাজ নেই এ ধারণা অবান্তর। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের পেছনে হাজার
হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। অথচ তারা বিদেশে চলে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে দেশপ্রেমের
অভাব রয়েছে।’
উচ্চশিক্ষা শেষে তরুণদের দেশ ছাড়ার
পেছনে স্থানীয় শ্রমবাজারের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারিকুলামের সমন্বয়হীনতাকে
অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। এছাড়া উচ্চদক্ষতার শিক্ষার্থীদের জন্য
হাইভ্যালু এডিশন ইন্ডাস্ট্রি গড়ার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন তারা। চলতি বছরের
আগস্টে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
(বিডা)
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা
ও শিল্প বণিক সমিতিকে চিঠি দিয়ে বলেছে,
দেশে বর্তমানে বিদেশী কর্মীর সংখ্যা পাঁচ লাখ
ছাড়িয়েছে। আর এসব বিদেশী কর্মী দেশ থেকে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন।
তবে উচ্চশিক্ষা শেষে বিদেশে স্থায়ী হওয়া শিক্ষার্থীর প্রকৃত সংখ্যার বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি কোনো
প্রতিষ্ঠানের কাছেই সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে ২০১৬ সালে গ্লোবাল ফ্লো
অব টারশিয়ারি লেভেল স্টুডেন্টস শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান
ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো)। সেখানে বলা হয়, প্রতি
বছর বাংলাদেশ থেকে ৬০ হাজার শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাচ্ছেন। আর
বর্তমান বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওপেন ডোরস রিপোর্টে বলা
হয়েছে, দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আট হাজারের বেশি বাংলাদেশী শিক্ষার্থী
অধ্যয়ন করছেন। এ সংখ্যা বছরে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে।
একথা শতভাগ সঠিক যে, শিক্ষার
সঙ্গে জীবন-জীবিকার, দক্ষতা ও সুনাগরিকতা অর্জনের অবিচ্ছেদ্য, অপরিহার্য সম্পর্ক রয়েছে এবং আমাদের
প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা দুটোই আছে। তবে অধুনা দেশে দেশে
একটি প্রাসঙ্গিক, তবে ভিন্নধর্মী বিতর্কের অবতারণা হয়েছে। ‘দক্ষতা প্রশিক্ষণ কেন উচ্চশিক্ষার
স্থান দখল করতে পারে না’—এ শিরোনামে হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউতে অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ-বিষয়ক প্রকাশিত
লেখা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট সৌদি লেখক,
সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ও উদ্যোগী ভাবনার
অগ্রণী ব্যক্তিত্ব ড. তাগরিদ আল-সিরাজ বলেন, উচ্চশিক্ষায় পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ বিধায় ও সময়ের চাহিদা মেটাতে না পারায়
দক্ষতার প্রশিক্ষণ উচ্চশিক্ষাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন।
অ্যামাজন, গুগল ও আইবিএমের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চশিক্ষায় উত্তীর্ণদের চেয়ে
দক্ষ, প্রশিক্ষিতদের অধিক হারে নিয়োগদানের দিকে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি
আকর্ষণ করেন। অধ্যাপক ড. তাগরিদ উপরোক্ত ক্রমবর্ধমান ধারণা মূল্যায়নের ও বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনার
ওপর জোর দিয়ে বলেন, শিল্প-বাণিজ্যের দ্রুত পরিবর্তনশীল চাহিদা পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত
উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমের অসংগতি আমাদের কাছে নতুন উপলব্ধি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
তবে তার জন্য শিল্প বাণিজ্যের কর্ণধারদের দোষ দেয়া যায় না।
বলা বাহুল্য, এটা
বিশ্বায়নের প্রাসঙ্গিকতায় একটি নতুন চ্যালেঞ্জ। তবে আমাদের পরিপ্রেক্ষিতে যা
প্রাসঙ্গিক, তা হলো বিশ্বায়নের কারণে আমরা কি শুধু ভিনদেশে এবং নিজ দেশে সুলভ
শ্রমজীবী হব? আমাদের প্রকৃতিপ্রদত্ত অপরিমেয় সম্পদ নিজেদের ব্যবহারে না লাগিয়ে
অন্যদের ভোগে অবাধে দিয়ে দেব?
প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক: আমার
দেশের প্রধান সম্পদ কোনটি? তেল, গ্যাস, না মানুষ? তার বিকাশইবা কীভাবে সম্ভব?
অনেকের মতো আমিও মনে করি, মানুষই
সে সম্পদ। কিন্তু মুখে যা বলা হয়,
তাতে বিশ্বাস কয়জনের? এ
বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের দ্বন্দ্বেই দুনিয়াজোড়া অনুন্নত অঞ্চলের মানুষ বঞ্চনার শিকার
হয়। তাদের সহজলভ্য শ্রম শোষিত,
লুণ্ঠিত হয়। সুবিধাভোগীরা তা ভোগ করে কিন্তু
মর্যাদা দেয় না। হাতুড়ি-বাটালি ঠোকাঠুকি করে সৎ উপার্জন করে যে শ্রমজীবী মানুষ, তার
সামাজিক স্বীকৃতি বা মর্যাদা কোনোটাই সেজন্য নেই। ল্যাপটপকে শিক্ষায় অপরিহার্য
উপকরণ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারলেও হাতে বই না রেখে হাতে-কলমে যন্ত্রপাতি
নাড়াচাড়া করে যে শিক্ষা দেয়া হয়,
তাকে আভিজাত্যের দাবিদার কয়জন শিক্ষা বলে মানতে
রাজি? কিন্তু এ কর্মমুখী শিক্ষা তো বদ্ধ জলাশয় নয়। বিশ্বজনীন বিস্তৃত ও
নিত্যনতুন উদ্ভাবন-সংযোজনে, আত্মবিকাশ, সামাজিকতার কল্যাণ-ভাবনায় যুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা সম্মিলনে এক নতুন দিগন্ত প্রসারে সক্ষম।
এ শিক্ষা পণ্য নয়, জীবন ও জীবিকা অর্জনে দক্ষতা সৃষ্টির সোপান। কায়িক শ্রমের প্রতি
মর্যাদাবোধের শিক্ষার সঙ্গে মানবতাবোধ উজ্জীবক, শিল্প-সাহিত্য-চর্চাপ্রধান
শিক্ষার মধ্যে আমি পৃথকীকরণ নয়,
সমন্বয়ে বিশ্বাসী। কর্মমুখী শিক্ষাকে ‘শিক্ষা’ বিবেচনা করে
উচ্চশিক্ষার জগতে আরো বেশি করে সম্মানজনক প্রবেশাধিকার দেয়া তাই আবশ্যক। এ কারণে
বিশ্ববিদ্যালয়ের দিগন্তে তাকে স্বীকৃতি দিতে হবে স্বমহিমা ও স্বমর্যাদায় আরো
দ্রুতগতিতে।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিশাল
বহির্জগতের প্রয়োজনে দক্ষ কর্মী সৃষ্টিতে অবদান রাখতে সক্ষম বাস্তবমুখী সমন্বিত
জীবন-জীবিকার
শিক্ষা সময়ের দাবি এবং কাঙ্ক্ষিত মানব উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। শিক্ষার সঙ্গে
দক্ষতা উন্নয়নের সংযোগ শোভন জীবিকাপ্রাপ্তির সম্ভাবনা তৈরি নিয়ে পরিবর্তনমুখী
আন্তর্জাতিক ভাবনা ও জাতীয়ভাবে আমাদের উল্লেখযোগ্য সংশ্লিষ্ট মানুষের উপলব্ধি
সেদিকেই দিকনির্দেশ করছে। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপে এমবিএ চালুর
কিছুদিন পর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত একজন শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে বিষয়টি
অবগত করেন। দেশের খ্যাতনামা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথিতযশা কর্মকর্তাকে আমি এ
নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় প্রচলিত
দীর্ঘসূত্রতার উল্লেখ করেও তিনি সক্রিয় বিবেচনার আশ্বাস দেন। এর কিছুদিন পর আমি
অবাক হয়ে সন্তোষের সঙ্গে লক্ষ করি,
দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কোর্সটি চালু
করেছে। এখানে উল্লেখ করা সমীচীন মনে করি যে বেসরকারি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধার
শিল্প-বাণিজ্য জগতের একজন পরিচিত ব্যক্তি এবং অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিষয় চালুর
আগে এ নিয়ে তার সঙ্গে আমার কোনো আলোচনা হয়নি। ভদ্রলোক শিক্ষার সঙ্গে কর্মজগতের
বন্ধন ও শিক্ষায় আন্তর্জাতিক বিশ্বের পরিবর্তনের ধারা সম্পর্কে অবগত।
কাজী ফারুক আহমেদ: জাতীয়
শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও শিক্ষা উন্নয়ন গবেষক