কালো মৃত্যুর কালো সূর্যালোকে

এমএ মোমেন

১৩৪৭ থেকে ১৩৫১ খ্রিস্টাব্দ।
মেঘ নয়, সূর্যটাই কালো ছিল ইউরোপের আকাশে। কালো জোছনায় শুক্লপক্ষ আর কৃষ্ণপক্ষের কোনো বিভেদ থাকার কথা নয়। যে ‘কালো’ ইউরোপকে গ্রাস করে রেখেছে পুরো চার বছর—সৃষ্টি থেকে এ পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাস একক কারণে এত মৃত্যু দেখেনি—ইউরোপ হারিয়েছে তার তখনকার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধাংশ। জীবন হরণ করা এ মৃত্যুর নাম ‘দ্য ব্ল্যাক ডেথ’ বা কালো মৃত্যু। রোগের নাম প্লেগ।
প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা কত, সে হিসাব কেউ রাখতে পারেনি। যাদের হিসাব রাখার কথা, তারা তো প্লেগ-মৃত্যুর শিকার। মৃত্যুহারের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। মৃতের সংখ্যা রক্ষণশীল হিসেবে কমপক্ষে সাড়ে সাত কোটি, কোনো কোনো ঐতিহাসিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী তা ২০ কোটিও হতে পারে।
মধ্যযুগীয় ইতিহাস নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন, তাদের অন্যতম ফিলিপ ডেইলিভার ২০০৭ সালে লিখেছেন:
‘সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে চার বছর মেয়াদি প্লেগ মড়কে ইউরোপের ৪৫-৫০ ভাগ জনসংখ্যা বিলীন হয়ে যায়। তবে ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় এ হিসাবের তারতম্য দেখা যায়—ভূমধ্যসাগরীয় ইউরোপ যেমন ইতালি, দক্ষিণ ফ্রান্স ও স্পেনে ৭৫-৮০ ভাগ মানুষের মৃত্যু হয়; কিন্তু জার্মানি ও ইংল্যান্ডে জনসংখ্যার ২০ ভাগ প্লেগের বলি হয়।’
নরওয়েজিয়ান ঐতিহাসিক ওলে বেনেভিকটাও মনে করেন, প্লেগ ইউরোপের ৬০ ভাগ মানুষকে চিরদিনের জন্য হরণ করে নিয়েছে। তিনি মনে করেন, সে সময় মূল ইউরোপীয় ভূখণ্ডে প্রায় আট কোটি মানুষ জীবনধারণ করত, তাদের মধ্যে ব্ল্যাক ডেথের শিকার হয় পাঁচ কোটি মানুষ। তখন প্যারিস শহরে বাস করত এক লাখ মানুষ। চার বছর পর সংখ্যাটি ৫০ হাজারে নেমে আসে। ১৩৩৮ সালে ইতালির ফ্লোরেন্সে জনসংখ্যা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার, ১৩৫১ সালে সংখ্যাটি কমে ৫০ হাজার হয়ে যায়। জর্মানির হামবুর্গ ও ব্রেমেনে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ মানুষ প্রাণ হারায়। লন্ডনেও তাই, মৃতের সংখ্যা ৬২ হাজার। ১৩৫০ সালে জার্মানিতে বসতি ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার; শতবর্ষ পরে তা ৪০ হাজারে নেমে আসে।
সরকার ও চিকিত্সক এগিয়ে আসার আগে প্লেগ সংক্রমিত হয়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ফ্লোরেন্সের এক পর্যবেক্ষক লিখেছেন:
‘মরদেহ সমাহিত করার জন্য বহন করা ছাড়া নাগরিকদের আর করার কিছু ছিল না। প্রত্যেক চার্চে তারা গভীর ও বিশাল গর্ত খুঁড়ে প্রায় ভূগর্ভস্থ জলসীমায় পৌঁছে যেত। যেসব হতভাগ্য দরিদ্রজন রাতের বেলা মারা যেত, তাদের জড়ো করে দ্রুত ওই গর্তে ছুড়ে ফেলা হতো। সকালে যখন দেখা যেত গর্তে বহুসংখ্যক মানুষের দেহ জমেছে, তখন কোদাল চালিয়ে তাদের ওপর মাটি ফেলে দৃষ্টির আড়াল করা হতো। কিন্তু গর্ত ভরাট করা হতো না। পরদিন আবার একইভাবে সেই মাটির ওপর ছুড়ে ফেলা হতো আরো মরদেহ, তাদের ওপর আরো মাটি—পাস্তা ও পনিরের স্তর তৈরি করে যেমনভাবে সুস্বাদু লাসানে তৈরি করা হয়।
অ্যাঙ্গোলা দি তুরা নামের একজন তার নিজ শহর তুসকান থেকে লিখেছেন, সিয়েনার অনেক জায়গায় গর্ত খুঁড়ে বহু মরদেহ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু মরদেহের ওপর মাটির আস্তরণ তেমন পুরু না হওয়ায় সারা শহরে কুকুর বহু মরদেহ টেনে তুলেছে এবং ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে।
দি তুরা লিখেছেন, ‘আমি নিজের হাতে আমার পাঁচ সন্তানকে সমাহিত করেছি।’
রেনেসাঁ যুগের বিখ্যাত কবি পেত্রার্ক ফ্লোরেন্সে প্লেগের কারণে ভয়াবহ মৃত্যুর মিছিল দেখে উত্তর প্রজন্মের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘হে সুখী আগামী দিনের মানুষ, এমন ভয়াবহ যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা যাদের হয়নি, আমাদের এই সাক্ষ্যকে তারা রূপকথা বলে উড়িয়ে দেবে।’
যার প্রেমে পড়ে পেত্রার্ক সনেট লিখতে শুরু করেছেন, সেই লরা (১৩১০-১৩৪৮) প্লেগ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। পেত্রার্ক ও লরার মিলন ঘটেনি। বায়রনের স্মরণীয় পঙিক্ত:
Think you, if Laura had been Petrarch’s wife
He would have written sonnets all his life.
প্লেগমৃত্যু মানুষের জীবন ও সংস্কৃতিকে এতটাই প্রভাবিত করেছিল যে মধ্যযুগের শেষভাগে ‘কালো মৃত্যু’র কারণে মানুষের অনিত্যতা নিয়ে শিল্পীরা আঁকতে শুরু করেন ‘দ্য ড্যান্স অব ডেথ’—মৃত্যুর নৃত্য ও ‘ড্যান্স ম্যাকাবার’—ভয়ঙ্কর নৃত্য।
নোপোলিয়ন রাশিয়া জয় করতে পারেননি, হিটলার দখল করতে পারেননি, কিন্তু ব্ল্যাক ডেথ সফল হয়েছে।
প্লেগ ভেঙে দেয় পরিবার কাঠামো
প্লেগের আতঙ্ক ও সংক্রমণের আশঙ্কা আক্রান্ত ইউরোপে পরিবার ও সমাজ কাঠামো অনেকটাই ভেঙে দেয়। এ বর্ণনাটি যথার্থ: একজন নাগরিক অন্য একজন নাগরিককে এড়িয়ে বলতে শুরু করে, কোনো প্রতিবেশীও পাশের বাড়ির মানুষের দিকে চোখ তুলে তাকায় না, তারা পরস্পরকে পরিত্যাগ করেছে। এ দুর্যোগ পুরুষ ও নারীর মন যেভাবে সন্ত্রস্ত করেছে, তাতে ভাই ভাইকে, ভাই বোনকে, বোন ভাইকে, চাচা তার ভাস্তেকে, এমনকি স্ত্রী তার প্লেগ আক্রান্ত স্বামীকে পরিত্যাগ করেছে। সবচেয়ে অবিশ্বাস্য মনে হবে, তা হচ্ছে বাবা-মাও একটি পর্যায়ের পর আক্রান্ত সন্তানের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। এ বর্ণনা বোক্কাচ্চিওর।
কোনো চিকিত্সকের পরামর্শ বা ওষুধ প্লেগ সারাতে পারেনি, রোগের প্রকোপ ও যাতনা হ্রাস করেনি। প্রশিক্ষিত চিকিত্সকের পাশে বহুসংখ্যক অজ্ঞ নর-নারীও ডাক্তার সেজে চিকিত্সা দিতে থাকেন, কিন্তু তাদের কেউই জানেন না রোগের কারণ কিংবা প্রতিকার। এ রোগের সহিংসতা এত বেশি—আগুন যেমন তার কাছাকাছি শুকনা কিংবা তেলসিক্ত কোনো দ্রব্যের দিকে ছোটে, এখানেও প্লেগ ছুটে যায় সুস্থ মানুষের কাছে। সংক্রমণের তীব্রতা এমন মাত্রায় যে কেবল রোগীকে স্পর্শ করা নয়, তার পোশাক কিংবা ব্যবহূত কোনো কিছু ধরলেও রেহাই নেই—নিশ্চিত মৃত্যু ছুটে যাবে সুস্থ মানুষের কাছে।
এমনই পরিস্থিতিতে ভয় ও অবিশ্বাস রক্তের সম্পর্ক, মানবিক সম্পর্ক, এমনকি সামাজিক সম্পর্কও ভেঙে দেয়। গুঁড়িয়ে যায় সামাজিক ও পারিবারিক কাঠামো।
ব্ল্যাক ডেথ
প্লেগের যে পর্বটি ‘ব্ল্যাক ডেথ’ হিসেবে চিহ্নিত, তা মূলত ইউরোপীয় এবং এর মেয়াদ ১৩৪৭-এর অক্টোবর থেকে ১৩৫২ পর্যন্ত। গড়পড়তা ৪৫-৫০ শতাংশ ইউরোপীয় এতে মৃত্যুবরণ করে। কোনো অঞ্চলে প্রকোপ এতই তীব্র ছিল যে ৭০-৮০ শতাংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আবার ইংল্যান্ডের কেমব্রিজশায়ার ও জার্মানির উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি গ্রামে প্লেগের স্পর্শও লাগেনি।
প্লেগের জন্য কালো ইঁদুরকে দোষারোপের সংস্কৃতি যথেষ্ট বিজ্ঞানভিত্তিক নয়। ব্ল্যাক ডেথ দারিদ্র্যজনিত রোগ নয়। ইউরোপের ধনী পরিবারগুলোর অর্ধেক সদস্য এতে মারা যায়, কোনো কোনো ধনী পরিবার পুরোপুরিই বিলীন হয়ে যায়।
এটিকে শহরাঞ্চল বা গ্রামাঞ্চলের রোগ হিসেবে চিহ্নিত করার উপায় নেই, বিচ্ছিন্ন পার্বত্য গ্রাম, ওয়েলসের বিচ্ছিন্ন স্নোডোনিয়া এলাকাও প্লেগ এড়াতে পারেনি। আবার ইতালির মিলানের মতো জনবহুল ও ব্যস্ত শহরে মাত্র একটি বাড়িতে প্লেগ আক্রান্ত রোগীর খবর পাওয়া যায়।
ইউরোপে চার্চ প্রধানরা প্রথমে প্লেগকে ঈশ্বরের অভিশাপ বললেও তাদের ভাষায় পুণ্যবান বিশপদের যখন মৃত্যু শুরু হয়, তখন ঈশ্বরের ওপর দায় চাপানো কমে আসে। ইউরোপে এর জন্য ইহুদিদেরও দোষারোপ করা হয়। বিশ শতকের বিউবোনিক প্লেগের চেয়ে ৩০ থেকে ১০০ গুণ দ্রুতগতিতে ব্ল্যাক ডেথ ছড়িয়েছে।
কয়েকটি প্লেগ প্যান্ডেমিক
এপিডেমিক হচ্ছে মহামারী, যেমন ভারতবর্ষের কলেরা মহামারীর কথা আমাদের জানা। কিন্তু মহামারী যখন ভৌগোলিক সীমান্ত ছাড়িয়ে বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তা হয়ে ওঠে প্যান্ডেমিক।
১. জাস্টিনিয়ান প্লেগ: পৃথিবীর সেরা শাসকদের অন্যতম বাইজেন্টাইন সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ানের শাসনকালে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে। সম্ভবত আফ্রিকায় সৃষ্ট প্লেগ ৫৪১ খ্রিস্টাব্দে যখন কনস্টান্টিনোপল পৌঁছে, অল্প সময়ের মধ্যে ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। সম্রাট জাস্টিনিয়ান নিজেও আক্রান্ত হন, তবে সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। পরবর্তী সময় বাইজেন্টাইনে প্রকোপ কমলেও ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাতে আনুমানিক আড়াই কোটি মানুষের মৃত্যু হয়।
২. ইতালিয়ান প্লেগ: ১৬২৯ সালে সৈনিকদের মধ্যে দেখা দেয় এবং তা ভেরোলা, মিলান, ভেনিস, ফ্লোরেন্স ও মান্তুয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়।
৩. ব্ল্যাক ডেথ প্রসঙ্গ বর্তমান লেখাতেই আলোচিত হয়েছে।
৪. গ্রেট লন্ডন প্লেগ: ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে এ প্লেগ দেখা দেয়। ১৬৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতি সপ্তাহে আট হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ১৬৬৬ সাল নাগাদ মৃতের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যায়।
৫. মার্সেই প্লেগ: ১৭২০ সালে ফ্রান্সের মার্সেই নগরীতে প্লেগ দেখা দেয়। শহরে যখন মরদেহের স্তূপ সরানোর লোক পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন জেলখানার সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের বের করে এনে সাজা কমানোর শর্তে তাদের দিয়ে শহর পরিষ্কার করানো হয়। ১৭২২ সালে রোগটি আর দেখা দেয়নি। ততদিনে মৃতের সংখ্যা এক লাখে পৌঁছে।
৬. তৃতীয় প্লেগ প্যান্ডেমিক: ১৮৫৫ সালে চীনের ইউনান প্রদেশে প্লেগ দেখা দেয়, সেই প্লেগ ভারতবর্ষেও ছড়িয়ে পড়ে। এ প্লেগ দীর্ঘদিন বিরাজ করে এবং প্রায় দেড় কোটি মানুষ প্রাণ হারায়।
প্লেগ কি নির্মূল হয়েছে?
হয়নি। প্লেগ, ব্ল্যাক ডেথ, বিউবোনিক প্লেগ—যা-ই বলা হোক এখনো টিকে আছে এই ঘাতক ব্যাধি। তবে আশার কথা প্রতিষেধক থাকায় পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠে না। এখনো প্রতি বছর গড়পড়তা ৬০০ প্লেগ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়ে থাকে। প্রায় ২০০ মৃত্যুর সংবাদও পাওয়া যায়। উচ্চমাত্রা সংবেদনশীল অ্যান্টিবায়োটিক স্ট্রেপটোমাইসিন, টেট্রাসাইক্লিন, ক্লোরামফেনিকল এবং নতুন প্রজন্মের অ্যান্টিবায়োটিক জেন্টামাইসিন, ডক্সিসাইক্লিন সাফল্যের সঙ্গে প্লেগ মোকাবেলা করে যাচ্ছে। ২০১৭ সালে কঙ্গো, মাদাগাস্কার ও পেরুতে প্লেগ রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত নভেম্বরে চীনে একাধিক প্লেগ সংক্রমণের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
প্লেগ সম্পর্কিত সেরা গল্প-উপন্যাস
১. জিওভান্নি বোক্কাচ্চিওর ‘দ্য ডেকামেরন’ (১৩৫১)
২. ড্যানিয়েল ডেফোর ‘আ জার্নাল অব দ্য প্লেগ ইয়ার’ (১৭১১)
৩. মেরি শেলির ‘দ্য লাস্ট ম্যান’ (১৮২৬)
৪. আলেসান্দ্রো ম্যানজোনির ‘দ্য বিট্রোথড’ (১৮২৭)
৫. এডগার এলান পোর ‘দ্য মাস্ক অব দ্য রেড ডেথ’ (১৮৪২)
৬. হারমান হেসের ‘নার্সিসাস অ্যান্ড গোল্ডমুন্ড’ (১৯৩০)
৭. হোসে সারামাগের ‘ব্লাইন্ডনেস’ (১৯৯৭)
৮. জ্যাক লন্ডনের ‘দ্য স্কারলেট প্লেগ’ (১৯১১)
৯. জন লা ক্যারের ‘দ্য কনস্ট্যান্ট গার্ডেনার’ (২০০১)
১০. পি ডি জেমসের ‘দ্য চিল্ড্রেন অব মেন’ (১৯৯২)
১১. জিম ক্রেসের ‘দ্য পেস্টহাউজ’ (২০০৮)
১২. অলবেয়ার কামুর ‘দ্য প্লেগ’ (১৯৪৭)
১৩. মাইকেল ক্রিশটনের ‘দ্য অ্যান্ড্রোমিডা স্ট্রেইন’ (১৯৬৯)
১৪. স্টিফেন কিংয়ের ‘দ্য স্ট্যান্ড’ (১৯৭৮)
১৫. রিচার্ড প্রেস্টনের ‘দ্য হট জোনস’ (১৯৯৪)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন