বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড উপকূলীয় চুক্তি

প্রাচীন নৌপথে কমবে দুই দেশের দূরত্ব

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

প্রাচীনকাল থেকেই নৌপথে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল বাংলাদেশ সাতচল্লিশের দেশভাগের পর পথ দিয়ে দুই দেশের মধ্যে নৌ-চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় দুই দেশই বর্তমানে প্রাচীন নৌপথকে আবারো জীবন্ত করে তুলতে আগ্রহী নৌপথটি চালু হলে দুই দেশের মধ্যে দূরত্বও কমে আসবে অনেকখানি বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তির মাধ্যমে রুটটির পুনরুজ্জীবন সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে সম্মতি দিয়েছে দুই দেশই

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক বা লাম চাবাং বন্দরে পণ্য পরিবহন করতে হলে বর্তমানে মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুর হয়ে যেতে হয় এতে দুই দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহনে সময় লেগে যায় সাত থেকে ১২ দিন চুক্তি ভিত্তিতে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি উপকূলীয় নৌযান চলাচল চালু করা গেলে সময় নেমে আসবে অর্ধেকেরও নিচে

জানা গেছে, এরই মধ্যে দুই দেশের কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যকার প্রাচীন নৌ-রুট চালুর জন্য আলোচনা শুরু করেছেন এজন্য একটি উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তির প্রস্তাবনাও রয়েছে দুই দেশের পণ্য আমদানি-রফতানিতে বড় ভূমিকা রাখে মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুর

দুই দেশের কূটনীতিকরা মনে করছেন, মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুরের বন্দর এড়িয়ে যেতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে থাইল্যান্ডের র্যানং বন্দরের মধ্যে সরাসরি সমুদ্র যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে বিষয়টি দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে পণ্য পরিবহনের সময় এবং ব্যয়ও বহুলাংশে কমে আসবে এতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বিনিয়োগ সম্প্রসারণের উৎসাহ বাড়বে পাশাপাশি মিয়ানমার ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গেও যোগাযোগ সম্পর্ক গড়ে তুলতে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে

জানা গেছে, জানুয়ারি বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের মধ্যে পঞ্চম যৌথ বাণিজ্য কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বৈঠকে দুই দেশ নীতিগতভাবে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (এফটিএ) সম্মত হয়েছে এজন্য একটি যৌথ সমীক্ষা দল গঠন করে এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বলা হয়েছে একই বৈঠকে দুই দেশের নৌপথের দূরত্ব কমাতে চট্টগ্রাম বন্দর আন্দামান সাগরের র্যানং বন্দর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হয়েছে

বিষয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করাসহ পারস্পরিক নৌ-বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের সামর্থ্য সুযোগ-সুবিধা মূল্যায়ন এবং সরাসরি উপকূলীয় জাহাজ চলাচলের উপযোগিতা যাচাইয়ের ভিত্তিতে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়ে দুই দেশেরই ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে

প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের মধ্যে মেরিটাইম সহায়তা চুক্তি সম্পন্ন হলেও এটি বর্তমানে অকার্যকর রয়েছে

প্রাচীন নৌরুটটিকে পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে দুই দেশেরই মনোভাব ইতিবাচক তার পরও এখানে কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছেন কূটনীতিকরা

বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তিটি সহজ কোনো বিষয় নয় কারণ বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী দেশ নয় ফলে দুই দেশের উপকূলের মধ্যে সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই এক্ষেত্রে থাইল্যান্ডের সঙ্গে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল কার্যকর করতে হলে মিয়ানমারের উপকূল দিয়ে যেতে হবে ফলে দুই দেশের মধ্যকার উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি কার্যকর করতে হলে হয় মিয়ানমারকে সঙ্গে নিয়ে ত্রিদেশীয় চুক্তি করতে হবে অথবা নির্বিঘ্নে জাহাজ চলাচলের জন্য মিয়ানমারের সম্মতি থাকতে হবে এছাড়া চুক্তি কার্যকর হবে না

তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গেও উপকূলীয় নৌযান চলাচল চুক্তি করতে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ নিয়ে একাধিকবার তাদের চিঠিও দেয়া হয়েছে তবে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে তেমন কোনো সাড়া দেয়নি দেশটি এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বর্তমানে দুই দেশের সম্পর্ক যে খুব উষ্ণ, তা- বলার সুযোগ নেই ফলে আঞ্চলিক সমস্যা দ্রুত সমাধান করে দেশগুলোকে অভিন্ন উন্নয়ন স্বার্থে ঐকমত্যে আসতে হবে

একই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের এক কূটনীতিকও বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে থাইল্যান্ড সরকারের একটি প্রভাব মিয়ানমারের ওপর রয়েছে ফলে চুক্তিটি কার্যকরে থাইল্যান্ডের সরকারই মিয়ানমারকে রাজি করাবে তবে এক্ষেত্রে কোনো ত্রিদেশীয় চুক্তি হবে না থাইরা মূলত সরাসরি বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি মিয়ানমারেও কিছুটা পণ্য পরিবহনে আগ্রহী ফলে বিষয়টির ব্যবস্থা তারাই করবে

তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন আগেই এক থাই প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেছে আর বাংলাদেশেরও একটি প্রতিনিধি দল থাইল্যান্ডে বন্দর দেখতে যাবে বর্তমানে ব্যাংকক সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ট্রান্সশিপমেন্ট করে বাণিজ্য হচ্ছে আমরা এটিকে আরো সরাসরি করার চিন্তা করছি এতে থাইল্যান্ডের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর আরো ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ভারতের সঙ্গে কোস্টাল শিপিং চুক্তি করা হয়েছে একই মডেলে থাইল্যান্ডের সঙ্গেও চুক্তি করে কীভাবে কানেক্টিভিটি আরো বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সরাসরি নৌ-যোগাযোগ চালু করা নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন তত্কালীন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব অশোক মাধব রায় থাইল্যান্ডের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পোর্ট অথরিটির সহকারী মহাপরিচালক প্রজাক শ্রীভাথানা সময় থাই প্রতিনিধি দলটি চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করে

জানা গেছে, এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশগুলোর মধ্যে ভারত পাকিস্তানের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য থাইল্যান্ডের সঙ্গে ২০১৮ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য হয়েছে ১২৫ কোটি ডলারের এর মধ্যে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানি হয়েছে - কোটি ডলারের অন্যদিকে আমদানি হয়েছে প্রায় ১২০ কোটি ডলারের পণ্য

জানা গেছে, মুহূর্তে থাইল্যান্ড বাংলাদেশকে হাজার ৯৯৮টি পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধসহ যেসব পণ্যের চাহিদা থাইল্যান্ডে প্রচুর, এমন আরো ৩৬টি পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হয়েছে বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে রফতানিযোগ্য প্রধান পণ্যগুলো হচ্ছে ওভেন গার্মেন্টস, নিটওয়্যার, প্রকৌশল পণ্য হোম টেক্সটাইল অন্যদিকে থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয় প্লাস্টিক রাবার উপাদান, খনিজ দ্রব্য, বস্ত্র বস্ত্রসামগ্রী এবং মেশিনারি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন