সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলায় আরো সচেতনতা দরকার

সিটিও টেক সামিট ২০২০আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।৪র্থ শিল্প বিপ্লব সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকি মোকাবেলায় তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের প্রস্তুতিস্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠেয় সামিট নিয়ে সিটিও ফোরাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তপন কান্তি সরকার বণিক বার্তার মুখোমুখি হয়েছিলেন। আলোচনায় দেশের সাইবার নিরাপত্তা খাতের চ্যালেঞ্জ, ঝুঁকি সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত জানান তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বকুল রায়

সিটিও টেক সামিট ২০২০’-এর লক্ষ্য নিয়ে বলুন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নতুন বছরের শুরুতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনসিটিও টেক সামিট ২০২০ বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের একমাত্র সংগঠন সিটিও ফোরামের আয়োজনে আগামীকাল রাজধানীর স্যামসন চৌধুরী কনভেনশন সেন্টারে দিনব্যাপী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। প্রযুক্তি নির্বাহীদের সম্মেলনে প্রায় ৪০ জন বিদেশী বিশেষজ্ঞ যোগ দেবেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইসি কাউন্সিলের ওয়াশিংটন চ্যাপ্টার থেকে ১৫ জন, সাইবার সিকিউরিটি অব মালয়েশিয়া থেকে পাঁচজন, ভারতের ইনফোসেক ফাউন্ডেশন থেকে প্রায় ১৫ জন, সিআইও ফোরাম অব নেপাল থেকে তিনজন এবং ভুটান থেকে দুজন সম্মেলনে যোগ দেয়ার বিষয় এরই মধ্যে নিশ্চিত করেছেন। সাইবার সিকিউরিটি ডিজিটাল ইনোভেশন দুই ভাগে সাজানো হয়েছে এবারের সম্মেলন। দুটি ভাগে চারটি করে মোট আটটি সেমিনার প্যানেল আলোচনার পাশাপাশি সম্মেলনস্থলে বেশকিছু স্টলও থাকবে, যেখান থেকে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি পণ্য সেবা সম্পর্কে জানতে পারবেন। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ব্লক চেইন বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) মতো নতুন প্রযুক্তির বিষয়গুলো সামনে আনা।

সিটিও ফোরাম চলতি বছর কোন বিষয়গুলোয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে?

সিটিও ফোরাম বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর্মরত প্রযুক্তিবিদদের জন্য দেশে একমাত্র সংগঠন। আমাদের সংগঠনের লক্ষ্যই হলো দেশের প্রযুক্তিবিদদের একত্র করে নলেজ শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে দেশের ইনফরমেশন টেকনোলজি ইনফ্রাস্ট্রাকচার নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে দেশের প্রযুক্তিবিদ কর্মকর্তাদের কোলাবোরেশন তৈরি করা। আধুনিক প্রযুক্তির নানা বিষয় যেমন ডিজিটাল রূপান্তর, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, ডিজিটাল বাংলাদেশ, সাইবার চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি সিটিও ফোরাম সাইবার নিরাপত্তার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে উৎসাহ সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে প্রতিনিয়ত সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে।

৪র্থ শিল্প বিপ্লব সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা কতটুকু প্রস্তুত?

৪র্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের দরজায় দাঁড়িয়ে। দেশ এখন ডিজিটাল রূপান্তরের পথে। প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে চলেছে। দেশীয় প্রযুক্তি কর্মকর্তারা অব্যাহতভাবে এক্ষেত্রে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ব্লক চেইন বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। বিষয়গুলো আরো বেশি সামনে আনতে হবে। সর্বস্তরে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে সাইবার আক্রমণ সাইবার নিরাপত্তা একটা আলোচিত বিষয়। ইন্টারনেট আমাদের নতুন জীবনের সন্ধান দিয়েছে। পৃথিবীর ৮০ শতাংশ মানুষ এখন প্রতি মুহূর্তে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। প্রতিটা মানুষ প্রতিদিন গড়ে ঘণ্টা করে সাইবার দুনিয়ায় থাকে। কাজেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের নিজেদেরও নিরাপদ রাখা দরকার। সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা অনেকটা পথ এগিয়েছি। এখানে আরো উন্নতি করার সুযোগ আছে। নতুন বছর একটি নতুন দশকেরও সূচনা। অনেকাংশেই বলা যায় ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের প্রত্যাশিত রূপ দেখতে পাব চলতি বছর। তাই বছরের চ্যালেঞ্জগুলোও অনেক। পৃথিবী দ্রুতই ক্যাশলেস প্রক্রিয়ার দিকে আগাচ্ছে। আসছে রোবোটিকস অটোমেশন, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটির দিকে। আমি মনে করি চলতি বছরের চ্যালেঞ্জ এগুলো নিয়েই।

বাংলাদেশ সরকার সাইবার নিরাপত্তা বিষয়টিতে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে করেন কি?

বাংলাদেশে অনলাইন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের ঘাটতি আছে। তবে অনলাইন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের ঘাটতি না যতটুকু আছে, তার চেয়ে বড় বিষয় হলো মানুষের এসব বিষয়ে সচেতনতার অভাব। বর্তমান সরকারের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দূরদর্শী পরিকল্পনার ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের আর্থিক খাত ডিজিটালাইজড করতে বিভিন্ন উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। প্রায় সব ব্যাংকই ডিজিটাল সেবার আওতায় আনার সুফল সবাই পাচ্ছে। ডিজিটাল সম্পদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে বিবেচনায় আনতে হবে। মাঠপর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তবায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

দেশের আর্থিক খাত সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলায় কতটুকু সক্ষম?

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৫০ শতাংশ ব্যাংক সাইবার আক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। ওই প্রতিবেদনটি কোন সমীক্ষার ভিত্তিতে বলা হয়েছে, সেটা আমার জানা নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকে হ্যাকারদের হানার পর থেকেই বেশকিছু ব্যাংক ম্যালওয়্যার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু আমরা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সে ধরনের কোনো প্রভাব লক্ষ করিনি। আমাদের ব্যাংকগুলোয় সাইবার আক্রমণ প্রতিনিয়তই হচ্ছে। বাংলাদেশে অনলাইন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের ঘাটতি আছে বলে আমার মনে হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পরিচালনা পর্ষদ, নির্বাহী পর্ষদ এবং এক দল তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। হ্যাকিং রোধে চারটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হলো প্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ দল গঠনে তত্ত্বগত ব্যবহারিক দুই ধরনের জ্ঞানকে বিবেচনায় আনতে হবে। সেবা অনুযায়ী নেটওয়ার্ক নকশা বিভাজিত হতে হবে এবং নেটওয়ার্ক ডিভাইসগুলো অ্যাপ্লিকেশন আর্কিটেকচার এবং নকশা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে হবে। এখানে বাজেটের বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া যাবে না।

বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তর কি সঠিক পথে এগোচ্ছে?

শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বই ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। নিত্যনতুন প্রযুক্তির প্রভাব পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। নতুন প্রযুক্তির সম্ভাবনাও নতুন, সেই সঙ্গে এর ঝুঁকিগুলোও নতুন। অনেক সময় দেখা যায়, ঝুঁকি বুঝতে এর মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সঠিক ধারণা থাকে না। তবে আমি বলব এখন পর্যন্ত যতগুলো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে, তার কিছু বাদে বাকি সবগুলোই ভালোভাবে মোকাবেলা করা গেছে। আরেকটু সচেতন হলে আমরা আরো দ্রুত উন্নতির পথে যেতে পারব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন