এই ছোট্ট দ্বীপে এত লোকের বাস!

বণিক বার্তা অনলাইন

চারিদিকে নীল জলরাশি, আর মধ্যখানে ছোট ছোট ঘর বেঁধে বাস করছে শতাধিক পরিবার। দূর থেকে দেখলে মনে হবে ভাসমান বড়সড় কোন ভেলা আর উপর থেকে দেখতে ঠিক ঢাকার কোন বস্তির মতো। ঠিক একটা ফুটবল মাঠের সমান আয়তনের দ্বীপ এটা। মানুষের তৈরি ‘সান্তা ক্রুজ দেল ইসলোতে’ নামের এই দ্বীপটিই এখন বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দ্বীপ। এখানে ১১৫টি বাড়িতে বাস করছেন প্রায় ৫০০ জন মানুষ।

কলোম্বিয়ার ক্যারিবীয় উপকূলের এই ছোট্ট দ্বীপটির আয়তন মাত্র ১ দশমিক ২১ বর্গ কিলোমিটার। দ্বীপটি লম্বায় ২০০ মিটার এবং প্রস্থে ১২০ মিটার। মূলত এটি সান বার্নার্ডোর দ্বীপপুঞ্জের একটি অংশ। এই দ্বীপপুঞ্জটি নয়টি উপকূলীয় প্রবাল দ্বীপ এবং একটি কৃত্রিম দ্বীপ নিয়ে কলোম্বিয়ার অন্তর্গত। দ্বীপপুঞ্জের একমাত্র কৃত্রিম দ্বীপটিই সান্তা ক্রুজ দেল ইসলোতে।

ধারণা করা হয়, ১৮ শতকের ৭০ দশকের দিকে এর গোড়াপত্তন। প্রথমে উপকূলের ওই জায়গাটিতে স্থানীয়রা প্রবাল আর পাথর ফেলতে শুরু করে। আর জোয়ারের প্রভাবে সেখানে জমতে থাকে বালি আর মাটি কনা। একসময় নির্মিত হয় সবুজ আর নীল প্রবালের স্বর্গ।

দ্বীপটিতে চারটি প্রধান সড়ক রয়েছে। তবে চলাচলের জন্য কোন গাড়ি বা মোটরসাইকেল নেই। প্রতিটি পরিবারের চলাচলের জন্য একটি করে নৌকা আছে। তারা মাছ ধরতে, ময়লা ফেলতে ও পার্শ্ববর্তী দ্বীপে যেতে নৌকা ব্যবহার করে থাকে। কলোম্বিয়ার বাকী অংশগুলির মতো এখানেও সবাই স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে। জনসংখ্যার বেশিরভাগ খ্রিস্টান, প্রধানত ক্যাথলিক।


জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশই শিশু। এখানে একটি স্কুল আছে। ১২ জন শিক্ষক দুই শিফটে ১৭০ শিক্ষার্থীকে একাদশ গ্রেড পর্যন্ত শিক্ষা দিয়ে থাকেন। দ্বীপটিতে কয়েকটা দোকান ও একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। বর্তমানে জাপানি সরকারের অনুদানে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে একটি পাওয়ার জেনারেটর ও দুইটি সৌর স্টেশন রয়েছে। যা থেকে ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। যদিও বিদ্যুতের অতিরিক্ত মূল্য নিয়ে অভিযোগ আছে দ্বীপের বাসিন্দাদের।  

দ্বীপটিতে নিরাপদ পানির কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে গ্রীষ্মকালে খাবার পানির চরম সংকট দেখা দেয়। তার উপরে বৃষ্টিপাতও হয় তুলনামূলকভাবে কম। পানির জন্য তাদের দেশটির নৌবাহিনীর জাহাজের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। পানি এই দ্বীপে স্বর্ণের চেয়েও মূল্যবান।

২০১৩ সালে দ্বীপটির স্থানীয় সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য  বাসিন্দাদের দ্বারা একটি কমিউনিটি কাউন্সিল গঠন করা হয়। ২০১৮ সালে দ্বীপটিতে শক্তিশালী জোয়ারের প্রভাবে বন্যার সৃষ্টি হয় এবং বেশ কয়েকটি ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।

এই সবুজ আর নীল প্রবালের স্বর্গ ভ্রমণে প্রতি বছর আসে হাজার হাজার পর্যটক। দ্বীপের প্রায় শতভাগ মানুষই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত। সমুদ্র সৈকত ছাড়া দ্বীপটিকে এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যা পর্যটকদের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এছাড়াও এখানে দুটি অ্যাকুরিয়াম আছে। কচ্ছপ থেকে শুরু করে হাঙ্গর পর্যন্ত বিভিন্ন প্রাণীর সাথে পর্যটকরা সাঁতারও কাটতে পারেন। এজন্য প্রতিজনের খরচ হয় পাঁচ হাজার পেসো (২৬৫ মার্কিন ডলার)।

দ্বীপটির বাসিন্দা আদরিয়ান কারাবালো পরিবেশ রক্ষায় গড়ে তুলেছেন একটি সংগঠন। ‘সেভারস অফ দ্যা রিফ’ নামের ওই সংগঠনে ৩০ জন শিশু ও কিশোর যুক্ত হয়েছে। কারাবালো জানান, ‘আমাদের যতটুকু সম্পদ আছে আমরা তার যত্ন নিই। আমরা জেলেদের নৌকা চেক করি, তারা কী শিকার করে আনলো। কেউ কচ্ছপ ধরে আনলে একটি মুরগির বিনিময়ে আমরা সেটি হোটেল পুন্তা ফারোতে নিয়ে আসি। কচ্ছপ প্রায় সবার প্রিয় খাদ্য। তবে দ্বীপের ৮০ শতাংশ মানুষ এখন কচ্ছপের গুরুত্ব বুঝতে পারায় কচ্ছপ শিকার কমেছে।’

সূত্র: বিবিসি

ভিডিও দেখুন ...

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন