শেয়ারবাজার রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ারবাজার রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। গতকাল সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি দাবি করেন। শেয়ারবাজারে টানা দরপতনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, যদি প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেন, তবে বাজার ফিরে আসতে পারে।

গতকাল সংসদে ফিরোজ রশীদ বলেন, সব পত্রিকায় নিউজ হচ্ছে শেয়ারবাজার নিয়ে। আজ লিড নিউজ হয়েছে, ‘মাটিতে শুয়ে গেছে শেয়ারবাজার বিক্ষোভ করছেন বিনিয়োগকারীরা। শেয়ার মার্কেট নিয়ে কেন এমন হলো? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কেটে সুশাসনের অভাব। বিনিয়োগকারীরা ভরসা পাচ্ছেন না। এটা বাজারের জন্য অশনিসংকেত। এটা কেন হচ্ছে? মাননীয় মন্ত্রী মিটিং করেছিলেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ছিল। স্টেকহোল্ডাররা ছিল। আমাদের মন্ত্রীর সামনে আমি কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছিলাম। বলেছিলাম দুর্বল কোম্পানিগুলোকে যাতে লিস্টিং না করে। ব্রোকারেজ হাউজগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

বিএসইসির সমালোচনা করে তিনি বলেন, এরই মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন হয়ে গেছে। বলা হলো, এটা করা হলে আমাদের কাছ থেকে সাত বছর ট্যাক্স নেয়া হবে না। দুই বছর পর আমাদের ওপর ট্যাক্স আরোপ করা হচ্ছে। এই যে শেয়ার মার্কেটের অবস্থা, একমাত্র কারণ দুর্বল কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে লিস্টিং করা হয়েছে। আমাদের কিছু করার থাকে না। লিস্টিং দেয় বিএসইসি। আমরা বারবার বলি কোম্পানির লিস্টিং দিতে পারব না। কিছু মার্চেন্ট ব্যাংক, ইস্যু ম্যানেজার এসব দুর্বল পচা কোম্পানি নিয়ে আসছে বাজারে। বিনিয়োগকারীদের রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বিএসইসি যারা দেখাশেনা করবে তারা পচা কোম্পানিগুলো গছিয়ে দিচ্ছে। কোম্পানির শেয়ার নেমে আসতে আসতে একসময় ফেস ভ্যালুর নিচে নেমে আসে। বিনিয়োগকারীরা শেষ হয়ে যাচ্ছে। ১০ টাকার শেয়ার ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা পরে ১৫ টাকায় নেমে এসেছে। বিএসইসি যে পচা কোম্পানি আনছে, সে ব্যাপারে কিছু করা হচ্ছে না। কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত নেয়া হয়নি। ১০ টাকার শেয়ারে ৩০ টাকা প্রিমিয়াম হতে পারে না। কীভাবে বাজারে এল? ইস্যু ম্যানেজারকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। মার্চেন্ট ব্যাংককে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে না। প্রশান্ত হালদার নামে একটা লোক নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছেন। উনি এখন উধাও হয়ে গেছেন। এভাবে টাকা চলে যাচ্ছে, কার জবাব কে নেবে, কার জবাব কে দেবে। কোনো জবাবদিহিতা নেই।

গতকাল সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, মন্ত্রীরা বিপর্যয় দেখতে পান না। তারা বলেন, সংকট নেই। আমরা হতভম্ভ হয়ে যাই, বিস্মিত হয়ে যাই। এক সপ্তাহ ধরে মানুষ শেয়ারবাজারের জন্য রাস্তায় শুয়ে পড়েছে। কান্নায় বিপর্যস্ত। লাখ লাখ পরিবার ধুলায় মিশে যাচ্ছে। ব্যাপারে সরকার দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে আমরা আশ্ব্বস্ত হতে পারছি না। পত্রিকায় খবর এসছে বিদেশী বিনিয়োকারীরা চলে যাচ্ছে অথচ আমরা আজ মুজিব বর্ষ পালন করছি, বলছি দেশে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এত উন্নতি, চারদিকে বিশাল বিশাল স্থাপনা বানাচ্ছি। অথচ অর্থনীতির কী বিপর্যয় অবস্থা। বিনিয়োগকারীরকে রক্ষার জন্য অর্থমন্ত্রী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?

গতকালের বাজার পরিস্থিতি: গতকাল লেনদেনের শুরুতে সূচকে বড় উত্থান হয়। তবে এর লেনদেন শেষ হওয়া পর্যন্ত সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে। দিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৩২ পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৬৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচকের পাশাপাশি শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস দিনের ব্যবধানে পয়েন্ট বেড়ে গতকাল ৯১৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ব্লু চিপ সূচক ডিএস-৩০ এদিন প্রায় ১৯ পয়েন্ট বেড়ে দিন শেষে হাজার ৩৭১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসইর চীনা সূচক সিডিএসইটি দশমিক পয়েন্ট বেড়ে গতকাল দিন শেষে ৮২৫ পয়েন্টে এসে দাঁড়িয়েছে।

গতকাল ডিএসইতে সূচক বাড়লেও দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে। গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে ২৪২ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ২৬২ কোটি টাকায়। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৫৩টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ২১০টির, কমেছে ৯৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪৯টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ কোম্পানিগুলো হচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ, এডিএন টেলিকম, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস, কেপিসিএল, নর্দার্ন জুট, জেনেক্স ইনফোসিস, এসএস স্টিল বীকন ফার্মা।

দেশের আরেক শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক সিএসসিএক্স দিনের ব্যবধানে ৫৫ পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৫০৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল হাজার ৪৪৯ পয়েন্টে। সিএসইতে গতকাল লেনদেন হওয়া ২৩২টি কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১২৫টির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ৭৭টি আর অপরিবর্তিত ছিল ৩০টির বাজারদর।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন