কিছুদিন আগেও ফেনী জেনারেল হাসপাতালে মানুষের ভিড় লেগেই থাকত। রোগীর বাইরে বহিরাগতদের ছিল অবাধ চলাচল। বিশেষ করে দালালদের দৌরাত্ম্য ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালটিতে চালু হয়েছে দর্শনার্থী পাস কার্ড। আর এতেই বন্ধ হয়ে গেছে হাসপাতালটিতে বহিরাগতদের অবাধ চলাচল। রোগী ও স্বজনদের বাইরে অন্যদের প্রবেশ ঠেকাতে এ উদ্যোগের সুফল মিলতে শুরু করেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ফেনী ও আশপাশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালে ১৫০ শয্যাবিশিষ্ট ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করে সরকার এবং নাম দেয়া হয় ফেনী জেনারেল হাসপাতাল। এরপর থেকে হাসপাতালটিতে সেবার মান বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে সেবাগ্রহীতার ভিড়ও। তবে এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে দালাল চক্র ও অ্যাম্বুলেন্সচালকদের দৌরাত্ম্যও। এদের খপ্পরে পড়ে প্রায় প্রতিনিয়তই রোগী ও স্বজনরা নানা রকম প্রতারণার শিকার হচ্ছিলেন। এছাড়া বহিরাগত ও দর্শনার্থীর ভিড় ঠেকাতে নিরাপত্তাকর্মী ও সেবাদাতাদের সঙ্গে কয়েক দফায় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। অতিরিক্ত লোকজনের ভিড়ে চিকিৎসক ও নার্সদের বিব্রতকর অবস্থায় থেকে সেবা দিতে হতো। এ অবস্থা ঠেকাতে হাসপাতালটিতে পুলিশ ফাঁড়িও স্থাপন করা হয়। এর পরও দালালের দৌরাত্ম্য কমাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে গত বছরের ডিসেম্বরে পরীক্ষামূলকভাবে দর্শনার্থী পাস কার্ড চালু করে। এতে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল চক্রের সদস্য, অ্যাম্বুলেন্সচালক ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা এ পাস কার্ডে সুফল পাওয়ায় গত মঙ্গলবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান। এ সময় সিভিল সার্জন মো. নিয়াতুজ্জামান, আরএমও আবু তাহের পাটোয়ারী, হাসপাতালটির কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে দর্শনার্থী পাস কার্ড ছাড়া ওয়ার্ডে বহিরাগত কেউ অবস্থান করতে পারবে না। ভর্তি হওয়ার সময় একজন রোগীর সঙ্গে একজন স্বজন ১০০ টাকা জমা দিয়ে একটি পাস কার্ড সংগ্রহ করবেন। রোগীকে হাসপাতালের ছাড়পত্র প্রদান করা হলে দর্শনার্থী কার্ড জমা দিয়ে টাকা ফেরত নিতে পারবেন। তবে দর্শনার্থীর পাস হারিয়ে গেলে বা ফেরত না দিলে জমার টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না।
পাস কার্ড ছাড়া শীতকালে বেলা ৩টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এবং গ্রীষ্মকালে
বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্বজনরা রোগীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন। রোগীর স্বজনদের বাইরে হাসপাতালে কর্মরত সব স্টাফের আলাদা বিশেষ পাস ব্যবহার করতে হবে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে আগের মতো দর্শনার্থীর ভিড় নেই। ওয়ার্ডগুলোয় এক ধরনের সুনসান নীরবতা বজায় রয়েছে। চিকিৎসক ও সেবিকারা অতিরিক্ত মানুষের চাপ ছাড়াই স্বাচ্ছন্দ্যে রোগীদের বর্তমান অবস্থা, কাগজপত্র পরীক্ষা করছেন ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। এতে চিকিৎসক, সেবিকা ও রোগীদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।
দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবার মান নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতাদের সহযোগিতা করতে কাজ করছে স্থানীয় পর্যায়ে গড়ে ওঠে ‘সহায়’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এর প্রধান সমন্বয়ক মনজিলা মিমি জানান, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুরের আগ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে রোগী দেখেন। এ সময় রোগীর স্বজন ও নানা রকম দালালের উপস্থিতির কারণে চিকিৎসকরা বিব্রত হতেন। এসব সমস্যার মোকাবেলায় দর্শনার্থী কার্ডটি চালু করা ছিল সময়ের দাবি। এটি চালু করায় কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানান তিনি।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আবু তাহের পাটোয়ারী জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় দর্শনার্থী কার্ড চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দালাল ও প্রতারণার লাগাম টেনে ধরা, সেবার মান ও পরিচ্ছন্নতা বাড়ানো যাবে।