এক বছরে ভারতে আট হাজার ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভারতে হঠাৎ করেই ফের বেড়ে গেছে ব্যবসায়ীদের আত্মহত্যার ঘটনা। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশটিতে আত্মহত্যা করেছেন হাজার ৯৯০ ব্যবসায়ী। অথচ এর আগের দুই বছর আত্মহত্যার সংখ্যা কমতির দিকে ছিল। মনে করা হচ্ছে, ভারতে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন তো হচ্ছেনই, সামাজিক অবস্থানও ধরে রাখতে পারছেন না। অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে তারা বেছে নিচ্ছেন আত্মহননের পথ। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

২০১৮ সালে ভারতে সবচেয়ে বেশি ব্যবসায়ী আত্মহত্যা করেছেন কর্ণাটকে। রাজ্যে আত্মহত্যা করেছেন হাজার ১১৩ ব্যবসায়ী। এর পরই রয়েছে মহারাষ্ট্র তামিল নাড়ুর অবস্থান। দুই রাজ্যে ব্যবসায়ী আত্মহত্যা করেছেন যথাক্রমে ৯৬৯ ৯৩১ জন। উল্লেখ্য, রাজ্যভিত্তিক মোট দেশজ উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে এসব রাজ্য।

এনসিআরবির তথ্যে ব্যবসায়ীদের আত্মহত্যার কারণও উঠে এসেছে। বলা হচ্ছে, ২০১৮ সালে হাজার ৯৭০ জন আত্মহত্যা করেছেন দেউলিয়া হয়ে কিংবা ঋণের ভারে। সংখ্যা দেশটিতে ওই বছর ব্যবসায়ীসহ মোট আত্মহত্যাকারীর দশমিক শতাংশ। তবে এর আগের বছর দেউলিয়াত্ব কিংবা ঋণজনিত কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ছিল আরো বেশি। ২০১৭ সালে মোট আত্মহত্যাকারীর মধ্যে দুই কারণে আত্মহত্যা করেন হাজার ১৫১ জন। ওই বছর মোট ব্যবসায়ী আত্মহত্যা করেছিলেন হাজার ৭৭৮ জন। ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে প্রতিদিন দেউলিয়া হওয়ার কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে ১৩টি। দেশটিতে প্রতিদিন ব্যবসায়ী আত্মহত্যা করছেন গড়ে অন্তত ২১ জন।

আত্মহত্যার প্রবণতার বিষয়ে মনোরোগ চিকিৎসকরা বলছেন, ব্যবসায় ক্ষতি কিংবা দেউলিয়া হলে একজন ব্যবসায়ী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। অনেক সময়ই তারা তাদের মানসিক আর্থিক অবস্থার বিষয়ে পরিবার কিংবা বন্ধুদের কাছে কিছু বলতে পারেন না। পুরো বিষয়টি নিজের মধ্যে চেপে রেখে উত্তরণের উপায় না পেয়ে আত্মহত্যার দিকে পা বাড়ান।

বিষয়ে মুম্বাইয়ের এক মনোরোগ চিকিৎসক বলেন, অমিতাভ বচ্চনের মতো আইকনিক অভিনেতাও আর্থিক সংকটে পড়েছিলেন। তখন তিনি সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সিনেমায় চরিত্র পেতে যশ চোপড়ার কাছেও ধরনা দেন। এতে লজ্জার কিছু নেই। ফলে যে ব্যবসায়ীরা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তারা তাদের পরিবার প্রয়োজনে অন্য যে কারো কাছে

সাহায্য চাইতে পারেন।

মনোরোগ চিকিৎসক লেখক অঞ্জলি ছাব্রিয়া বলেন, অনেক সময়ই দেখা যায়, কেউ দিনরাত পরিশ্রম করছেন। মোটেও গাফেলতি করছেন না। তার পরও দিনশেষে তার উপার্জন হচ্ছে না। মূলত বাইরের অনেক অনুষঙ্গ রয়েছে, যেগুলো সবসময় ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এসব অনুষঙ্গের কাছে হেরে গিয়ে তারা অসহায় বোধ করেন। অথচ প্রায়ই দেখা যায়, ওইসব বিষয়ে আসলে তাদের করার কিছু ছিল না। ব্যর্থ ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও প্রায়ই ঘটনা ঘটছে।

মুম্বাইয়ের মনোচিকিৎসক হরিশ শেটি বলেন, ব্যবসায়ীদের আত্মহত্যার সংখ্যা কারণ পর্যালোচনা করলেই বোঝা যায়, বহু ক্ষেত্রেই দেউলিয়াত্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে না। ফলে পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। এর অন্যতম কারণ হলো ব্যবসায় ব্যর্থতাকে প্রায়ই লজ্জাকর হিসেবে দেখা হয়। ব্যবসায় ক্ষতির ফলে ব্যবসায়ীকে অবশ্যই নানামুখী অপমানের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। বিষয়টি খুব সহজে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও ভাগ করে নেয়া যায় না, যা ব্যক্তিতে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন