কমিউনিস্ট চীনে প্রান্তজনের প্রথম নারী হিরো

বণিক বার্তা অনলাইন

চীনের প্রথম নারী ট্রাক্টর চালক লিয়াং জান গতকাল মঙ্গলবার মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। অবশ্য ষাটের দশকে ইস্যু করা এক ইউয়ান ব্যাংকনোটটি তাকে অমর করে রাখবে। 

১৯৪৮ সালে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় একমাত্র নারী হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে চীনের একমাত্র নারী ট্রাক্টর চালক হিসেবে স্বীকৃতি পান লিয়াং জান । ওই সময় তিনি রীতিমতো জাতীয় আইকনে পরিণত হন। এর এক দশক বা তার কিছু সময় পর ট্রাক্টরের স্টিয়ারিং ধরে থাকা লিয়াংয়ের একটি হাসিমুখ ছবি খচিত এক ইউয়ানের ব্যাংক নোট বাজারে ছাড়ে তৎকালীন কমিউনিস্ট সরকার।

১৯৩০ সালে চীনের প্রত্যন্ত হিলংজিয়াং প্রদেশের একটি দরিদ্র পরিবারে লিয়াংয়ের জন্ম। বাল্যকালে কৃষি খামারে সাহায্য করার পাশাপাশি গ্রামের স্কুলে যাতায়াত করতেন। ১৯৪৮ সালে এলাকার একটি স্কুল ট্রাক্টর চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি কোর্স চালু করে। লিয়াং সুযোগটি লুফে নেন। ওই কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন ৭০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে লিয়াং ছিলেন একমাত্র নারী। সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি হয়ে গেলেন দেশের প্রথম নারী ট্রাক্টর চালক।

এর এক বছর পরেই ১৯৪৯ সালে মাও সে তুং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন গঠনের ঘোষণা দেন। এরপর থেকেই বদলে যেতে থাকে চীন। বদল আসে সংস্কৃতিতেও। প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন রাজার শাসনামলে চীনের সমাজ ও সংস্কৃতিতে ছিল অভিজাতদের দাপক। সম্মান ও স্বীকৃতি শুধু তাদের জন্যই বরাদ্দ থাকতো। মাও সে তুং এসে এ দৃষ্টিভঙ্গি ঝেঁটিয়ে বিদায় করলেন।  নতুন ভাবমূর্তির জাতীয় হিরোর আগমন ঘটতে থাকলো। শ্রমিক শ্রেণি থেকে কঠোর পরিশ্রমীদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানানোর চল অবশ্য এর আগেই শুরু করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন।

চীনেও শুরু হলো প্রান্তজনের সোনালী যুগ। সমাজতান্ত্রিক চীন গঠনে যারা কঠোর পরিশ্রম ও আত্মোৎসর্গ করতেন তাদের রাষ্ট্র্রীয়ভাবে সম্মান দেয়ার নিয়ম চালু হয়ে যায়। লিয়াং জান যোগ দেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টিতে (সিসিপি)। পরবর্তীতে কৃষি যন্ত্রপাতি সম্পর্কে ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করতে বেইজিংয়ের একটি স্কুলে ভর্তি হন। পড়াশোনা শেষ করে তিনি হিলংজিয়াংয়ে ফিরে আসেন এবং কৃষি যন্ত্রপাতি গবেষণা ইনস্টিটিউটে কাজ করার জন্য নিযুক্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি কৃষি যন্ত্রপাতির হরবিন পৌরসভা ব্যুরোর প্রধান প্রকৌশলীর পদ থেকে অবসর নেন।

লিয়াং জান ছিলেন কমিউনিস্ট চীনের একেবারে শুরুর দিকের এবং অন্যতম খ্যাতনামা মডেল শ্রমিক। তার উদ্যম ও ভাবমূর্তি শুধু শ্রেণির বাধাই অতিক্রম করেনি চীনের শিকলভাঙা নারীদেরও প্রতীকে পরিণত হন তিনি। একটি গরীব পরিবার থেকে দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন সফল প্রকৌশলী ও রাজনীতিক। 

১৯৬২ সালে লিয়াংয়ের ট্র্যাক্টরের স্টিয়ারিং ধরা  হাসিমুখ ছবি সম্বলিত ব্যাংকনোট ছাপা হয়। তার গল্প পাঠ্যপুস্তকেও ছাপা হয়েছিল।

এক সাক্ষাৎকারে লিয়াং বলেন, আমার মতো কেউ অতো ভালো ট্রাক্টর চালাতে পারবে না! জীবনের কাছে আর কোনো চাওয়া পাওয়া নেই আমার। অতীত নিয়ে নেই কোনো খেদও। সূত্র: বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন