সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১ এপ্রিল থেকে ব্যাংকঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে (এক অংক) নামিয়ে আনা হবে। তবে তার আগেই সরকারি আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ কার্যকরের দাবি তুলেছেন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এক বৈঠকে এ দাবি জানান তারা।
গতকাল বেলা সাড়ে ৩টায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দেশের সবক’টি তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ব্যাংক এমডিরা বলেন, ঋণের সুদহার এক অংকে নামাতে হলে আগে আমানতের সুদহার কমাতে হবে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, সরকার আগে ৬ শতাংশ সুদে আমানত দিক, পরে ব্যাংকঋণের সুদহার কমবে। আমানতের সুদহার কমাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির দাবিও জানান তারা।
এ সময় রিটেইল ও এসএমই ঋণকে এক অংকের সুদের বাইরে রাখার দাবি তোলেন ব্যাংক নির্বাহীরা। একই সঙ্গে ঋণ অবলোপন নীতিমালা, সঞ্চিতি সংরক্ষণ, পুনঃতফসিলসহ অন্য কয়েকটি নীতিমালায় পরিবর্তনের দাবিও তোলেন তারা। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংক এমডিদের দাবিগুলো নাকচ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে (এনবিএফআই) রাখা ব্যাংক আমানত (এফডিআর) একসঙ্গে তুলে না নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, এসএমই খাতকে সিঙ্গেল ডিজিটের বাইরে রাখার সুপারিশ করেছিলেন এমডিরা। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সেই সুপারিশ সমর্থন করে না। কারণ দেশের উন্নয়নে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অবদানও কোনোভাবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তাই এ সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ব্যাহত হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা ভালো নয়। সেখান থেকে ব্যাংকগুলোর আমানত একসঙ্গে উঠিয়ে না নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ভুয়া ঋণ বন্ধে জামানত সংরক্ষণের ব্যাপারে কঠোর হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে জামানত সংরক্ষণে শক্তিশালী তথ্যভাণ্ডার তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়।
আলী রেজা ইফতেখার বলেন, সরকার থেকে ব্যাংকঋণের সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করতে আমরা বাধ্য। যদিও ব্যাংকিং খাতে আমানতের সুদ ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ৬ শতাংশ সুদে সরকারি আমানত যত তাড়াতাড়ি দেয়া হবে, তত দ্রুত এটি কার্যকর করা সম্ভব হবে। সভায় আমাদের বিশেষ কোনো দাবি ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকিং খাতের কিছু চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছি। ঋণ অবলোপনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এ মুহূর্তে কোনো কিছু পরিবর্তন করছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ নীতিমালা জারি করা হয়েছে। কিন্তু অনেক বেসরকারি ব্যাংকই ওই নীতিমালা অনুযায়ী ঋণ পুনঃতফসিল করছে না। এ বিষয়ে বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছেন গভর্নর ফজলে কবির। নির্দেশনা অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে আলী রেজা ইফতেখার বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় ব্যাংক ও গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ পুনঃতফসিলের বিষয় উল্লেখ আছে। কেউ যদি ৫ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দেয়ার উপযুক্ত হয়, সে কেন ২ শতাংশ দেবে। কোনো ব্যাংক ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে ঋণ পুনঃতফসিল করবে কিনা, সেটা পুরোপুরি ব্যাংকের ব্যাপার। এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই।