অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রূপন ভূঁইয়ার চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মানি লন্ডারিংয়ের পৃথক দুই মামলায় গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী এ আদেশ দেন। এদিকে দুই ভাইয়ের আশ্রয়দাতা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী শেখ সানি মোস্তফার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের শেয়ারহোল্ডার এনু গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং তার ভাই রূপন ভূঁইয়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
এর আগে গত সোমবার সকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেফতার করে সিআইডি।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এনু ও রূপনের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে এনুর বাসা থেকে নগদ ৮৮ লাখ ৩৫ হাজার ৮০০ টাকা ও ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের ২ কেজি ৯০৮ দশমিক ৯৫ গ্রাম ওজনের ১৯ প্রকার স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়।
অন্যদিকে রূপনের বাসা থেকে নগদ ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৩০০ টাকা ও ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যমানের স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। পরে এনু ও রূপনের বিরুদ্ধে সূত্রাপুর, ওয়ারী ও গেন্ডারিয়া থানায় মানি লন্ডারিং, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন অভিযোগে সাতটি মামলা করা হয়।
সিআইডি কর্মকর্তারা বলছেন, ক্যাসিনোর অন্ধকার জগৎ তাদের কাছে ধরা দেয় অনেকটা আলাদিনের চেরাগ হয়ে। পুরান ঢাকার কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখায় এনু ও রূপনের নামে একের পর এক হিসাব খোলা হয়। সবচেয়ে বেশি হিসাব খোলা হয় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে। তাদের দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎস নেই। তবু পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এনু-রূপনের ১৯টি বাড়ি ও একাধিক প্লট রয়েছে।
এনামুল হক এনু ও রূপন ভূইয়ার ৩৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পাওয়ার পর গত ২৩ অক্টোবর পৃথক দুটি মামলা করে দুদক। এনামুল হক এনুর বিরুদ্ধে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী।
অন্যদিকে অসৎ উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে নামে-বেনামে ১৪ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রূপন ভূইয়ার বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী মামলা করেন।
সোমবার দুই ভাইকে আটকের পর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, র্যাবের ওই অভিযানের পর এনামুল ও রূপন কক্সবাজারে চলে গিয়েছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। সেখান থেকে তারা নৌপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়ে কেরানীগঞ্জে এসে আশ্রয় নেন এবং ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করান। ওই পাসপোর্ট দিয়ে প্রতিবেশী দেশের ভূমি ব্যবহার করে নেপালে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
সে সময় সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছেন, প্রথমে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে তারা ওয়ান টেন নামে একটি জুয়া চালু করেন। পরে নেপালিদের মাধ্যমে সরঞ্জাম এনে সেখানে পুরোদস্তুর ক্যাসিনো চালু করেন।