শেবাচিমে অর্ধেকের বেশি চিকিৎসক পদ শূন্য

একই অবস্থা সদর হাসপাতালেও

বণিক বার্তা প্রতিনিধি বরিশাল

তীব্র জনবল সংকট নিয়ে চলছে বরিশালের দুটি সরকারি হাসপাতালের কার্যক্রম। জেলার সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) অর্ধেকের বেশি চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। একই অবস্থা সদর জেনারেল হাসপাতালেও। এতে সেবা নিতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগী স্বজনরা। একই সঙ্গে জনবল সংকটের কারণে বিপুল পরিমাণ রোগীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, কয়েক দিনের তীব্র ঠাণ্ডায় হাসপাতাল দুটিতে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। তবে চিকিৎসক সংকটে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। আবার অধিক সংখ্যক রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরাও।

শেবাচিম হাসপাতাল ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট। অন্যদিকে সদর জেনারেল হাসপাতাল ১০০ শয্যাবিশিষ্ট। জেলার ১০ উপজেলার অধিকাংশ রোগীই দুটি হাসপাতালে সেবা নেন। দুটি হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। কিন্তু চিকিৎসক সংকট থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগীদের।

শেবাচিম হাসপাতালের ২২৪টি পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ৯৬ জন চিকিৎসক। এর মধ্যে বার্ন প্লাস্টিক সার্জারি, কার্ডিওলজিসহ ৩৩টি বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদ দীর্ঘদিন থেকে শূন্য। রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রারসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে একাডেমিক কার্যক্রমও। শুধু তা- নয়, চতুর্থ শ্রেণীর ৪২৬টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ২৯১ জন। এতে হাসপাতালটির একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতালে ৩৩টি পদের অনুকূলে কর্মরত আছেন ২৩ জন চিকিৎসক। চতুর্থ শ্রেণীর ৪২টি পদের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ১৮ জন। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে নেই শিশুবিশেষজ্ঞ।

শেবাচিম হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন অন্তত সাত হাজার রোগী। এর মধ্যে ভর্তি রয়েছেন হাজার ৪৩২ জন। গতকাল শেবাচিমে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন হাজার ২০০ জন এবং নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন আরো ৩২৯ জন।

সদর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ৫০০ রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন। গত এক সপ্তাহে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন অন্তত সাড়ে তিন হাজার রোগী। এখনো চার শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, সম্প্রতি হাসপাতালগুলোয় ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু বৃদ্ধ। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালগুলোর শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় মেঝে বারান্দায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে গত সোমবার শেবাচিমে ভর্তি হন জেলার হিজলা উপজেলার মো. আলমাছ আলী (৬০) তিনি বলেন, ভর্তি হওয়ার পর একবার শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা এসে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। তারপর বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক আসেননি। এখনকার সব রোগীর ভরসা ইন্টার্ন চিকিৎসক নার্স।

শেবাচিমের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ধারণক্ষমতার তিন-চার গুণ বেশি রোগী নিয়ে আমাদের প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। মেডিকেল কলেজের অধীন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, কিউরেটর পদে ২০৫ জনের স্থলে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১১৫ জন। এছাড়া দ্বিতীয় তৃতীয় শ্রেণীর ৫৯টি পদে কর্মরত ৩৮ জন। চতুর্থ শ্রেণীর ১৪১টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ৮১ জন। গুরুত্বপূর্ণ পদে চিকিৎসক না থাকায় কাঙ্ক্ষিত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তার পরও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ১০০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসকের ১০টি পদ শূন্য রয়েছে। চতুর্থ শ্রেণীর ৪২টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৮ জন। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালটিতে শিশুবিশেষজ্ঞ না থাকায় চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। এছাড়া চক্ষু, কার্ডিওলজি, অর্থপেডিক্স বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় এসব সেবাও বন্ধ রয়েছে।

শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সৈয়দ মাকসুমুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, কলেজে প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় পাঠদান যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যেও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জনবল সংকটের বিষয়ে এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নতুন জনবল নিয়োগ দেয়া হলে সংকট কেটে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন