একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধ

সাবেক প্রতিমন্ত্রী কায়সারের মৃত্যুদণ্ড আপিলেও বহাল

বণিক বার্তা অনলাইন

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ অঞ্চলে হত্যা, গণহত্যা ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী একাধিক অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বিচারপতির বেঞ্চ কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন-বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান।

জাতীয় পার্টির সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আনীত ১৪ অভিযোগের সাতটিতে মৃত্যুদণ্ড, পাঁচটিতে যাবজ্জীবন, একটিতে ১০ বছর ও আরেকটি পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাত অভিযোগের মধ্যে তিনটিতে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন, বাকি চারটিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন।

প্রধান বিচারপতি রায় ঘোষণাকালে বলেন, কায়সারের আপিল আংশিক মঞ্জুর করা হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের মতামতের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মুরাদ রেজা ও মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকিরসহ অন্যান্য ডেপুটি ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলরাও উপস্থিত ছিলেন। আর কায়সারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী এস এম মো. শাহজাহান, অ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির ও ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমিন। তবে সৈয়দ কায়সারের পরিবারের কোন সদস্য আজ উপস্থিত ছিলেন না বলে তার আইনজীবীরা নিশ্চিত করেছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসা এটি নবম মামলা। আজ রায়ের মাধ্যমে এর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলো। একই সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মধ্যে প্রথমবারের মতো অন্য অপরাধের পাশাপাশি ধর্ষণের দায়ে ফাঁসির দণ্ড পান কায়সার। দুই নারীকে ধর্ষণের অপরাধ দুটি প্রমাণিত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করে অপরাধ সংঘটিত করেন হবিগঞ্জ মহকুমার রাজাকার কমান্ডার ও শান্তি কমিটির সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার। ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর তাকে সর্বোচ্চ সাজাসহ ২২ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে একাত্তরে ১৫২ জনকে হত্যা-গণহত্যা, দুই নারীকে ধর্ষণ, পাঁচজনকে আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায় এবং দুই শতাধিক বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও ষড়যন্ত্রের ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এসব অভিযোগের মধ্যে ১৪টিই প্রমাণিত হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন