পাঠ্যপুস্তকের
বিষয়গুলোকে শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয়,
আনন্দদায়ক ও সহজবোধ্য করে
উপস্থাপন করার লক্ষ্যে ডিজিটাল কন্টেন্ট চালু করেছে সরকার। কয়েক বছর আগে চালু করা
হয়েছিল ই-বুক সেবা। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি-বিষয়ক বইটিও বাধ্যতামূলক পাঠদান করা হচ্ছে। যদিও মাল্টিমিডিয়াভিত্তিক এসব
সুবিধা ও হাতে-কলমে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা
যাচ্ছে না কম্পিউটারের অভাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৬০ শতাংশের বেশি বেসরকারি মাধ্যমিক
বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব নেই।
সম্প্রতি ‘মাস্টার প্ল্যান ফর আইসিটি ইন এডুকেশন ইন বাংলাদেশ (২০১২-২১)-প্রগ্রেসিভ রিভিউ রিপোর্ট ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। ওই
প্রতিবেদনে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব সুবিধার চিত্র তুলে ধরা
হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত
বিদ্যালয় ছিল ১৫ হাজার ৭৫৪টি। এর মধ্যে কম্পিউটার ল্যাব ছিল মাত্র ৬ হাজার ১০৬টির।
এ হিসাবে ৬০ শতাংশের বেশি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এখনো কম্পিউটার ল্যাব
স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বণিক বার্তাকে বলেন, কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে
বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে পাঠদান
দিতে কম্পিউটার সুবিধাও নিশ্চিত করা হয়েছে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে। সব প্রতিষ্ঠানে এখনো
ল্যাব করে দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কম্পিউটার ল্যাব
স্থাপনের কাজ চলমান।
তিনি বলেন, একদিনে তো আর পুরো চিত্র বদলাবে না। ক্রমান্বয়ে সব
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেই কম্পিউটার ল্যাব সুবিধার আওতায় আনা হবে।
শিক্ষা
মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী,
৪০৪টি সরকারি মাধ্যমিক
বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে ৪৬২টি। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩২টি সরকারি
প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে ৪৯টি ও ১ হাজার ২১৯টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে
ল্যাব রয়েছে ১ হাজার ৪৭টি। আর মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সরকারি
তিনটিতে দুটি কম্পিউটার ল্যাব ও বেসরকারি ৯ হাজার ২৫৬টি মাদ্রাসায় ল্যাব রয়েছে ১
হাজার ৬৩০টি। আর কলেজ পর্যায়ে সরকারি ৬০১টিতে ৬২৭টি ল্যাব ও বেসরকারি ২ হাজার
৬০৯টি কলেজে ল্যাব রয়েছে ১ হাজার ৯৭৭টি। অন্যদিকে টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের মধ্যে
সরকারি ২১৫টিতে ৪১৮টি ল্যাব ও বেসরকারি ১ হাজার ৭৬০টিতে ১ হাজার ৮৫৬টি কম্পিউটার
ল্যাব রয়েছে।
শিক্ষাবিদরা
বলছেন, পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকায়
তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা প্রসারের মূল লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে জাতীয়
শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের হাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষার একটি
বই তুলে দেয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে আরো দুটি বিষয় লাগবে। একটি হলো হাতে-কলমে শেখার জন্য কম্পিউটার ল্যাব,
অন্যটি প্রশিক্ষিত শিক্ষক।
যদিও বেশির ভাগ বিদ্যালয়েই এ দুটি বিষয়ই অনুপস্থিত। তাই বর্তমানে শিক্ষার্থীরা
নামেই একটি বই পড়ছে, প্রকৃত অর্থে তথ্যপ্রযুক্তির কতটুকু শিখছে তা
প্রশ্নবিদ্ধ। তাই একটি বিষয় শুধু ঘোষণা করলেই হবে না। এর প্রয়োজনীয়তার নিরিখে
অবকাঠামো নির্মাণ ও পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
এদিকে কম্পিউটার
ল্যাবের পাশাপাশি এ বিষয়ের শিক্ষক সংকটও প্রকট। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান
ব্যুরোর (ব্যানবেইস)
তথ্যমতে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান ছিল ৩৪ হাজার
৯৮১টি। এর মধ্যে ১০ হাজার ৯৯৩টিতে কম্পিউটার বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। সে হিসাবে এ
দুই স্তরের প্রায় ৩২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানেই তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের পাঠদানের কোনো
বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নেই। কম্পিউটার শিক্ষক না থাকা বেশি কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ায় এ বিষয়ে
পাঠদান হচ্ছে ঠিকই, তবে শুধুই রুটিনমাফিক। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই
বিজ্ঞান কিংবা গণিতের শিক্ষক দিয়ে কোনোমতে চলছে বিষয়টির পাঠদান। ফলে মানসম্মত
তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকছে শিক্ষার্থীরা।