তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় ময়মনসিংহে
ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। বিশেষ করে শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে,
ঠাণ্ডাজনিত রোগে এক সপ্তাহে এ হাসপাতালে ১৫
শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রোগী বাড়ায় হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট।
স্থানীয়রা জানায়, এবার
ময়মনসিংহে শীত জেঁকে বসেছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এ রকম শীত অনুভূত হয়নি। ঘন কুয়াশা
ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে শিশু ও বয়স্করা ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জেলা ও
উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তির জন্য শয্যা খালি পাওয়া যাচ্ছে না।
তীব্র শীতের কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে গেছে।
মমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালে
রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। শয্যা সংকট দেখা দেয়ায় মেঝে ও বারান্দায় রেখে রোগীদের চিকিৎসা
দেয়া হচ্ছে। রোগীর চাপে কথা বলার ফুরসত মিলছে না চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মীদের।
সবচেয়ে বেশি ভিড় শিশু ওয়ার্ডে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, এ
হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে শয্যা আছে ৭২টি। এর বিপরীতে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছে ৫২০
জন শিশু। গতকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এ হাসপাতালে নবজাতকসহ ভর্তি হয়েছে দুই শতাধিক
শিশু। হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দা কোথাও জায়গা খালি নেই। ফলে অন্য ওয়ার্ডের সামনে
জায়গা নিতে হচ্ছে নতুন ভর্তি হওয়া রোগীদের।
গত রোববার দুপুরে মমেক হাসপাতালের
শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় সদর উপজেলার পারনগঞ্জ এলাকার শহিদুল
ইসলামের সাত মাস বয়সী ছেলে রায়হানের। সে এক সপ্তাহ ধরে জ্বর, কাশি
ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। স্বজনদের বরাত দিয়ে চিকিৎসকরা জানান, পল্লী
চিকিৎসকদের পরামর্শে রায়হানকে ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল। কিন্তু এতে তার অবস্থার উন্নতি
হয়নি। রোববার সকালে তাকে মমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায়
দুপুরে সে মারা যায়।
মমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের তিন
নম্বর ইউনিটে চিকিৎসাধীন শিশু সুমনের মা রমিজা বেগম জানান, শীতের
কারণে দুদিন ধরে সুমন পাতলা পায়খানা করছে। হাসপাতাল থেকে স্যালাইনসহ ওষুধ বিনা মূল্যে
পেয়েছেন। এখন তার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো,
তবে পুরোপুরি সুস্থ নয়।
হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসাধীন এক
শিশুর অভিভাবক আবুল হোসেন বলেন,
সিট পাইনি বলে এখানে আছি। প্রচণ্ড ভিড়। তার পরও
চিকিৎসকরা যথাসাধ্য সাহায্য করছেন।
মমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সহকারী
অধ্যাপক ডা. বিশ্বজিৎ চৌধুরী বণিক বার্তাকে জানান, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে এক
সপ্তাহ ধরে নবজাতকসহ শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। তীব্র শীতে শ্বাসকষ্ট ও
ডায়রিয়ায় প্রতিদিনই শিশু মারা যাচ্ছে। ঠাণ্ডায় বেশি অসুস্থ হওয়ার পর অভিভাবকরা
সন্তানদের হাসপাতালে নিয়ে আসছেন। সে কারণে চেষ্টা করেও তাদের বাঁচানো যাচ্ছে না।
শীতজনিত রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে হলে গরম কাপড় শরীরে জড়িয়ে রাখতে হবে এবং
অসুস্থ হলে দ্রুত কাছের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। শিশু ওয়ার্ডের পাশাপাশি মেডিসিন
ওয়ার্ডেও ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এমনকি হূদরোগ ওয়ার্ডেও রোগী ভর্তির
জায়গা নেই।
সহকারী অধ্যাপক ডা. নজরুল
ইসলাম জানান, ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা নিয়েই বেশির ভাগ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আমাদের
তিনটি ইউনিটেই ধারণক্ষমতার অনেক বেশি রোগী ভর্তি আছে।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী
রেজিস্ট্রার ডা. এরশাদ উদ্দিন জানান,
ঠাণ্ডার কারণে শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যা নিয়ে
রোগীরা ভর্তি হচ্ছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। আমাদের মেডিসিন বিভাগে দ্বিগুণের
বেশি রোগী ভর্তি আছে।
মমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. লক্ষ্মী
নারায়ণ মজুমদার বণিক বার্তাকে জানান,
শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঠাণ্ডাজনিত
রোগের প্রকোপ বেড়েছে। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসক ও নার্সদের চিকিৎসাসেবা দিতে
হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা যথাসাধ্য চিকিৎসা দিচ্ছি।