রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নির্মাণ

মেয়াদ বাড়লেও কাজ সমাপ্তি নিয়ে সংশয়

বণিক বার্তা প্রতিনিধি রংপুর

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় রংপুর আধুনিক কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের নির্মাণকাজ। তবে নির্ধারিত সময়ে টার্মিনালের মাত্র ৪৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ কারণে ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে আরো আট মাস। তবে বর্ধিত মেয়াদেও নির্মাণকাজের সমাপ্তি নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন ভবন নির্মাণ ও টার্মিনালের জমি থেকে পুরনো ভবন অপসারণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, রংপুর নগরীর বদরগঞ্জ রোডে পুরাতন বাস টার্মিনাল ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৮১ সালে। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের চার শতাধিক বাস এ টার্মিনাল ব্যবহার করে। প্রতিদিন এ টার্মিনালে প্রায় দুই হাজার যাত্রী ওঠানামা করে। তবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় প্রায়ই বিশ্রামাগারসহ টার্মিনাল ভবনের বিভিন্ন কক্ষের পলেস্তারা খসে পড়ে যাত্রীদের আহত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে পুরাতন ভবন অপসারণ ও পুকুর ভরাট করে প্রায় ৬ দশমিক ৫৭ একর জমির ওপর নতুন বাস টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় রংপুর সিটি করপোরেশন। এ কাজে ব্যয় ধরা হয় ২৫ কোটি ৮১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৩০ টাকা। এ কাজের ঠিকাদারির দায়িত্ব দেয়া হয় ঢাকার পিএমপিএল-কেএসএ নামের প্রতিষ্ঠানকে।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানায়, টার্মিনালের মূল ভবনটি প্রায় ৩৫ শতক জমির ওপর নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয় তলাবিশিষ্ট ভবনটির মোট আয়তন হবে ২৯ হাজার ৬৪৫ বর্গফুট। ভবনের প্রথম তলায় ১৪টি টিকিট কাউন্টার, তিনটি এটিএম বুথ, নামাজঘর, ডে-কেয়ার সেন্টার, খাবারের দোকান, ওষুধের দোকান, দুটি গণশৌচাগার, লাগেজ রাখা ও যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা থাকবে। আর দ্বিতীয় তলায় থাকবে রেস্টুরেন্ট, শিশুদের খেলার রুম, কন্ট্রোল রুম, ভিআইপি লাউঞ্জ ও ভিআইপি রুমসহ বিভিন্ন সুবিধা। এছাড়া টার্মিনালে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৭১ বর্গফুট আয়তনের গাড়ি পার্কিং, আধুনিক ওয়ার্কশপ এবং চালক ও পরিবহন কর্মীদের বিশ্রামাগার থাকবে।

২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এ টার্মিনাল নির্মাণকাজের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ১৫ মাস। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ। ঠিকাদারির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাজের মেয়াদ আরো আট মাস বাড়ানো হয়েছে। তবে যে গতিতে কাজ চলছে, তাতে বর্ধিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করা নিয়ে সংশয় আছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা একরাম হোসেন বলেন, টার্মিনাল ভবন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত জমিতে পুরাতন টার্মিনাল ভবন ও রসিকের মালিকানাধীন বেশকিছু স্থাপনা ছিল। সেগুলো অপসারণ করতে সময় লেগেছে। এছাড়া একটি বড় পুকুরে মাটি ভরাট করতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, পুকুর ভরাটের সময় লক্ষ রাখা হয়েছে যেন ভবিষ্যতে মাটি দেবে না যায়। তাছাড়া এখনো ওই জমির তিনটি ভবন অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। আশা করি, আগামী জুনের মধ্যে টার্মিনাল ভবনের প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ সম্পন্ন করা যাবে।

রংপুর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন বলেন, নির্মাণাধীন বাস টার্মিনালটি চালু হলে এটি হবে সুযোগ-সুবিধা ও আধুনিকতার বিচারে উত্তরবঙ্গের প্রথম। চারতলাবিশিষ্ট টার্মিনাল ভবনটির প্রথম পর্যায়ে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে। ভবনটিতে বৈদ্যুতিক সিঁড়িও স্থাপন করা হবে।

সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, বর্ধিত সময়ের মধ্যে টার্মিনাল নির্মাণকাজ শেষ করতে বিদ্যমান তিনটি ভবন দ্রুত অপসারণ করা হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যাতে শিডিউল মোতাবেক কাজের মান ঠিক রাখে, সেজন্য রসিকের প্রকৌশলীদের পাশাপাশি প্রকল্পে অর্থায়নকারী জাইকার লোকজনও নিয়মিত মনিটরিং করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন