আগের দিন নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন
কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে। নতুন কাউকে সুযোগ দিতেই ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন
মর্তুজার এ সিদ্ধান্ত। এদিকে নানা ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে তার অবসর নিয়েও। কিন্তু
ক্রিকেটের প্রতি মাশরাফির প্যাশনটা কেমন একদিন পরই তার প্রমাণ দিলেন তিনি। হাতে
১৪টা সেলাই নিয়ে নামলেন বিপিএলে নিজ দলের ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে। দলকে
বাঁচাতে পারেননি কিন্তু প্রশংসিত হচ্ছে মাশরাফির হার না মানা এ মনোভাব ও ক্রিকেটের
প্রতি এমন নিবেদন। ম্যাচ শেষে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তো বলেই দিলেন, তিনি
হলে খেলার কথা ভাবতেই পারতেন না। কিন্তু মাশরাফি যে অন্য ধাতুতে গড়া। ম্যাচ শেষে
তিনি কথা বলেন এ নিয়ে। পাশাপাশি অবসর,
মাঠ থেকে বিদায়, অধিনায়কত্বসহ নানা বিষয় নিয়ে নিজের মত
দিয়েছেন ঢাকা প্লাটুন অধিনায়ক।
হাতে ১৪ সেলাই নিয়ে খেলার সিদ্ধান্ত ও
এক হাতে নেয়া ক্যাচ সম্পর্কে মাশরাফি বলেন,
‘ক্যাচটা চলে আসছে ধরেছি। অপশন ছিল না দুই হাত
দেয়ার। বল দ্রুত এলে কি হতো বলতে পারছি না। কারণ খেলতে থাকলে হাত অনেক সময় চলে
যায়। বলটা একটু আস্তে ছিল, তাই হয়তো দেখার জন্য একটু সময় পেয়েছি।’
ক্রিকেট তো কেবল একটি খেলাই। তাহলে
এভাবে ঝুঁকি নিয়ে নামা কেন?
ক্রিকেট কি তবে জীবনের চেয়ে বড়? মাশরাফির
উত্তর, ‘জীবনের চেয়ে ক্রিকেট অবশ্য বেশি না। তবে ক্রিকেট জীবনের সবচেয়ে বড় একটা
অংশ।’
পরে মাশরাফির এ স্পিরিটের প্রশংসা করেছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স অধিনায়ক
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও, ‘হ্যাটস অফ টু মাশরাফি ভাই। আজকে ১৪টা সেলাই নিয়ে খেলেছেন। এটা অসাধারণ।
খেলেছেন, ভালো বোলিং করেছেন। ক্যাচটাও
(গেইলের ক্যাচ) খুব ভালো ছিল।’
এ সময় স্বভাবতই কথা হয়েছে কেন্দ্রীয়
চুক্তি থেকে সরে যাওয়া নিয়ে। এ প্রসঙ্গে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কথাই
প্রতিধ্বনিত হলো মাশরাফির কণ্ঠে,
‘পাপন ভাই তো বলেছেন, নতুন
কাউকে সুযোগ দেয়ার জন্য। তিন বছর পর বিশ্বকাপ। যে চুক্তিতে আসবে তার মনে হবে, আমি
বোর্ডের সেন্ট্রাল কন্ট্রাক্টে আছি। দায়িত্বও বাড়বে। তার খেলার ইচ্ছা বাড়বে। আমার
মনে হয়, আমার থেকে নতুন একজন যাওয়াই ভালো।’
কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরে গেলেন, অধিনায়কত্ব
নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা?
মাশরাফির উত্তর, ‘নির্বাচকরা যা
ভাববেন তাই করবেন। বিসিবি থেকে যদি বলে এখনই ছেড়ে দিতে, তাহলে
ছেড়ে দেব। কোনো সমস্যা নেই। আর আমার নিজের সিদ্ধান্ত আমার কাছেই থাকুক।’
তবে ক্রিকেটের প্রতি এখনো ভালোবাসা
অটুট মাশরাফির। তাই জাতীয় দলে না হলেও যেকোনো পর্যায়ে খেলে যেতে চান তিনি, ‘আমি
খেলতে চাই। কারো জোর করার ওপর তো আমি রিটায়ার করব না। বাংলাদেশের অনেক খেলোয়াড় আছে, যারা
মাঠ থেকে রিটায়ার করেনি। আমি মনে করি,
আমার থেকে বড় খেলোয়াড়রা আছেন। একটা সময় মনে হতো
যে, মাঠ
থেকে করব কি করব না। এখন মনে হয় প্রয়োজন নেই।’
এ সময় মাশরাফি সাধুবাদ
জানিয়েছেন টেস্টের ম্যাচ ফি বাড়ানোর বিষয়টিকেও—‘আমি মনে করি এটা খুব ভালো সিদ্ধান্ত। তার চেয়ে ভালো
আলাদাটা করাটা। আমি মনে করি এটা খুব ভালো উদ্যোগ। কারণ যারা তিন ফরম্যাটে খেলবে, তাদের বেতন অবশ্যই এক বা
দুই ফরম্যাট যারা খেলে, তাদের চেয়ে বেশি হওয়া উচিত। এমনকি যারা টেস্ট
ক্রিকেটকে বেশি প্রাধান্য দেয়, তাদের বেতন বেশি করা উচিত। তাহলে হয়তো আমাদের টেস্ট
ক্রিকেটের চিত্র ভিন্ন হতে পারে।’