আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করছেন বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের পুঁজিবাজারে চলমান সূচক শেয়ারের দরপতন আরো দীর্ঘায়িত হতে পারে, এমন আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে একদিন উত্থানের পরই গতকাল দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল শতাংশের বেশি কমেছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক সিএসসিএক্স কমেছে দশমিক শতাংশ। পাশাপাশি দৈনিক গড় লেনদেন ডিএসইতে কিছুটা বাড়লেও সিএসইতে কমেছে। গতকাল একদিনেই ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে হাজার ১৮৪ কোটি টাকা।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামষ্টিক অর্থনীতির বেশকিছু সূচকে কিছুটা নেতিবাচক প্রবণতার কারণে পুঁজিবাজারেও এর প্রভাব পড়তে পারে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর ওপর যোগ হয়েছে গ্রামীণফোনের সঙ্গে বিটিআরসির দ্বন্দ্বের বিষয়টি। এক অংকের সুদহার বাস্তবায়ন হলে ব্যাংকগুলোর মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার বিষয়ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। সর্বোপরি বাজারে সুশাসনের অভাবের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তো রয়েছেই। এসব কারণেই বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় তাদের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে তারা ভালো-মন্দ কোনো কোম্পানির শেয়ারই বাদ দিচ্ছেন না।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল লেনদেনের শুরু থেকেই শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়তে থাকে, যা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ফলে গতকাল একদিনেই ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৮৯ পয়েন্ট কমে ৫৬ মাস আগের অবস্থান হাজার ১২৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচকের পাশাপাশি শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস দিনের ব্যবধানে ২০ পয়েন্ট কমে গতকাল ৯৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ব্লুচিপ সূচক ডিএস-৩০ এদিন প্রায় ২৮ পয়েন্ট কমে দিন শেষে হাজার ৩৮৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসইর চীনা সূচক সিডিএসইটি ১৫ পয়েন্ট কমে গতকাল দিন শেষে ৮৩৩ পয়েন্টে এসে দাঁড়িয়েছে।

গতকাল ডিএসইতে সূচক কমলেও শেয়ার বিক্রির চাপে দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে। গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে ২৮৬ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ২৬০ কোটি টাকায়। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৫৪টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ২১টির, কমেছে ৩১৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২০টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।

খাতভিত্তিক লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, ডিএসইর লেনদেনের মোট ১৬ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে প্রকৌশল খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ দখলে নিয়েছে বস্ত্র খাত। ডিএসইর লেনদেনের ১০ শতাংশ করে দখলে নিয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল ওষুধ রসায়ন খাত। আর শতাংশ দখলে নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে সিমেন্ট, সাধারণ বীমা ব্যাংক খাত।

স্টক এক্সচেঞ্জটিতে গতকাল লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, এডিএন টেলিকম, রিং শাইন টেক্সটাইল, কেপিসিএল, বিকন ফার্মা, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, নর্দান জুট, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস, গ্রামীণফোন এসএস স্টিল।

ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকার কোম্পানিগুলো হলো আইএসএন লিমিটেড, ইবিএল এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড, রেনাটা, নাভানা সিএনজি, বিবিএস, বিকন ফার্মা, ফিনিক্স ফিন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফিন্যান্স মিউচুয়াল ফান্ড, এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড গ্রীন ডেল্টা।

অন্যদিকে গতকাল দর কমার দিক দিয়ে শীর্ষ কোম্পানিগুলো হচ্ছে এসএস স্টিল, এমারাল্ড অয়েল, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, তুংহাই নিটিং, রিং শাইন টেক্সটাইল, এসইএমএল এফবিএসএল গ্রোথ ফান্ড, এফএএস ফিন্যান্স, বিচ হ্যাচারি, প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড।

দেশের আরেক শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক সিএসসিএক্স দিনের ব্যবধানে প্রায় ১৪৮ পয়েন্ট কমে হাজার ৬১৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের কার্যদিবসে যা ছিল হাজার ৭৬১ পয়েন্টে। সিএসইতে গতকাল লেনদেন হওয়া ২৫২টি কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২৮টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২০৬টি আর অপরিবর্তিত ছিল ১৮টির বাজারদর।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন