মরুর বুকে শীতের দেশের স্যামন চাষ

মরুর বুকে বুর্জ খলিফা অথবা সমুদ্রের তীরে বুর্জ আল-আরব। এমন আকাশচুম্বী অট্টালিকা আর উচ্চাভিলাষী সব কর্মপরিকল্পনা অভিজাত জীবনযাপনের জন্য খ্যাতি রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের। অসম্ভবকে সম্ভব করার মানসিকতায় পরিচিতি পেয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। তেমনই প্রায় অসম্ভব ধরনের কাজ করে যাচ্ছে দুবাইয়ের ফিশ ফার্ম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আটলান্টিকের শীতের আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠা অভিজাত মাছ হিসেবে পরিচিত স্যামন এনে চাষ করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

ফিশ ফার্মের প্রধান নির্বাহী বদর আল মুবারকও মনে করেন, তারা মরুর দেশে স্যামন চাষ করে রীতিমতো বিস্ময় সৃষ্টি করতে পেরেছেন। কেউ কল্পনাও করতে পারেনি মরুভূমির দেশে স্যামন চাষ করা যাবে। সেটিই তারা করে দেখিয়েছেন।

স্যামন মূলত স্কটল্যান্ড, নরওয়ে, আলাস্কা আইসল্যান্ডের মতো শীতপ্রধান দেশগুলোর অভিজাত মাছ। বিশ্বব্যাপী দামি মাছ হিসেবেও কদর রয়েছে এটির। স্যামন মাছ মিঠা পানিতে জন্মায়। তবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন হয় লোনা পানির। আবার ডিম পাড়ার আগে স্যামন মাছ মিঠা পানিতেই ছোটে। গবেষণা বলছে, থেকে সর্বোচ্চ ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত মাছটির বেড়ে ওঠার জন্য আদর্শ তাপমাত্রা। ১৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং বড় হতে পারে না। আর ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করলে মাছটি মারা যায়। তবে সাম্প্রতিক আরেক গবেষণা বলছে, এটির তাপমাত্রাসহিষ্ণু ক্ষমতা এখন ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। এর বেশি হলে এটি (স্যামন) মারা যাবে।

এমন পরিবেশে বেড়ে ওঠা স্যামনকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় দুবাইয়ে চাষ করা রীতিমতো কঠিন। তবে এর জন্য সব ধরনের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে ফিশ ফার্ম। চারটি বড় চৌবাচ্চায় পানির প্রবাহ, তাপমাত্রা ওঠানামা করানোর মতো প্রযুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আছে সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, তীব্র ভারি স্রোতেরও ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে মরুর দেশে ঘরোয়া পরিবেশে বেশ রাজকীয় হালে চাষ হচ্ছে স্যামন।

এমন পরিবেশ করাটা কতটা কঠিন ছিল ফিশ ফার্মের জন্য। মুবারক বলেন, স্যামন চাষের জন্য সবচেয়ে বড় বেগ পোহাতে হয়েছে এটির (স্যামন) পরিবেশ তৈরি করতে। কিন্তু পানির মধ্যে অন্ধকার পরিবেশ তৈরির ধারণা ছিল আমাদের, যা গভীর সমুদ্রের মতো পরিবেশ তৈরি করে। এছাড়া কৃত্রিমভাবে লবণাক্ততা আটলান্টিকের তাপমাত্রাও তৈরি করা হয়।


দুবাইয়ের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেবেল আলী এলাকায় এমন পরিবেশ তৈরি করা হয়। এরপর সুদূর স্কটল্যান্ডের একটি হ্যাচারি থেকে আনা হয় ৪০ হাজার স্যামন পোনা। এছাড়া আইসল্যান্ড থেকে আনা হয় হাজারের বেশি স্যামনের ডিম। যেগুলো থেকে পোনা উৎপাদন করে উন্মুক্ত চৌবাচ্চায় চাষ করা হয়।

সমুদ্রের পানি দিয়ে ভরাট এসব চৌবাচ্চা থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার কেজি স্যামন উৎপাদন করে ফিশ ফার্ম। ২০১৩ সালে যুবরাজ শেখ হামদান বিন রাশহিদ আল মাকতুমের পৃষ্ঠপোষকতায় এটি প্রতিষ্ঠা হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল স্যামন জাপানি অ্যাম্বার জ্যাক মাছ চাষ।

উৎপাদিত এসব স্যামন দুবাইসহ অভিবাসী অধ্যুষিত দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে ফিশ ফার্ম। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মংস্য চাহিদার ৯২ শতাংশ পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। তাহলে ফিশ ফার্মের আসল উদ্দেশ্য কী?

মুবারক বলেন, ফিশ ফার্মের আসল উদ্দেশ্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দিয়ে দেশীয় চাহিদা পূরণ করা। এতে একদিকে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা যাবে, অন্যদিকে বন্যা জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এটি সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশটির মত্স্য চাহিদার ৫০ শতাংশ জোগান দিতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।

 

আল আমিন হুসাইন, সূত্র: এএফপি দ্য ফিশ সাইট

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন